জোছন (ঘোষ) দস্তিদার
জোছন দস্তিদার বাংলা থিয়েটারের ক্ষেত্রে সমাজসচেতন শিল্পী ও নাট্যকার। তাঁর আদি নিবাস বর্তমান বানারীপাড়ার গাভা গ্রামে। কলকাতায় জন্ম ১৬ জুন ১৯৩১ তারিখে। পিতা লক্ষীচরণ; মাতা মাধুরী। জোছন দস্তিদারের মৃত্যু ১৬ জুলাই ১৯৯৮।
জোছন দস্তিদার কলকাতা মিত্র ইনস্টিটিউশনে ছাত্রজীবন শুরু। সরকারি আর্ট কলেজের স্থাপত্যকলার ¯œাতক। দাঙ্গাবিরোধী বাম সংগঠন গঠনের মাধ্যমে ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে রাজনৈতিক জীবনের শুরু। কমিউনিস্ট নেতা আবুল বাসারের সান্নিধ্যে এসে কমিউনিজমে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। ভবানীপুর আর্ট অ্যান্ড কালচার সংস্থায় প্রথম অভিনয় করেন। ‘বৈশাখী’ তাঁর হাতে গড়া প্রথম নাট্যদল। পরে ‘রূপান্তরী’ ও শেষে ‘চার্বাক’ এই দুটি নাট্যসংস্থার তিনিই প্রধান ছিলেন। ‘অন্তরীণ’ তাঁর ২১ বছর বয়সে লেখা প্রথম নাটক। তাঁর লেখা নাটক ‘দুই মহল’ পরিচালনা করে তিনি নাট্যজগতে প্রথম পরিচিত হন (১৯৫৪)। বাম নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকায় ১৯৬৫-৬৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে কারাবাস করতে হয়েছে। নাটক পরিচালনাই শুধু নয়, দলের ছেলে মেয়েদের নিজের হাতে কস্টিউম ডিজাইন, সেট ডিজাইন শেখাতেন। গান লিখতেন। টিভি ধারাবাহিক পরিচালনার ক্ষেত্রেও তাঁর দক্ষতা ছিল। তাঁর পরিচালিত প্রথম সিরিয়াল ‘তেরো পার্বণ’। এ ছাড়াও করেছেন ‘উড়নচন্ডী’, ‘সেই সময়’, ‘নাচনি’, ‘ ‘সপ্তর্ষি’ প্রভৃতি। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বড়ো পর্দার জন্য ‘প্রাগৈতিহাসিক’ নামে একটি ছবি নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটক: ‘বিংশোত্তরী’, ‘স্বর্ণগ্রন্থি’, ‘কর্ণিক’, ‘অমর ভিয়েতনাম’, ‘আজকের স্পার্টাকাস’ ‘গদ্য পদ্য প্রবন্ধ’, ‘এ এক ইহিহাস’ প্রভৃতি। বহু একাঙ্ক নাটক ও পোস্টার নাটক লিখে প্রযোজনা ও অভিনয় করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য পোস্টার নাটক ‘চোট দিন’ ও ‘শ্মশানে তাত্ত্বিক’। শ্রুতি নাটক রচনাতেও তাঁর দক্ষতা ছিল। মৃণাল সেনের ‘পদাতিক’ ছবি ছাড়া আরও দু-একটিতে তিনি অভিনয়ও করেছেন। শেষজীবনে ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হবার পরও অনেক ছবি এঁকেছেন, লিখেছেন অনেক শ্রুতি নাটক। অভিনেত্রী চন্দ্রা তাঁর স্ত্রী এবং অভিনেত্রী খেয়ালি তাঁর কন্যা।
তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান।