আরিফ চৌধুরী, মোহাম্মদ

Barisalpedia থেকে

মোহাম্মদ আরিফ চেীধুরীর পিতার নাম মোহাম্মদ এখলাস চৌধুরী। জন্ম আনুমানিক ১৯০১। মৃত্যু: ১৪ অক্টোবর ১৯৬৫ সাল। গ্রাম: উলানিয়া। থানা: মেহেন্দীগঞ্জ। জেলা: বরিশাল। সামন্তবাদী পিতা মোহাম্মদ এখলাস চৌধুরীর কনিষ্ঠ সন্তান মোহাম্মদ আরিফ চেীধুরী ছিলেন ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের নেতা। পরে পাকিস্তান আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগের উত্থানেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি এলাকায় ধনু মিয়া নামে পরিচিত ছিলেন।

খুব অল্প বয়সে পিতৃমাতৃহীন হওয়ায় ধনু মিয়া বিশাল জমিদারীর দায়িত্ব হাতে পান। কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে নানা-বাড়ী বিক্রমপুরেই দুটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কংগ্রেসের মনোভাব স্বচ্ছ না হওয়ায় তিনি চল্লিশের দশকে, তাঁর ও বয়স তখন চল্লিশ, মুসলিম লীগে যোগদান করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উৎসাহে নিজ গ্রামে ওলামায়ে হিন্দের পাল্টা সংগঠন জমিয়তে ওলামায়ে বাদ্দালাহ-র বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন নিজেরই অর্থে।

পাকিস্তান হবার পরপরই তিনি মুসলিম লীগের কঠোর সমালোচক হয়ে পড়েন। মুসলিম লীগের পাল্টা প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে তিান ১৯৪৮ সালেই করাচী যান এবং বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ১৯৫১ সালে তিনি প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য হতে পদত্যাগ করেন। তিনি মুসলিম লীগের স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিবাদে মুসলিম লীগের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আরিফ চৌধুরী ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম সংগঠক। ১৯৫১ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকা বারে আরিফ চৌধুরী ও অন্য পদত্যাগকারী সদস্যদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে। আরিফ চৌধুরী গণতন্ত্র উদ্ধারের আহ্বান জানান। পরবর্তী কালে মওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে কথা বলেন। শেখ মজিবুর রহমান সে সময় জেলে ছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরীর বাসায় বছর দু‘য়েকের মত ছিলেন। অন্যান্য নেতৃবৃন্দ যখন আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন, তিনিও তাদের সঙ্গে ছিলেন।

প্রচন্ড শীতের মধ্যে তিনি তাঁর শালটি রিকশাওয়ালাকে দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরতেন, এ দৃশ্যে তাঁর পরিবারের সদস্যরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। নানীর দেওয়া আংটি ছেলের হাত থেকে খুলে নিয়ে অভাবী মানুষের হাতে তুলে দিতে তিনি সামান্য দ্বিধাও করতেন না।

১৯৬৫ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর নামাজে জানাজায় শেখ মুজিবুর রহমান সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।


তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স: ঢাকা। ২০০৬।