জীব গোস্বামী

Barisalpedia থেকে

জীবনকাল আনুমানিক ১৫১০-১৬০০। আদি নিবাস প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপ। পিতা বল্লভ, নামান্তরে অনুপম মল্লিক। রূপ ও সনাতন গোস্বামীর ভ্রাতুষ্পুত্র। জ্যেষ্ঠতাতদের সংসার ত্যাগের সময় জীব গোস্বামী শিশু ছিলেন। গৌড়ে শিক্ষালাভ করেন। নিত্যানন্দের আদেশে বৃন্দাবনে যান। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ছয় গোস্বামীর তিনি একজন। কাশীতে মধুসূদন বাচস্পতির নিকট বেদান্ত শিক্ষা করেন। বৃন্দাবনে রূপ গোস্বামীর নিকট দীক্ষা নেন। রূপ ও সনাতনের গ্রন্থ-রচনায় সাহায্য করতেন এবং জ্যেষ্ঠতাতদের তিরোধানের পর বৃন্দাবনে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের অধিনায়ক হন। বৃন্দাবনের গোস্বামীদের শেষ শাস্ত্রকর্তা। অনেকগুলি সংস্কৃত গ্রন্থের রচয়িতা তিনি।

সুকুমার সেনের মতে জীব গোস্বামী বৈষ্ণব আধ্যাত্ম চিন্তাকে ভারতীয় দর্শন শাস্ত্রের বিচারে এনে একটি নতুন শাস্ত্রীয় ধর্মগোষ্ঠী উপযোগী বিদ্যার ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন ছয়টি ‘সন্দর্ভ’ ও কয়েকটি টীকা গ্রন্থ লিখে। তাঁর ছয়খানা সন্দর্ভ হলো ‘তত্ত্বসন্দর্ভ’, ‘ভগবৎসন্দর্ভ’, ‘পরমার্থসন্দর্ভ, ‘শ্রীকৃষ্ণ সন্দর্ভ’, ‘ভক্তিসন্দর্ভ’ ও ‘পরমাত্মসন্দর্ভ। কৃষ্ণলীলা বিষয়ক তাঁর বিপুলায়তন গ্রন্থ ‘গোপালচম্পূ’। এ গ্রন্থে কৃষ্ণের ব্রজলীলার সঙ্গে মিল করে গোলোকের লীলা বর্ণিত হয়েছে। এ গ্রন্থে কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার সমান মর্যাদা স্বীকার করে জীব গোস্বামী গৌড়ীয় বৈষ্ণবচিন্তাকে নতুন দিকে প্রবাহিত করলেন। রাধার মর্যাদার এই স্বীকৃতির ওপর ভিত্তি করেই কৃষ্ণের মূর্তির বামে রাধার মূর্তি প্রতিষ্ঠা এবং যুগলমূর্তির উপাসনা প্রথমে বৃন্দাবনে ও পরে বাংলাদেশে প্রচলিত হয়েছিল। এই যুগান্তকারী বৈষ্ণবাচারের প্রতিষ্ঠার যিনি মহানায়ক তিনি আমাদের চান্দ্রদ্বীপি লেখক জীবগোস্বামী। তাঁর রচিত সংস্কৃত ব্যাকরণ: ‘হরিনামামৃত’। এর সূত্র ও বৃত্তি হরিনাম ব্যবহার করে লেখা। এ ছাড়াও রচিত বহু স্ত্রোত্র আছে। তাঁর সমস্ত রচনাই সংস্কৃতে লেখা।


তথ্যসূত্র: ১. সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। ২. সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী।