ফনসেকার রিপোর্টে চন্দ্রদ্বীপ

Barisalpedia থেকে

জেসুইট পাদ্রী মেলকিয়র ফনসেকা (Melchior Fonseca) ছিলেন একজন পর্তুগিজ। চন্দ্রদ্বীপ তার বর্ণনা রয়েছে একটি চিঠিতে। ঐ চিঠির বিবরণ চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ।

১৫৯৯ খ্রিঃ অক্টোবর মাসে জেসুইট পাদ্রী মেলকিয়র ফনসেকা (Melchior Fonseca) ও এণ্ড্রু বাওয়েস রাজা রামচন্দ্রের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ফনসেকার সাক্ষাতকারের বিবরণ একটি চিঠিতে লেখা আছে। ফাদার ফনসেকা উক্ত চিঠিতে বলেন, ‘বাকলার রাজা আমাকে আহ্বান করে পাঠান। আমি ও আমার সঙ্গী পর্তুগীজদের নিয়ে তার নিকট উপস্থিত হই । রাজা প্রাসাদে পৌঁছে আমাদের আনার জন্য দু’বার সংবাদ প্রেরণ করেন। আমরা পৌঁছে দেখি রাজা তার সম্মানিত অমাত্য ও সেনাপতিসহ আসনে উপবিষ্ট আছেন। সকলে সুন্দর গালিচার উপর বসে আছে। আমরা দাঁড়িয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানালাম। রাজা তার সামনের আসনে আমাকে ও আমার সঙ্গীদের বসতে অনুমতি দেন। পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের পরে রাজা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনারা কোথায় যাবেন।’ আমি উত্তর দিলাম ‘ আমরা আপনার ভাবী শ্বাশুর চন্ডিকানের রাজার নিকট যাব।’ রাজা আমাদের গির্জা নির্মানের আদেশ দিলেন। পরে তিনি দু’জনের বৃত্তির বন্দোবস্ত করেন। বাকলা থেকে চন্ডিকানের পথ এত সুন্দর ও মনোজ্ঞ যে, আমরা কখনও সে দৃশ্য দেখেছি কিনা সন্দেহ। অনেক স্বচ্ছ সলিল নদ-নদী অতিক্রম করে আমরা চলছি। এ সকল নদীকে এদেশে গাঙ বলে থাকে এবং এগুলোর তীর সবুজ বৃক্ষরাজি দ্বারা সুশোভিত। মাঠে ধান রোপণ করা হচ্ছে। গাভীর দল বিচরণ করছে। খালের মধ্যে প্রবেশ করে দেখলাম অনুকরণপ্রিয় বানরগুলো লাফ দিয়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাচ্ছে। এ সকল সুন্দর ও উর্বরস্থানে অনেক ইক্ষু জন্মেছে। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাতায়াত করা খুবই বিপজ্জনক। কারণ তার মধ্যে অনেক গন্ডার ও হিংস্র জন্তু বিচরণ করে থাকে। আমরা ২০ নভেম্বর চন্ডিকানে উপস্থিত ইই।’ চন্ডিকান বা যশোর রাজ্যে পৌঁছে ফনসেকার ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারী লেখা পত্রে তার ভ্রমণের সাফল্য বর্ণনা করেছেন। ফনসেকা জেসুইট প্রধানের নির্দেশে ও বাকলায় অবস্থানরাত পর্তুগীজ খ্রিস্টানদের অনুরোধে বাকলা হয়ে চন্ডিকানে যান। প্রায় দুই বছর কোন পাদ্রী বাকলার প্রার্থনা পরিচালনা করননি। ফনসেকা চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী হোসেনপুরে রাজা রামচন্দ্রের সাথে সাক্ষাত করেন এবং পর্তুগীজদের প্রার্থনা পরিচালনা করেন। রামচন্দ্র তাদের যাতায়াত খরচ ও পরিচয়পত্র প্রদান করেন। ফনসেকার নির্দেশে পর্তুগীজরা বাকলায় গির্জা নির্মাণ করেন। সম্ভবত রাজধানীতে এ গির্জা নির্মিত হয়। ফনসেকা তার বিবরণে রামচন্দ্রকে আাট বছরের বালক বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রামচন্দ্রের বুদ্ধির প্রখরতা দেখে মনে হয় তার বয়স তখন কমপক্ষে ১২ বছর ছিল।