কলসকাঠির জমিদার পরিবার

Barisalpedia থেকে

কলসকাঠির জমিদারগণ আওরঙ্গপুর পরগণার জমিদার ছিলেন। আওরঙ্গপুর পরগণা দক্ষিণে সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পটুয়াখালী, মির্জাগঞ্জ ও আমতলী এ পরগণার অধীনে ছিল। এই জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতার নাম জানকী বল্লভ।


জমিদারি প্রতিষ্ঠা

শায়েস্তানগরের জমিদার রাম গোপালের কনিষ্ঠ পুত্র জানকী বল্লভ এ পরগণার প্রথম জমিদার। জানকী বল্লভের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাম গোবিন্দ জমিদারী আত্মসাৎ করে। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রী ভবানী দেবীর সহায়তায় জানকী বল্লভ ষড়যন্ত্রের হাত হতে রক্ষা পায়। তিনি অভয়নীল গ্রামের রামগোপালকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে সম্পত্তি হারানো জানকী বল্লভ ঢাকার জনৈক এতমাদ খাঁনের সাহচর্যে আসেন এবং তার সহায়তায় আওরঙ্গজেবের পুত্র আজিম-উস-সানের নিকট হতে আওরঙ্গজেবের পাঞ্জাযুক্ত সনদ প্রাপ্ত হয়ে ১৬৯৯ খৃৃস্টাব্দে আওরঙ্গপুর পরগণার জমিদারী লাভ করেন। জানকী বল্লভ প্রথমে পৈতৃক ভূমি বালিগাঁও গ্রামে বাস করতেন। ১৭০২ খৃৃস্টাব্দে তিনি বাকেরগঞ্জ থানার কলসকাঠি গ্রামে বাসস্থান নির্মাণ করেন। তিনি কলসকাঠিতে নীলমাধব বিগ্রহ স্থাপন করেন। জানকী বল্লভ ও তার উত্তরসূরিরা কলসকাঠিকে একটি সুন্দর নগরে পরিণত করেন। তাদের নির্মিত মন্দির ও ভবন এখনও বর্তমান আছে। এভাবেই কলসকাঠির জমিদার বাড়ির পত্তন।


জমিদারি সম্প্রসারণ

জানকী বল্লভ প্রথম পটুয়াখালীর লাউকাঠি গ্রামে আবাদ শুরু করেন। তিনি প্রথম দিন লাউকাঠিতে শালগ্রাম চক্র প্রাপ্ত হন এবং সেখানে মন্দির নির্মাণ করে পূজার বন্দোবস্ত করেন। ১৭৪৪ খৃৃস্টাব্দে বাংলা ১১৫১ সনে তিনি জমিদারী পুনরায় নিজ নামে বন্দোবস্ত নেন। বন্দোবস্তের শেষভাগে লেখা আছে, ’১১৫১ সালে বাদশাহ দীন মোহাম্মদ শাহ আল বন্দোবস্ত হুজুর চৌধুরীই শ্রী জানকী বল্লভ রায়”। আওরঙ্গপুর পরগণা নয় আনী ও সাত আনী-এ দু’ভাবে বিভক্ত ছিল। পটুয়াখালীতে কলকসকাঠির জমিদারদের কাছারি ছিল।


বংশ তালিকা

রাম গোপাল রায়ের দুই পুত্র রাম গোবিন্দ ও জানকী বল্লভ; জানকী বল্লভের চার পুত্র গঙ্গাধর, মুকুন্দ দেব ও বিদ্যাধর, রঘুনাথ; গঙ্গাধরের পুত্র সীতারাম, তার পুত্র সদাশিব, তার পুত্র হৃদয়কৃষ্ণ, তার পুত্র কালিপ্রসাদ, তার পুত্র ব্রজকান্ত, তার তিন পুত্র সুরেন্দ্র, নরেন্দ্র ও মনীন্দ্র; মুকুন্দ দেবের পুত্র রামকান্ত, তার পুত্র হরচন্দ্র, তার পুত্র গুরুদাস, তার পুত্র ব্রজকিশোর, তার পুত্র দুর্গাপ্রসন্ন; বিদ্যাধরের পুত্র রামশংকর, তার পুত্র কাশীনাথ, তার পুত্র রতনকৃষ্ণ, তার পুত্র বরদাকান্ত, তার পুত্র বিশ্বেশ্বর, তার চার পুত্র রাজেশ্বর, রতেœশ্বর, সিদ্ধেশর ও অমরেশ্বর।

কীর্তিমানগণ

এ বংশের বরদাকান্ত জেলার মধ্যে একজন বিখ্যাত লোক ছিলেন। তাঁর চেষ্টায় ১৮৯৫ খৃৃস্টাব্দে কলসকাঠি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি গণেশ পূজা উপলক্ষে কলসকাঠিতে মেলা শুরু করেন। ব্রজকান্ত, বিশ্বেশ্বর ও রাজেশ্বর রায় চৌধুরী প্রমুখ প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। কলসকাঠি গ্রামে তাদের নির্মিত অনেক সুরম্য ভবন ও মন্দির আছে। কলসকাঠি মহাবিদ্যালয় জমিদার বাড়িতে অবস্থিত।


উপসংহার

বর্তমানে জমিদার বাড়িটি পরিত্যক্ত। তারা জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের পরে ভারতে চলে যায়। একমাত্র অমরেশ্বর রায়ের জন্য মিনাক্ষী দেবী বাড়িতে অবস্থান করছেন।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (প্রথম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।