কৃষক সমিতি, বরিশাল

Barisalpedia থেকে

বরিশালে কংগ্রেসের কৃষক সভা ও ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টির অঙ্গদল কৃষক সমিতির শাখা ছিল। প্রথমে লাল মোহন সেন এবং পরে দেবেন ঘোষ কৃষক সভার সভাপতি ছিলেন। বরিশালে কৃষক সভার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে বরিশালে কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। তখন থেকে দলের কর্মীরা কৃষকদের সংগঠিত করার চেষ্টা করে।

কৃষক সমিতির প্রথম সম্মেলন

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে গৌরনদী থানার চাঁদসী গ্রামে কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বে কৃষক সমিতির এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চাঁদসীর ক্ষত চিকিৎসক পরিবারের ডাঃ মোহিনী মোহন দাশ সম্মেলনের অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি ঢাকা থেকে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বিাচিত হন। সম্মেলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন চাঁদসী ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ডাঃ নলিনী দাশ। হাজার হাজার হিন্দু-মুসলমান কৃষক সম্মেলনে যোগ দেন। এ সম্মেলনে ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা কমরেড মোজাফফর আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে ডাঃ নলিনী দাশ জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি এবং কুঞ্জ বসু সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে গৌরনদীর বাঘারহাট ও পরে মাহিলারায় কৃষক সমিতির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কৃষকরা শৌলাকর গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল কাটায় অংশ নেয়। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে কৃষক সমিতি ও কমিউনিষ্ট পার্টির উদ্যোগে উত্তর বরিশাল শহর হতে ৫ হাজার লোকের এক ভুখা মিছিল আসে।

কৃষক সমিতির দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলন

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে হিজলা থানার বাথুয়ায় কৃষক সমিতির দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলন হয়। হিজলা থানার সম্মেলন সফল করার জন্য মুলাদীর কালিপদ দাশ, হিজলার মনোরঞ্জন চক্রবর্তী ও উলানিয়ার ওয়াহেদ রাজা চৌধুরী সব প্রকার সাহায্য করেন। আবদুর রাজ্জাক খান সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। হিজলা সম্মেলনে কলকাতার সুজাত আলী এসেছিলেন। কৃষক সমিতির তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলন ডাঃ নলিনী দাশের সভাপতিত্বে কীর্তিপাশার নেহালপুরে অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাজ পাল, নারায়ণ ব্যানার্জী, রাধিকা ব্যানার্জী, জ্যোতির্ময় সেন সম্মেলনের উদ্যোক্তা ছিলেন। কৃষক সমিতির আন্দোলনে দক্ষিণ বরিশালে তেমন অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি। নেহালপুর সম্মেলনে কেশব চ্যাটার্জী জেলা সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন।

কৃষক সমিতির চতুর্থ বার্ষিক সম্মেলন

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে উজিরপুর থানার বারপাইকা গ্রামে জেলা কৃষক সমিতির চতুর্থ বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতা থেকে আগত আবদুল মোমিন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। রাকুদিয়ার কমরেড নজু ফরাজি এ সম্মেলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন। মুকুল সেন জেলা সমিতির সভাপতি ও প্রফুল্ল চক্রবর্তী সম্পাদক নির্বাচিত হন।

কৃষক সমিতির পঞ্চম বার্ষিক সম্মেলন

চাঁদসী ইউনিয়নের সাওড়া স্কুল প্রাঙ্গণে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে জেলা কৃষক সমিতির পঞ্চম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং পটুয়াখালীর হীরালাল দাশগুপ্ত সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে কৃষক সমিতির আজিজ সর্দার চাঁদসী ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

জেলা সমিতির ষষ্ঠ সম্মেলন হয়

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কাশীপুরে জেলা সমিতির ষষ্ঠ সম্মেলন হয়। গৌরনদীর পরে কৃষক আন্দোলনে মুলাদী অগ্রণী ছিল।

জেলা সমিতির সপ্তম সম্মেলন

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মুলাদীতে জেলা সমিতির সপ্তম সম্মেলন হয়। ময়মনসিংহের আলতাফ আলী সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন। হীরালাল দাশগুপ্ত ও বেনু দাশগুপ্ত যথাক্রমে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মাহিলারা গ্রামে কৃষক সমিতির অষ্টম সম্মেলন আহূত হয়েছিল। ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ রসুল সম্মেলনে এসেছিলেন। কিন্তু বরিশালের মুসলিম লীগ ও পুলিশের হুমকির জন্য সম্মেলন ভেঙ্গে যায়। হাজার হাজার কৃষক এ সম্মেলনে এসেছিল।

১৯৪৩ হতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বরিশাল কৃষক আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো-সাতলা বাগদার বাঁধ আন্দোলন, গলাচিপাতে সেচের আন্দোলন, তাঁতী ও মৎস্যজীবী আন্দোলন, হাট তোলা, কৃষি ঋণ আদায়, খাজনা ঋণ আদায় স্থগিত রাখার আন্দোলন, খেপুপাড়ার মগদের খাসমহল জমি নিয়ে আন্দোলন প্রভৃতি।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (প্রথম খÐ)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।