পরেশলাল রায়

Barisalpedia থেকে

খ্যাতনামা মুষ্টিযোদ্ধা ও বরিশাল পুলিশ লাইনসের উত্তরপাশের পরেশ সাগর নামের দীঘিটি যাঁর নামের স্মারক সেই ব্যক্তিত্ব। জন্ম ২০ ডিসেম্বর ১৮৯৮। মৃত্যু ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭৯। জন্মস্থান লাখুটিয়া, বরিশাল। পিতা লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্যারিস্টার জমিদার পিয়ারীলাল রায়। ডা. সূর্যকুমার গুডিব চক্রবর্তী তাঁর মাতামহ। ভারতে সংগঠিত মুষ্টিযুদ্ধের প্রবর্তক ও খ্যাতনামা মুষ্টিযোদ্ধা। শৈশব থেকে শিক্ষাদীক্ষা সবই ইংল্যান্ডে। বক্সিংয়ে প্রথম তালিম ১০ বছর বয়সে কেম্ব্রিজের বিখ্যাত কোচ বিলি চাইল্ডসের কাছে। পরে ফেদারওয়েটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জিম ড্রিসকল স্বেচ্ছায় তাঁর শিক্ষাভার গ্রহণ করেন। সেন্ট পলস স্কুলে পড়ার সময় ১৯১২খ্রি. বক্সিংয়ে ফেদারওয়েট বিভাগে পাবলিক স্কুল চ্যাম্পিয়ন হন। বক্সিংয়ে তিনিই এশিয়ার প্রথম কেম্ব্রিজ ব্লু। পরে রাগবি খেলাতেও ব্লু পান। ১৯১৪খ্রি. ইংল্যান্ডের ব্যান্টমওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন। বন্দুক ছোড়ায় ও অশ্বারোহণে দক্ষ ছিলেন। সম্ভবত তিনিই ভারতের প্রথম অপেশাদারি জকি যিনি রেসের মাঠে ঘোড়া ছুটিয়েছেন। কেম্ব্রিজে পড়ার সময় জওহরলাল নেহরু তাঁর সতীর্থ ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় বিট্রিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং তাঁর অনুজ ইন্দ্রলাল রয়েল ফ্লাইং কোর-এ কিংস কমিশন পেয়েছিলেন। ভারতীয়দের মধ্যে এর আগে এই সম্মান আর কেউ পাননি। অর্থনীতিতে এম.এ. পাশ করে ১৯১৯ খ্রি. দেশে ফিরে ইস্ট বেঙ্গল স্টেট রেলওয়েতে চাকরি নিয়ে কাজ শুরু করেন। ক্রমে রেলওয়ে বোর্ডের ডাইরেক্টও এবং ও.টি. রেলওয়ের ম্যানেজার পদে উন্নীত হন। বিশ দশকে বক্সিং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের মধ্যেই জনপ্রিয় ছিল। তিনিই ভারতীয়দের বক্সিংয়ের রিং-এ টেনে আনেন। মুষ্টিযুদ্ধ সংগঠনের চেষ্টায় কলকাতার বালিগঞ্জে এক শিক্ষা কেন্দ্র খোলেন। ১৯২৮ খ্রি. বেঙ্গল বক্সিং ফেডারেশন গঠন করে প্রথমে তার সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৩খ্রি. সিভিল মিলিটারি লড়াইয়ে বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন সন্তোষ দে তাঁর শিষ্য। অন্যান্যদের মধ্যে প্রমথ চৌধুরী, ফণি মিত্র, নগেন চ্যাটার্জি, জোয়াকিম সি.এ. মাইনাস, আবুলাল, জনি নাটাল, আর.অস্টিন, ডি. গ্যাসপার, কার্তিক দত্ত প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। অ্যামেচার বক্সার হয়েও ওল্ড এম্পায়ার থিয়েটারে এক প্রদর্শনী খেলায় ব্যান্টমওয়েটে সে-সময়ের ভারত চ্যাম্পিয়ন এডগার ব্রাইটের বিরুদ্ধে খেলে তিনি বিজয়ী হন। পরে একবার ফিলিপাইনের খ্যাতনামা বক্সার ইয়ং টারলেকে পরাজিত করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে মেজরপদে উন্নীত হয়েছিলেন। বরিশাল জিলা স্কুলের পশ্চিম পাশের ‘পরেশ সাগর’ নামক দীঘিটি এই পরেশলাল রায়ের নামের স্মারক হয়ে এখনো বিরাজ করছে।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান।