দুধ কুমার মল্লিক

Barisalpedia থেকে

মোগল আমলের পীর-আউলিয়াদের মধ্যে হজরত দুধ কুমার মল্লিক অন্যতম। তার প্রকৃত নাম জানা যায়নি। তবে তার নাম হজরত মালিক হতে পারে। মালিক হতে মল্লিক হয়েছে। তিনি ইয়েমেনের বাদশাহের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন। বাদশাহের সাত পুত্র বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন। দ্বিতীয় পুত্র দুধ কুমার সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৬-২৭ খ্রিঃ) গৌরনদী থানার কসবা গ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন।

স্থানীয় প্রবাদ মতে সম্রাট জাহাঙ্গীর স্বয়ং কসবায় এসে দুধ কুমারের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর হজরত দুধ কুমারের মাজারের জন্য ১৬ দরুণ ১৩ কানি লাখেরাজ সম্পত্তি প্রদান করেন। এজন্য কসবার এক নাম লাখেরাজ কসবা। সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রদত্ত লাখেরাজের তাম্রলিপি কসবার কাজীদের নিকট আছে। হজরত দুধ কুমার দীর্ঘদিন ঘরে বরিশাল-ফরিদপুরে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। শত শত অমুসলমান তার নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি কয়েকটি দীঘি খনন করেন। এগুলো পদ্মবুনিয়া, গোয়ালিয়া, মালী ও মাঝের আন্ধি নামে পরিচিত। দুধ কুমারের মালী পদ্মবুনিয়া দীঘি থেকে পদ্মফুলের মালা এবং গোয়ালিয়ার পারের গোয়ালা দুধ মল্লিককে দুধ দিতেন। এজন্য তাদের নামে দীঘিগুলোর নামকরণ হয়। কথিত আছে যে, দুধ মল্লিক শুধুমাত্র গাভীর দুধ খেয়ে বেঁচে ছিলেন, এজন্য তার নাম হয় দুধ কুমার।

গাভীগুলো গভীর রাতে দুধ খাওয়াতে আসত। তার কয়েকটি প্রিয় কড়ি ছিল। কড়িগুলো দুধ খেয়ে দীঘিতে চলে যেত। মাজারে বর্তমানে একটি মৃত বড় কড়ি আছে। তার ব্যবহৃত একজোড়া পাথরের শিল-নোড়া (পাটাপুতা) মাজারের নিকটে কাঁঠাল গাছের পাশে মাটির নিচে পোঁতা আছে। মাজারের খাদেম শাহ্ বংশ দাবি করেন যে, তারা পীরের সাথে কসবায় আগমন করেন। মাজারের খাদেম হিসেবে তারা লাখেরাজ সম্পত্তি ভোগ করতেন। শাহ্ বংশের বর্তমানে ১৩ পুরুষ চলছে। সে হিসেবে দেখা যায় হযরত দুধ কুমার স¤্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে কসবায় আগমন করেন। বর্তমানে কসবার কাজী ও শাহ্ বংশ মাজারের রক্ষণাবেক্ষণ করেন।

দুধ মল্লিক কুমারের জন্ম-মৃত্যুর তারিখ অজ্ঞাত।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (প্রথম খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।