রুদ্রনারায়ণের পঞ্চরত্ন মন্দির, রায়েরকাঠি, পিরোজপুর

Barisalpedia থেকে

সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত মদনমোহনের প্রপৌত্র রুদ্রনারায়ণ এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। রায়েরকাঠির এই পঞ্চরতœ সম্পর্কে কিছু জনশ্র“তি রয়েছে। সেই কিংবদন্তীতে বলা হয়েছে যে রুদ্রনারায়ণ পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত জমিদারি পরিচালনার জন্য লুৎফাবাদ অঞ্চলে অবস্থান করার পর চিরুলিয়া পরগনার কোঁদাল নামের গ্রামে বসবাস করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই সময়ে কোনো একরাতে রুদ্রনারায়ণ স্বপ্নে বিশ্বজননীকে তার সম্মুখে আবির্ভূত হতে দেখেন। স্বপ্নে দেবী তাকে বলেশ্বর নদীতীরে এক জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে এক বৃক্ষের নিচে জগদম্বার পাষাণমূর্তি প্রোথিত রয়েছে বলে জানান। ঘুম ভাঙ্গার পর রুদ্রনারায়ণ দেবী বর্ণিত স্থানে উপস্থিত হন এবং বৃক্ষের নিচ থেকে চাপা পড়া দেবী প্রতিমা উদ্ধার করেন। রুদ্রনারায়ন তার পূর্ব সিদ্ধান্ত ত্যাগ করে ঐ স্থানে রাজধানী স্থাপন করে কুল-পুরোহিত রূপরাম চক্রবর্তীর নামে ঐ দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। রায়েরকাঠি রতœ মন্দির সম্পর্কে আরো বলা হয়ে থাকে যে মূর্তি স্থাপনের জন্য পাঁচটি নরমুন্ড দিয়ে বেদিকা তৈরি করা হয়েছিলো। এই কারণে রায়েরকাঠির মন্দির পঞ্চরতœ মন্দির নামে খ্যাত। কথিত আছে রাজা রুদ্রনারায়ণ এই বেদিকা নির্মাণের জন্য পাঁচজন চ-ালকে প্রচুর পরিমানে টাকা-পয়সা দিয়ে তাদের মস্তক ক্রয় করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ঈর্ষান্বিত চন্দ্রদ্বীপ অধিপতি তার বিরুদ্ধে নবাবের নিকট নরহত্যার অভিযোগ উত্থাপন করেন। নবাবের আদেশে কারারুদ্ধ রুদ্রনারায়ণ প্রকৃত ঘটনা নবাবকে জানানোর উদ্দেশ্যে কারাধ্যক্ষকে কোনো উপায়ে বশীভূত করে গোপনে নবাবের শিকার সঙ্গী হন। তারপর শিকারের সময়ে নবাবের সম্মুখে শুধুমাত্র একটি তলোয়ার নিয়ে এককভাবে একটি বাঘ হত্যা করেন। এই বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে নবাব তার পরিচয় জানতে চাইলে রুদ্রনারায়ণ পরিচয়সহ সমুদয় ঘটনা বিনীতভাবে নবাবের গোচরীভূত করেন। নবাব রুদ্রনারায়নকে মুক্তি দান করে সৈয়দপুর পরগনার সনদ দান করেন। এছাড়া জমিদার রুদ্রনারায়ন ষোলশ আঠারো খ্রিস্টাব্দে রায়েরকাঠি মন্দিরে কালিমূর্তি স্থাপন করেন। এই মন্দিরে রূপরাম চক্রবর্তী সিদ্ধি লাভ করেন বলে এখানকার মূর্তি পরবর্তীকালে সিদ্ধেশরী নামে পরিচিত হতে থাকে।

Image 41.jpg


তথ্যসূত্র: সাইফুল আহসান বুলবুল। বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন। গতিধারা, ঢাকা। ২০১২।