নৃসিংহ নারায়ণ, রাজা

Barisalpedia থেকে

১৮১৩ খৃৃস্টাব্দে রাজা নৃসিংহ নারায়ণ চন্দ্রদ্বীপের জমিদারী পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন। তিনি চন্দ্রদ্বীপের ১৭তম বা ১৮ তম রাজা ছিলেন। পিতা জয়নারায়ণের মৃত্যুর সময় তিনি অল্প বয়স্ক ছিলেন।


শিশুকালেই রাজ্যের দুর্যোগ

মাতা রানী করুণাময়ী শিশুপুত্রকে নিয়ে মহাবিপদে পড়লেন। করুণাময়ী হোসেনপুরের বৃদ্ধ কর্মচারী গঙ্গা গোবিন্দ বকশীকে প্রধান কর্মচারী নিয়োগ করেন। রানী প্রিভিকাউন্সিলের মামলা পরিচালনা করতে থাকেন। রাজবাড়ির আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়ে। রানী বাধ্য হয়ে মানিক মুদির সাথে মামলার নিষ্পত্তি করলেন এবং কয়েকখানা নিষ্কর তালুক ও লাখেরাজ ফেরত পেলেন। এ ঘটনার অব্যাবহিত পরে প্রিভিকাউন্সিলের রায়ে রাজা নৃসিংহ নারায়ণ জয়লাভ করেন। কিন্তু নিষ্পত্তির কারণে তিনি জমিদারী ফেরত পেলেন না।

অবশ্য এ ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। বাকলার লেখক রোহিণী রায় চৌধুরী এ ঘটনার উল্লেখ করেছেন। চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস লেখক শ্রী বৃন্দাবন পুততু- এ ঘটনা সম্পর্কে ভিন্ন বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঢাকার সদর দেওয়ানী আদালতের মামলায় রাজা রাম মানিক মুদিকে বেনামদার বলে উল্লেখ করেছেন। রাম মানিক রাজার পক্ষে মুক্তিপত্র রেজিষ্ট্রি করতে রাজি হয়েছিলেন। রাজার প্রধান কর্মচারীকে নিয়ে ঢাকা সদরে মুক্তিপত্র রেজিষ্ট্রি করেছেন। পরে মানিক মুদি আদালতে স্বনামে দাবি করেন। তখন বাকেরগঞ্জের রেজিষ্ট্রি অফিস ছিল। তাই রাম মানিক আদালতে যুক্তি দেখান যে, বাকেরগঞ্জে রেজিষ্ট্রি না করে ঢাকায় করা যুক্তিহীন এবং আদালত তার এ দাবি মেনে নিয়ে রায় দেয়। রানী করুণাময়ী কোম্পানির নিকট জমিদারী উদ্ধারের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু সরকার তার আবেদনের কোন রকম সাড়া দেয়নি।


রাজার বিবাহ ও ব্যক্তিত্ব

রানী তার পুত্র নৃসিংহ নারায়ণকে অল্প বয়সে দু’টি বিয়ে দেন। তার প্রথম স্ত্রীর নাম রানী অন্নপূর্ণা এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম রানী রাজেশ্বরী। নৃসিংহ নারায়ণ রাজবাড়ির করুণ অবস্থা ও জমিদারী হারানোর দুঃখে সব সময় চিন্তিত থাকতেন। তিনি উদ্যমহীন অবস্থায় জীবন যাপন করতেন। কিন্তু তার রূপ ছিল অপূর্ব। তার মত সুন্দর পুরুষ সমগ্র জেলায় ছিল না। দূর থেকে প্রজারা তাকে দেখতে আসত। তিনি কর্মচারীদের নিয়ে সমভিব্যহারে নৌকা ভ্রমণ করতেন। প্রজারা উপঢৌকন দিয়ে তার দর্শন লাভ করত। তিনি ধীর, গম্ভীর ও শাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন। তার অমায়িক ব্যবহারে সকলে সন্তুষ্ট হতো।

সন্তান দত্তক গ্রহণ

তার স্ত্রীরা কেউ সন্তানবতী ছিলেন না। তাই প্রথম স্ত্রী নরেন্দ্র নারায়ণ নামে এক দত্তক পুত্র গ্রহণ করেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে সে মারা যায়। তার পর বড় রানী অন্নপূর্ণা বীরসিংহ নারায়ণ এবং ছোট রানী রাজেশ্বরী দেবেন্দ্র নারায়ণ নামে দত্তক পুত্র গ্রহণ করেন।

মৃত্যু

রাজা নৃসিংহ নারায়ণ দুঃখ-কষ্টে কালাতিপাত করে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর মাতা রানী করুণাময়ী শোকে দেহত্যাগ করেন। রাজা নৃসিংহ নারায়ণের মৃত্যুর পর বীর সিংহ নারায়ণ রাজা হন।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।