দিগ্বিজয় নাথ
ঐতিহাসিকভাবে দিগ্বিজিয় নাথ ছিলেন সপ্তদশ শতকীয় ভুলুয়ার এক ব্রাহ্মণ পন্ডিত। চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাসে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব কারণ তাকে নিয়ে যে দ্বন্দ্ব সূত্রপাত হয় তা ঘিরে রাজা রামচন্দ্র বসুর সাথে স্পতদশ শতকের গোড়ার দিকে ভুলুয়ার রাজা লক্ষণ মাণিক্যের মাঝে এক বড় যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছিল।
ভুলুয়ার রাজা লক্ষ্মণ মানিক্যের সাথে চন্দ্রদ্বীপ রাজাদের সন্দ্বীপ ও হাতিয়া নিয়ে বিরোধ ছিল। তাদের এই বিরোধ এক ব্রাহ্মণ পন্ডিতকে নিয়ে চরমে পৌঁছে। ব্রাহ্মণের নাম দিগ্বিজয় নাথ। তিনি ভুলুয়ার রাজার পুরোহিত ছিলেন। দিগ্বিজয় তার পুত্রসহ শিকারপুরে মন্দিরে পূজা দিতে আসেন। কন্দর্প রারায়ণ তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। রাজার আহ্বানে তিনি বাবুগঞ্জের খানপুরায় বসতি স্থাপন করেন। তার বাড়ি এখনও গুরুর ভিটা নামে পরিচিত। বর্তমানে অধ্যাপক আবদুল মাজেদ হাওলাদারের বাড়ি এই গুরুর ভিটার ওপর অবস্থিত। লক্ষণ মানিক্য তার গুরুকে বাকলায় রেখে দেয়ার জন্য কন্দর্প নারায়নের ওপর অসন্তুষ্ট হন। তার মৃত্যুর পর লক্ষ্মণ মানিক্য পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়ে দিগ্বিজয় নাথ, তার পুত্র, গ্রামের সকল লোক ও তাদের মালামাল লুট করে ভুলুয়ায় নিয়ে যান। এই ঘটনা ভুলূয়ার লুট নামে পরিচিত। রামচন্দ্র ঘটনা শুনে খুব রাগন্বিত হলেন। তিনি দূত মারফত লক্ষ্মণ মানিক্যকে ব্রাহ্মণ ও অন্যান্য লোককে ফেরত দেয়ার জন্য পত্র প্রেরণ করেন। লক্ষণ মানিক্য বাকলা রাজার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তখন রামচন্দ্র তার সেনাপতি রঘুনন্দ ফৌজদার, নানা ফার্নান্ডেজ, জন গেরী, রামেশ্বর দত্ত, ভগবান দাশ, মদন সিংহ ও শরীররক্ষক রামমোহন মালের নেতৃত্বে এক বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে ভুলুয়া বা বর্তমান নোয়াখালী যাত্রা করেন।
ভুলুয়া লুটের প্রতিশোধ নেযার জন্য রামচন্দ্র দুই দল পর্তুগীজ, একদল বাঙালী ও একদল বকসারী সৈন্য নিয়ে লক্ষ্মণ মানিক্যের রাজধানীর অনতিদূরে শিবির স্থাপন করেন। লক্ষ্মন মানিক্যের পিতা ছিলেন রাজবল্লভ। লক্ষ্মণমানিক্য একজন বীরযোদ্ধা ও বারভূঁইয়ার অন্যতম নায়ক ছিলেন। তিনি রামচন্দ্রের আগমনের কথা শুনে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন। দুই দলে যুদ্ধ শুরু হলো। রামচন্দ্রের সৈন্যরা লক্ষ্মন মানিক্যকে ঘিরে ফেলে। যুদ্ধ করতে করতে লক্ষ্মণ মানিক্য রামচন্দ্রের নৌকায় উঠে পড়েন এবং হঠাৎ পড়ে যান। রামমোহন মাল লক্ষণ মানিক্যকে শৃংখলাবদ্ধ করে ফেলেন। ভুলূয়ার বাহিনী পরাজয়বরণ করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়। রামচন্দ্র, মদন সিংহ, ফার্নান্ডেজ ও রামমোহন মাল লক্ষ্মন মানিক্যকে বন্দী করে বাকলায় নিয়ে আসেন। ভুলুয়া কিছুদিনের জন্য বাকলা রাজার অধীনে চলে যায়।
তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।