পরমানন্দ বসুর সমাজ সমীকরণ

Barisalpedia থেকে

চন্দ্রদ্বীপের ৭ম রাজা পরমানন্দ চন্দদ্বীপের শেষ সমাজ সমীকরণের জন্য বিখ্যৗাত। তিনি ধর্মীয় বিষয়াদিতে নিবেদিত ছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে শ্রীচৈতন্য দেব বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেন। রাজা পরমানন্দ তার ভক্ত ছিলেন। ১৫২৭ সালে শ্রীচৈতন্য দেব কোটালীপাড়ায় মুখডোবা গ্রামে আগমন করেন। মুখডোবার ব্রাহ্মণ মন্দিরে তিনি নিজ হাতে বাসুদেবের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। চৈতন্য দেবের আগমনের কথা শুনে পরমানন্দ মুখডোবায় গমন করেন এবং তার সাথে সাক্ষাত করেন। পরমানন্দ বাসুদেবের পূজার জন্য দেবোত্তর ভূমি প্রদান করেন। মুখডোবার ব্রাহ্মণরা এ ভূমি জমিদারী উচ্ছেদের সময় পর্যন্ত ভোগ করতেন।

রাজা পরমানন্দ বসু বাকলার সমাজপতি ছিলেন। তিনি কুলাচার্য ও মন্ত্রীদের সাথে পরামর্শ করে বঙ্গজ কায়স্থদের বাকলা সমাজের নবম বা শেষ সমাজ সমীকরণ করেন। এই সমাজ সীমকরণের সময় একখানি হস্ত লিখিত কুলগ্রন্থে বঙ্গজ কায়স্থদের চতুর্বিধ কুল পদ্ধতির উল্লেখ আছে। উক্ত গ্রন্থে বঙ্গজ মৌলিক সম্বন্ধে বিধান আছে।

কুলীনের সঙ্গে যদি সম্বন্ধ করয়।

পণ দিয়া পূজিবে করিবে বিনয়।

কুলীন ঠাকুর বটে মর্যাদায় বড়।

পরমানন্দ বসুর সমীকরণের ফলস্বরূপ বঙ্গজ কুলীনগণ বসুঠাকুর, গুহঠাকুর ইত্যাদি অভিধায় আখ্যাত হতো। বানারীপাড়ার গুহ বংশীয়গণ গুহঠাকুরতা নামে অভিহিত। মনে হয় তারা পরমানন্দের সমাজ সমীকরণের সময় কুলীনত্বের মর্যাদা প্রাপ্য হন। পরমানন্দ কুলীন কায়স্থদের বিষয়ে কয়েকটি নতুন নতুন নিয়ম প্রচলন করেন। পূর্বে ঘোষ, বসু গুহ ও মিত্র গণনা করা হতো। তিনি ১২/১৩ পর্যায়ে কুলীন নিয়ে নবম সমাজ সমীকরণ করেছিলেন। তিনি পূর্বের নিয়ম পরিবর্তন করে বসু, ঘোষ, গুহ ও মিত্র এরূপ গণনা শুরু করেন। তিনি নিজে বসু বলে নিজের বংশমর্যাদা শিরঃস্থানে নির্ধারিত করেন। এ নিয়ম প্রচলন করায় বাকলা কুলীন সমাজে মতান্তর দেখা দেয়। তাই পরমানন্দের নবম সমীকরণ সমাপ্ত হয়নি। তার এই সমাজ সমীকরণের ফলে আরও কয়েকটি ভিন্ন সমাজ গঠিত হয়। প্রতাপাদিত্যের পিতৃব্য বসন্ত রায় সমাজ প্রতিষ্ঠা করে বাকলা সমাজ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এই সমাজ সমীকরণ নিয়ে মতান্তর সত্ত্বেও বাকলা সমাজ শিরঃস্থানে ছিল। ঘটক গ্রন্থে দেখা যায় বাকলা সমাজ শিরঃস্থান, যশোর সমাজ বাহু স্বরূপ, বিক্রমপুর সমাজ ঊরুদ্বয় এবং ভূষণা সমাজ পদদ্বয়। প্রাচীনকাল হতে বরিশালের নথুল্লাবাদের মীরবহর, বসু, বামরাইলের বসু, গাভা ও লক্ষ্মণকাঠীর ঘোষ-দস্তিদার ও বানারীপাড়ার গুহঠাকুরতা বাংলাদেশে কুলীন সমাজের শীর্ষস্থান অধিকার করেছিল।



তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, ‘বরিশাল বিভাগের ইতিহাস’ ১ম খণ্ড