যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল

Barisalpedia থেকে

ওরফে যোগেন মন্ডল। তফসিলি সম্প্রদায়ের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ও পাকিস্তান গণ পরিষদের এক সময়ের স্পিকার। জন্ম: ২৯ জানুয়ারি ১৯০৪। মৃত্যু ১৯৬৮। গ্রাম- মৈস্তারকান্দি, থানা- গৌরনদী, জেলা: বরিশাল। পিতা রামদয়াল ম-ল। মাতা সন্ধ্যা রানী।

লেখাপড়া

১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে অঙ্ক ও সংস্কৃতে উল্লে¬খযোগ্য ভালো নম্বর পেয়ে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে আইএ এবং গণিত ও সংস্কৃত নিয়ে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ পাশ করেন ১৯২৯ সালে। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার ছোটো আদালতে শিক্ষানবিশ হিসাবে যোগ দেন।

কর্মজীবন

পরে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল ওরফে যোগেন মন্ডল বরিশাল সদর আদালতে আইনজীবী হন। সামাজিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণীর উন্নতিসাধনের উদ্দেশ্যে তিনি জনসেবামূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে নি¤œবর্গের মানুষদের দাবিদাওয়া সামনে রেখে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন। সাধারণ নির্বাচনে তিনিই প্রথম তফশিলি জাতির একমাত্র প্রতিনিধি যিনি সারা ভারতে আইনসভার একটি সাধারণ আসন জয় করতে পেরেছিলেন। কেন্দ্রটি ছিল বাখরগঞ্জ। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় বিধানসভায় তফশিলি সম্প্রদায়ভূক্ত সদস্যদের নিয়ে তিনি ‘ইনডেপেনডেন্ট সিডিউলড কাস্ট পার্টি’ নামে নিরপেক্ষ তফশিলি দল গঠন করেন। ১৯৪৩ খ্রি. খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রীসভায় তিনি সমবায় ও ঋণদান বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪৬ খ্রি. তিনি ভারতের অন্তর্বর্তী সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্বভার পালন করেন। বাংলায় সোহরাওর্দির মন্ত্রীসভায় তিনি ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কাজ করেছেন।

নিখিল ভারত তফশিলি জাতি ফেডারেশনে অংশগ্রহণ

তাঁর অর্থে ও প্রচেষ্টায় ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘জাগরণ’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হত। ড. অম্বেদকরের নেতৃত্বাধীনে গঠিত নিখিল ভারত তফশিলি জাতি ফেডারেশনের বঙ্গীয় প্রাদেশিক শাখার তিনি প্রথম সভাপতি ছিলেন। ভারত ভাগের সিদ্ধান্ত কিছুতেই তিনি মেনে নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ‘অখন্ড সার্বভৌম বাংলাদেশ’ এর দাবি তোলেন। একমাত্র শরৎচন্দ্র বসু ও সোহরাওয়ার্দি ছাড়া অন্য কোনো নেতার সাড়া তিনি পাননি।

পাকিস্তান সরকারে যোগদান

অবশেষে তফশিলিদের আন্দোলনে মুসলিম লিগের সমর্থন পাওয়া যাবে জেনে তিনি পাকিস্তানন সরকারে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশবিভাগের পর ‘জাগরণ’ ও তফশিলি জাতি ফেডারেশনের কার্যালয় ঢাকা শহরে স্থানান্তরিত হয়। তিনি পাকিস্তান গণ পরিষদের স্পীকার ও ১৯৪৭ সনে ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিযুক্ত হন। পাকিস্তানের হিন্দুনীতির প্রতিবাদে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে শেষ পর্যন্ত তিনি পিতৃপুরুষের ভিটে ছেড়ে ভারতে এসে বসবাস শুরু করেন।

মৃত্যু

তফসিলি জাতিগোষ্ঠির এই মহান নেতা ১৯৬৮ সালে ভারতে যথাযথ সম্মানহীনভাবে মৃত্যুবরণ করেন। বিখ্যাত লেখক দেবেশ রায় ২০১০ সালে ‘বরিশালের যোগেন মন্ডল’ নামে এক বিখ্যাত উপন্যাস রচনা করে এই নি¤œবর্গের নেতার প্রতি যৎসামান্য শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।


তথ্যসূত্র: বাঙালি চরিতাভিধান (প্রথম খন্ড)। কোলকাতা: সাহিত্য সংসদ। ২০১৩।