উইন্টল, জন (John Wintle)

Barisalpedia থেকে

১৮০০ খ্রিস্টাব্দের শেষ ভাগে স্পীডিংয়ের স্থলে জন উইন্টল বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত হন। তিনি ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি জজকোর্ট উদ্বোধন করেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দেই উইন্টল প্রথম জেলা জজের কাজ করতে শুরু করেন।


উইন্টলের উন্নয়ন কার্যক্রম

১৮০২ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি উইন্টল রাজস্ব বোর্ডের নিকট জেলার প্রশাসন ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে এক প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন। তার বিবরণে দেখা যায় ১৭৯৭ খৃৃস্টাব্দে এপ্রিল মাসের পূর্বে সিভিল কোর্টগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাকেরগঞ্জ সিভিল কোর্ট ১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ কোর্টের ক্ষমতা সীমিত ছিল। কর্নওয়ালিশের শাসন সংস্কার ও নতুন জেলার কাঠামো অনুযায়ী সিভিল কোর্টের কাজ ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দেই শুরু হয়। বাকেরগঞ্জ নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় নদীপথে যাতায়াত জটিল হয়ে পড়ে। তাই উইন্টলের ব্যবস্থাপনায় বাকেরগঞ্জ জেলা সদর দপ্তর ১৮০১ খৃৃস্টাব্দে বরিশালের স্থানান্তরিত করা হয়। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের মে মাস হতে ডিসেম্বরের মধ্যে উইন্টল বাকেরগঞ্জ হতে সদর দপ্তর বরিশালে স্থানান্তরিত করেন। উইন্টল বরিশাল শহরে জেলখানা, দেওয়ানী ও ফৌজদারী ভবন, বন্দর রোড, চকবাজার রোডে কয়েকটি পুল নির্মাণ ও পুকুর খনন করেন।


উইন্টলের বিবরণ

তিনি ১৮০২ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি বোর্ডের নিকট বরিশাল সম্পর্কে এক বিস্তারিত বিবরণ দাখিল করেন। উইন্টল তার বিবরণে বরিশালের জনগণের চরিত্র সম্পর্কে বল্গাহীন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এ জেলার নারী-পুরুষ রাগী, সামান্য কারণে খুন করতে পারে এবং চুরি-ডাকাতি তাদের পেশা। জনগণ ইংরেজ শাসনামলে শান্তিতে আছে এবং তারা হিন্দু বা মোগল যুদের তুলনায় অধিক স্বাধীনতা ভোগ করে। ষ্ট্যাম্প ফী প্রবর্তনের ফলে মামলাল সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ষ্ট্যাম্পের মূল্য খুব বেশি ছিল। ২ টাকা দাবি মামলার জন্য একজন অভিযোগকারীকে ষ্ট্যাম্প ফীসহ ৭ টাকা ৬ পয়সা খরচ করতে হতো। ওকালতনামার মূল্য ছিল ৪ পয়সা। উকিলেরা মামুলিভাবে মামলা পরিচালনা করত এবং তাদের মধ্যে কোন প্রতিভাশালী উকিল ছিল না। অপরাধ দমনের জন্য তিনি বিদ্যমান ১০টির সাথে আরো তিন বা চারটি থানা স্থাপনের প্রস্তাব করেন।

উইন্টলের বিবরণীতে জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উইন্টল লিখেছেন যে চন্দ্রদ্বীপ রাজা জয়নারায়ণ ব্যতীত এ জেলায় কোন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি নেই। নি¤েœ কয়েকজন সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হলো। তারা ২৫ বা ৩০ জনের বেশি ঢাল-তলোয়ার সজ্জিত বরকন্দাজ নিয়ে যাতায়াত করতেন। ১. মির হোসেন উদ্দিন চৌধুরী জমিদার, নাজিরপুর। ২. মির আসাদ আলী চৌধুরী জমিদার, শায়েস্তাবাদ। ৩. শিব নারায়ণ রায়- রায়েরকাঠি জমিদার, সেলিমাবাদ। ৪. রামদুলাল চক্রবর্তী- রহমতপুর তালুকদার, চন্দ্রদ্বীপ ৫. বাওয়ানী প্রসাদ চক্রবর্তী- রহমতপুর তালুকদার, চন্দ্রদ্বীপ ৬. কীর্তিচন্দ্র রায়- উজিরপুর তালুকদার, রতনদী কালিকাপুর। ৭. শিবচন্দ্র রায় ও কীর্তি চন্দ্র রায়- কলসকাঠি তালুকদার, আওরঙ্গপুর। ৮. খাজা মোহাম্মদ দায়েম ও খাজা চাঁদ তালুকদার, সলকমিনাহ তালুক। ৯. বাওয়ানী প্রসাদ রায় ব্যবসায়ী-সুতানরী।



তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী। ২০১০।