হাশেম আলী খান

Barisalpedia থেকে

অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী ও বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য। পিতা: মৌলভী আরমান আলী খান। জন্ম: ২ ফেব্রুয়ারী ১৮৮৮ সাল। মৃত্যু: ১৬ এপ্রিল ১৯৬২ সাল। গ্রাম: সেহাঙ্গল, থানা: স্বরূপকাঠী, জেলা: পিরোজপুর।

শিক্ষাজীবন

হাশেম আলী খান কলিকাতা মাদ্রাসা হতে ১৯০৮ সালে এফ. এ. এবং ১৯১০ সালে বি.এ. পাশ করেন। ১৯১৩ সালে রিপন কলেজ হতে বি.এল ডিগ্রী লাভ করে তিনি আলীপুর কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন।

কর্মজীবন

১৯১৪ সালে তিনি কলকাতা ত্যাগ করে বরিশাল বারে ওকালতি শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যে বরিশাল বারের অন্যতম সেরা ফৌজদারী উকিল হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। তিনি বরিশাল বারে যখন যোগ দেন তখন মাত্র তিন জন মুসলিম উকিল ছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন

হাশেম আলী খান ১৯১৫ সালে এ. কে. ফজলুল হকের নির্দেশে বরিশালে প্রজা আন্দোলন শুরু করেন। তিনি বাকেরগঞ্জ জেলা প্রজা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯২০ সালে তিনি খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি বরিশাল জেলা খেলাফত কমিটির সম্পাদক এবং খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীন আহমেদ সভাপতি ছিলেন। ১৯২১ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন এবং মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের সভাপতিত্বে গঠিত জেলা কংগ্রেসের বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন। ১৯২১ সালে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে তাঁর সভাপতিত্বে অগৈলঝারা গ্রামে প্রজা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২১ সালে ২রা সেপ্টেম্বর মহাত্মা গান্ধী ও মাওলানা মোহাম্মদ আলী বরিশাল আগমন করেন এবং বি. এম. স্কুলের মাঠে জনসভায় বক্তৃতা দেন। তাদের হিন্দি ও উর্দু বক্তৃতা বাংলা অনুবাদ করেন হাশেম আলী খান। কুলকাঠি হত্যার প্রতিবাদে ১৯২৭ সালের ৮ হতে ১৩ই মে বরিশালে মুসলিম কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। হাশেম আলী খান কনফারেন্সের অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক এবং খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীন সভাপতি ছিলেন। ১৯২৮ সালের ২৫ শে জুলাই বরিশালে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে যে শান্তি চুক্তি হয় হাশেম আলী খান সে চুক্তির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। সরকার তাঁর সমাজ সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ১৯৩৫ সালের ৩রা জুন খান বাহাদুর উপাধি প্রদান করেন। ১৯৩০ সালে বরগুনার গৌরিচন্না গ্রামে অনুষ্ঠিত কৃষক সম্মেলনে হাশেম আলী খান সভাপতিত্ব করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি বাকেরগঞ্জ জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৩৬-১৯৪১ সাল পর্যন্ত জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ সময় তিনি জেলার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করে প্রশংসা লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি কৃষক প্রজা পার্টির প্রার্থী হিসেবে বরিশাল উত্তর কেন্দ্র হতে মুসলিম লীগ প্রার্থী উলানিয়ার জমিদার আরিফ হোসেন চৌধুরী (ধনু মিয়াকে) পরাজিত করে বঙ্গীয় আইন সভার এম.এল.এ. নির্বাচিত হন। মুসলিম লীগের সাথে এ. কে. ফজলুল হক কোয়ালিশন গঠন করলে হাশেম আলী খান বিরশাল জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি নিযুক্ত হন।

আইন সভার সদস্য হিসেবে কৃতিত্ব

১৯৩৮ সালে বাংলার সরকার জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের জন্য ফ্লাউড কমিশন নিয়োগ করেন। হাশেম আলী খান প্রজাদের প্রতিনিধি হিসেবে ফ্লাউড কমিশনের প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। ফ্লাউড কমিশনের রিপোর্ট প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কমিশনের সুপারিশের উপর ভিত্তি করে ১৯৫০ সালে জমিদারী উচ্ছেদ আইন পাশ এবং ১৯৫৬ সালে জমিদার প্রথা উচ্ছেদ হয়। ১৯৪১ সালের ২৫ শে মে বাকেরগঞ্জ জেলা বিশেষ করে ভোলার উপর দিয়ে এক প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস বয়ে যায়। হাশেম আলী খান জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ভোলার বন্যা কবলিত জনগণের সেবা করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯৪১ সালে তিনি দৈনিক ‘নবযুগ’ পত্রিকার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর নিযুক্ত হন। এই সময় নবযুগ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৪২ সালে তার পৃষ্ঠ পোষকতায় মাসিক গুলিস্তান কলকাতা হতে প্রকাশিত হয়।

মন্ত্রী হিসেবে কৃতিত্ব

১৯৪১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর হাশেম আলী খান এ. কে. ফজলুল হকের দ্বিতীয় মন্ত্রী সভায় সমবায়, পল্লী উন্নয়ন ও কৃষি বিভাগের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি শিক্ষা ও কৃষি বিভাগের সাময়িক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আইন সভার ভিতরে ও বাইরে থেকে ১৯৩৮ সালে ভূমি সংস্কার আইন, ১৯৩৯ সালে কৃষি খাতক আইনের প্রথম সংশোধনী ও ১৯৪০ সনে মহাজনী আইন প্রণয়নে সহায়তা করেন। ১৯৪২ সালের ২৭শে মার্চ তিনি চাষী খাতক আইনের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব আইন সভায় উত্থাপন করেন। ১৯৪৩ সালের ১ শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হকের পদত্যাগের সাথে হাশেম আলী খান মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোদ গেন।

মৃত্যু

১৯৬২ সালে তিনি জাতীয় পরিষদে বাকেরগঞ্জ-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৬ই এপ্রিল নির্বাচনী প্রচারকালে বাবুগঞ্জ নদীতে নৌকা ডুবির ফলে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স তখন ৭৪ বছর ২ মাস ১৪ দিন। মৃত্যুকালে তিনি পুত্র নুরুল ইসলাম খান, ফখরুল ইসলাম খান ও কন্যা লুৎফুন্নেছাকে রেখে যান।



তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।