চাওড়ার মাটির দুর্গ, আমতলী
মোগল যুগের শেষ দিকে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ অঞ্চলের এক অভিশাপের নাম পর্তুগিজ-মগ লুণ্ঠন। এই লুটেরা সম্প্রদায়ের বারংবারের ভয়াবহ আক্রমণে এক সময়ে বাংলার নিম্নাঞ্চল অর্থাৎ বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের দক্ষিণ এলাকায় জনশূন্য বিরান ভুমিতে পরিণত হয়। এই সময়কালে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ তথা বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে মোগল শাসকদের উদ্যোগে পর্তুগিজ ও মগ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে বিশেষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে চন্দ্রদ্বীপ বাকলার বিভিন্ন স্থানে গড়, কেল্লা এবং দুর্গ নির্মান করে দুর্দমনীয় জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত এবং পাল্টা আক্রমণ করে তাদের পরাজিত করার চেষ্টা করা হয়। আমতলীর চাওড়া ইউনিয়নের মাটির দুর্গটিও একই উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল। আমতলী সংলগ্ন খেপুপাড়ায় বিলীন হয়ে যাওয়া একটি পর্তুগিজ দুর্গ থাকার কথাও জানা যায় এবং সেই কারণে আমতলী এলাকায় পর্তুগিজ জলদস্যুদের দমনের কারনে একটি অস্থায়ী দুর্গ প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত বলে প্রতীয়মান। তবে ঠিক কোন সময়ে কে বা কারা এই মাটির দুর্গটি তৈরি করেছিলো তা জানা যায়নি। তবে বাংলার নিম্নাঞ্চলে মগ ও পর্তুগিজদের দমন করার ব্যাপারে যার অবদান সব থেকে অধিক বলে মনে করা হয়, সেই শায়েস্তা খান এবং তার পুত্র বুজুর্গ উমেদ খান বা তার সময়কালের অন্য কোনো মোগল অমাত্য এই দুর্গটি তৈরি করেছিলেন বলে ধারনা করা অমূলক নয়। বুজুর্গ উমেদপুর পরগনা সৃষ্টিও সেই দিকেই ইঙ্গিত প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এই প্রকার বেশ কয়েকটি দুর্গের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত। এই প্রসঙ্গে মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের দমনার্থে ঝালকাঠি জিলার রাজাপুরের ইন্দ্রপাশা মাটির দুর্গের কথাও উল্লেখ করা যায়।
তথ্যসূত্র: সাইফুল আহসান বুলবুল। বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন। গতিধারা, ঢাকা। ২০১২।