মোহিত চট্টোপাধ্যায়

Barisalpedia থেকে

বিশিষ্ট কবি ও নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের (১.৬.১৯৩৪ - ১২.৪.২০১২) জন্ম ফকিরবাড়ি রোড, বরিশাল। পিতা নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়; মাতা রেণুকা দেবী।

শিক্ষা

মোহিত ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বরিশালে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে ভরতি হয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার আগে জুন মাসে পূর্ববঙ্গ ছেড়ে সপরিবারে কলকাতায় এসে চিৎপুর অঞ্চলে বৃন্দাবনবসাক স্ট্রিটের এক বাড়িতে বসবাস শুরু করেন এবং চিৎপুর ভারতী বয়েজ স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভরতি হন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে উত্তর কলকাতার সিটি কলেজে বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করেন। মোহিতের এই কলেজে সহপাঠী ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ফণিভূষণ আচার্য, শিবশম্ভু পাল প্রমুখ তরুণ কবি। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে মোহিতের কবিতা লেখা শুরু হয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রকাশিত ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায়।

কর্মজীবন

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে বি.এ. পাশ করে সাংসারিক প্রয়োজনে ডালহৌসিতে ইনকাম ট্যাক্স অফিসে চাকরি গ্রহণ করেন এবং প্রাইভেটে এম.এ. পাশ করেন ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে। ইতিমধ্যেই তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে। এম.এ. পাশ করে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর কলেজে বাংলার অধ্যাপকরূপে চাকরি গ্রহণ করেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে উপরি-উক্ত কলেজ ত্যাগ করে কলকাতার আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপকরূপে কাজ করেন ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তাঁর বহু নাট্যকার ও নাট্যবিষয়ক প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বসবাস শুরু হয় সিঁথি অঞ্চলে। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্লা চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়।

সাহিত্যকর্ম ও পুরস্কার

তাঁর অসংখ্য নাটক সমৃদ্ধ করেছে বাংলা থিয়েটারকে। শুধুমাত্র মঞ্চনাটক নয়, বেতারের জন্য লিখেছেন শ্রুতিনাটক অনেকগুলো, দূরদর্শনের জন্যও লিখেছিলেন ‘সহযাত্রী’ শীর্ষক নাটক। অনেক টি.ভি. সিরিয়ালের চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন। তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি কর্তৃক দীনবন্ধু পুরস্কারে। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মা রেণুকা দেবীর মৃত্যু হয় এবং ১৯৯০- এ বাবা নগেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। এরপরই ১৯৯১- এ বারুইপুরে বসবাস শুরু হয়। ২০০১- এ বারুইপুরে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে রানিকুঠি অঞ্চলে সরকারি আবাসনে চলে আসেন। মৃত্যুর দু-বছর আগে (২০১০) মোহিত চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির সভাপতির পদে বৃত হন। তাঁর রচিত অসংখ্য গ্রন্থের মধ্যে বিশেষ কয়েকটি গ্রন্থের নাম: কাব্যগ্রন্থ- ‘আষাঢ়ে শ্রাবণ’ (১৯৫৬), ‘গোলাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ (১৯৬১), ‘শবাধারে জ্যোৎ¯œা’ (১৯৬৫), ‘চৈত্রের উড়ন্ত ফুল’ (১৯৬৫); নাটক- ‘কণ্ঠনালিতে সূর্য’ (১৯৬৩), ‘নীলরঙের ঘোড়া’ (১৯৬৪), ‘সিংহাসনের ক্ষয়রোগ’ (১৯৬৮), ‘বাঘবন্দী’ (১৯৬৯), ‘ক্যাপটেন র্হুরা’ (১৯৭০), ‘তোতারাম’ (১৯৮৬), ‘সোক্রাতেস’ (১৯৮৯), ‘বমন’ (১৯৯১), ‘মায়ের মতো’ (২০১১) প্রভৃতি।

মৃত্যু

গলায় দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে ১২.৪.২০১২ তারিখ মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাঁর মৃত্যুতে ‘সমীক্ষণ’ নাট্যসংস্থার কর্ণধার নাট্যকার, নাট্য-নির্দেশক ও অভিনেতা পঙ্কজ মুন্সীর কথায়: ‘আমরা এক বিশাল বটগাছ হারালাম। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল অসুন্দরকে সুন্দর করে তোলা।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান