আগরপুরের মিয়া পরিবার

Barisalpedia থেকে

বাবুগঞ্জের আগরপুর গ্রামের মিয়া পরিবার চন্দ্রদ্বীপ পরগণার অনেক ঐতিহ্যবাহী এক জমিদার পরিবার। এঁদের জমিদারি ছিল চন্দ্রদ্বীপ পরগণায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মচারীর জন্ম হয়েছে এই পরিবারে।

ইতিহাস

আগরপুর গ্রামের মিয়া পরিবার ও উজিরপুরের চাঙ্গুরিয়া সর্দারদের পূর্ব-পুরুষ হযরত শাহ সদর জাহান খান, হামিদ জাহান খান ও নাসির জাহান খান আফগানিস্তান হতে ভারতে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন। হযরত শাহ মোহাম্মদ নাসির জাহান খানের পুত্র শাহ মোহাম্মদ আশ্রাব জাহান পাঠানদের সেনাধ্যক্ষ ছিলেন। মোগলদের সাথে পরাজয়ের পর তিনি দিল্লী হতে উজিরপুর থানার চাংগুরিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তার প্রপৌত্র হানিফ জাহান খাঁ তালুক লাভ করে বাবুগঞ্জের আগরপুরে বসতি স্থাপন করেন। তার পৌত্র মুন্সি ছমিরউদ্দিন ও প্রপৌত্র হাজী কাজী ছাবের উদ্দিন চন্দ্রদ্বীপ ও অন্যান্য পরগণায় তালুক ক্রয় করে সম্পত্তি বৃদ্ধি করেন। পরবর্তীতে তিনি বরিশালের আগরপুর রোডে বাসগৃহ নির্মাণ করেন।

বংশলতিকা

আদিপুরুষ হজরত শাহ সদর জাহান খানের পুত্র হজরত শাহ মোহাম্মদ হামিদ জাহান খান। তদীয় পুত্র হজরহ শাহ মোহাম্মদ নাসির জাহান খান, তদীয় পুত্র শাহ মোহাম্মদ আশ্রাব জাহান খান, তদীয় পুত্র সরদার মাহমুদ আমিন খান, তদীয় পুত্র সরদার মোহাম্মদ হানিফ জাহান খান, তদীয় পুত্র মোহাম্মদ নকি খান, তদীয় পুত্র করিম উদ্দিন, মুন্সি ছমির উদ্দিন খান ও কায়েম উদ্দিন। করিম উদ্দিনের পুত্র মুন্সি হেলাল উদ্দিন, তদীয় পুত্র ফয়েজউদ্দিন মোহাম্মদ, তদীয় পুত্র আকতার উদ্দিন ও শহীদ আলতাফ উদ্দিন। আকতার উদ্দিনের পুত্র এন এম মাহবুব। ফয়েজউদ্দিন মোহাম্মদের দ্বিতীয় পুত্র শহীদ আলতাফ উদ্দিনের চার পুত্র হলেন এস.এম. মাহবুব, জে. এম. মাহবুব, এফ. এম. মাহবুব ও এ. এম. মাহবুব । পূর্বপুরুষ মোহাম্মদ নাকি খানের দ্বিতীয় পুত্র মুন্সি ছমির উদ্দিন খানের পুত্র হাজী কাজী ছাবের উদ্দিন। হাজী কাজী ছাবের উদ্দিনের চার পুত্র ওয়াহেদ উদ্দিন, সৈজদ্দিন, আফছার উদ্দিন ও কবিরউদ্দিন। ওয়াহেদ উদ্দিনের তিন পুত্র এনায়েত পীর, ফরিদ উদ্দিন ও আমির উদ্দিন। এনায়েত পীরের তিন পুত্র হেদায়েত, বসরাতুল মওলা ও আমাতুল মোর্শেদ। ফরিদ উদ্দিনের চার পুত্র গোলাম দস্তগীর, গোলাম পীর, গোলাম কাদের ও জে. এন. মোর্শেদ।


গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ

হাজী ছাবেরউদ্দিনের প্রথম পুত্র ওয়াহেদউদ্দিন বরিশালের মুসলমানদের মধ্যে প্রথম হেড পোষ্টমাষ্টার ছিলেন। তার দ্বিতীয় পুত্র সৈজুদ্দিন বরিশাল বারের উকিল ছিলেন। তার কনিষ্ঠ পুত্র মৌলভী আফছার উদ্দিন (১৮৬৪-১৯২৩) জেলার দ্বিতীয় মুসলমান গ্র্যাজুয়েট ও দ্বিতীয় মুসলমান ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট। ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ খেপুপাড়ার কলোনাইজেশন অফিসার থাকাকালে অনেক জনকল্যাণমুলক কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেন। এ পরিবারের গোলাম দস্তগীর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, জনাব এনায়েত পীর ও গোলাম মাওলা জেলা জজ এবং মাহবুবুল ইসলাম উপসচিব ছিলেন। আলতাফ উদ্দিন ১৯৫০ খৃৃস্টাব্দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ করার সময় শহীদ হন। আশ্রাব জাহান খানের পৌত্র হাসিম জাহান ও কাসিম জাহান খান চাঙ্গুরিয়ায় বাস করত। হাসিম জাহান খানের বংশধর মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশ সরকারের, যুগ্মসচিব ছিলেন।


উপসংহার

এই পরিবারের সদস্যরা অতীতে জমিদারিতে যেমন কুলীন ছিলেন তেমনি বিংশ শতকের শিক্ষা ও প্রতিপত্তিতেও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।


তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।