শ্রীনিকেতন

Barisalpedia থেকে

ঝালকাঠির সন্তান শ্রী আশুতোষ আইচ ও তাঁর পুত্র নিত্যানন্দ আইচের প্রতিষ্ঠিত শ্রীনিকেতন আজ পশ্চিম বাংলার পোশাক ও ফ্যাশন জগতে এক গৌরবের নাম।


প্রতিষ্ঠা

১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে বাবা আশুতোষ আইচের হাত ধরে সপরিবারে কোলকাতা গমন করেন শ্রী নিত্যানন্দ আইচ। বাবার ছিল এপার ও ওপার উভয় বাংলায় ক্ষুদ্র ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠান। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাবা আশুতোষ আইচের হাত ধরে নিত্যানন্দ আইচ কোলকাতার অদূরে সোদপুর স্টেশন রোডের উপর বর্তমান শ্রীনিকেতনের বিপরীত দিকে ৫০ টাকায় দুটি ঘর ভাড়া নিয়ে ১৯৬৪ সালে একটি দোকান চালু করেন। দোকানের নাম দেন ‘শ্রীনিকেতন’। বাবার ব্যবসার সূত্রে শান্তিনিকেতন যাতায়াত ছিল বলে এই নামটি তাঁর মাথায় আসে। শ্রীনিকেতনের আজকের শ্রীবৃদ্ধি একদিনে হয়নি। খোলার দিনে দিন শেষে বিক্রি মাত্র ৪২ টাকা। তখন চিন্তা কতক্ষণে ৫০ টাকা বিক্রি হবে এবং বাড়ি ভাড়ার টাকা উঠবে।


জয়যাত্রা ও সম্প্রসারণ

শ্রী নিত্যানন্দ আইচের অসাধারণ ব্যবসায়িক দক্ষতায় ১৯৮০ সালে শ্রীনিকেতনের বার্ষিক বিক্রি ৫লক্ষ টাকায় পৌছায়। প্রতিষ্ঠানের আয়তন দাঁড়ায় ৪০০ বর্গফুটে। শ্রীনিকেতনের তৎকালীন সাফল্যের একটি বড় উৎস রিলায়েন্স কোম্পানির কাপড়ের ব্রান্ড বিমল। রিলায়েন্স থেকে তাদের আহমেদাবাদের কারখানায় এই সময় আমন্ত্রণ জানানো হয় শ্রী নিত্যানন্দ আইচসহ অনেককে। রিলায়েন্সের মালিক অনিল আম্বানি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিক্রেতাদের মতামত নিয়ে তাঁর কাপড় উৎপাদনে আনলেন ব্যাপক পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনে তাঁর বিক্রিতেও আসলো অভাবনীয় উন্নতি।

১৯৮৫ সালে শ্রীনিকেতনের পরিসর দাঁড়ায় ১০০০ বর্গফুট। ১৯৮৬ সালে ভালো বিক্রির সুবাদে রিলায়েন্স কোম্পানি নিত্যানন্দসহ আরো কয়েকজন বিক্রেতাকে সিঙ্গাপুর, হংকং ও ব্যাংকক সফর করান। সেখানে একই ছাদের তলায় হরেক পণ্যের ব্যবসার ধরণ দেখে নিজ প্রতিষ্ঠানে নিত্যানন্দ এই আইডিয়া বাস্তবায়নের চিন্তা করেন। ১৯৯১ সালে ‘শ্রীনিকেতন’-এর সাথে তিনি যুক্ত করেন অঙ্গসংগঠন ‘আনন্দধারা’। এই চিন্তায় দোকানের পরিসর বৃদ্ধির প্রয়োজনে ১৯৯২-৯৩ সালে শ্রীনিকেতন বর্তমানে যেখানে অবস্থিত সেই স্থানের কিছু জমি শ্রী নিত্যানন্দ আইচ ক্রয় করেন। এই জায়গাটিতে তখন একটি বেকারি ছিল।

২০০৫ সালে সোদপুরের বাইরে ‘শ্রীনিকেতন’-এর প্রথম শাখা খোলা হয় কোলকাতায় হাইল্যান্ড পার্কে যার আয়তন ১১,৫০০ বর্গফুট। ২০০৬ সালে শ্যামবাজারে প্রতিষ্ঠিত হয় ১০,০০০ বর্গফুট আয়তনের আরেকটি বিপণি। ২০০৮ সালে সোদপুরের মূল ‘শ্রীনিকেতন’-এর পরিসর দাঁড়ায় সাততলা বাড়িতে ৬০,০০০ বর্গফুট। এই প্রধান কেন্দ্রে বিনিয়োগ হয়েছে ৬ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে বারাসাতে নিজস্ব ভবনে খোলা হয় ১২০০০ বর্গফুটের আরেকটি শাখা । ২০১৩ সালে ৬,০০০ বর্গফুটের আরেকটি শাখা খোলা হয় গড়িয়াহাটে। ২০১৬ সালে ১০,০০০ বর্গফুটের আরেক শাখা খোলা হয় কাচড়াপাড়ায়। পরিকল্পনা রয়েছে বহরমপুর, চূঁচুড়া ও শ্রীরামপুরে ২০১৮ সালের মধ্যেই আরো তিনটি শাখা খোলা হবে। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায়ই একটি করে শাখা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে এর স্বত্বাধিকারী শ্রী নিত্যানন্দ আইচের।

মাত্র দুজন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল শ্রীনিকেতনের। কিন্তু আজ তার কর্মীসংখ্যা ৪৫০। প্রত্যেক কর্মীই প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ইএসআই-এর সুবিধা পান। এই কর্মীদের নিয়েই নিত্যানন্দের সবচেয়ে বেশি গৌরব। তিনি আনন্দের সাথে বলেন, ‘কর্মীরাই আমার মূল সম্পদ। এমন কিছু ভালো কর্মী আমি পেয়েছি যাঁরা পাশে না থাকলে আমার এতদূর পথচলা সম্ভব হতো না’। বর্তমানে শ্রী নিত্যানন্দ ধীরে ধীরে তাঁর সন্তানদের হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন তাঁর এই বিশাল ব্যবসার ভার।

প্রতিষ্ঠাতার পরিচয়

ঝালকাঠির সফল সন্তান শ্রী নিত্যানন্দ আইচের জন্ম তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ১৯৪২। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার শুরু বর্তমান বাগেরহাট জেলাধীন মোড়েলগঞ্জ গার্লস স্কুলে। পরবর্তীতে কোলকাতার অদূরে সুখচর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৬১ সালে মাধ্যমিক পাস করে বঙ্গবাসী কলেজে এক বছর প্রিইউনিভর্সিটি পড়ার পরে তাঁর একাডেমিক পড়াশুনার ইতি ঘটে। ১৯৭৩ সালে তিনি দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করেন। স্ত্রীর নাম আলো রানী আইচ। তাঁদের তিন সন্তান: ১। মিতালী আইচ, ২। বর্ণালী আইচ ও ৩। শ্যামসুন্দর আইচ।

পুত্র নিত্যানন্দ আইচের ব্যবসায়িক সাফল্যের মধ্য দিয়ে ঝালকাঠির সন্তান শ্রী আশুতোষ আইচের প্রতিষ্ঠান ‘শ্রীনিকেতন’-এর সুনাম আজ জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন জুড়ে পরিব্যাপ্ত।


তথ্যসূত্র: শ্রী নিত্যানন্দ আইচের সাক্ষাৎকার, দৈনিক ‘এই সময়’-এর ২৫ জুন ২০১৮ তারিখের প্রতিবেদন।