গ্যারেট (Garrett)
মি. গ্যারেট ১৮২৭-৩০ পর্যন্ত বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বাকেরগঞ্জের জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের মধ্যে মি. গ্যারেট জেলার উন্নয়নের জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি বরিশালে ইংরেজ শিক্ষা প্রবর্তন করেন। তিনি ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ বরিশালে তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। গ্যারেট শহরে পুকুর খনন ও রাস্তা নির্মাণ করেন। সরকার তাকে শহর উন্নয়নের জন্য ১৫০০ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন এবং তিনি চাঁদা পেয়েছিলেন ৮২৫ টাকা। তার সময় শহরে পাকা রাস্তা ছিল ৮ মাইল। গৌরনদী থানা নদীতে ভেঙ্গে গেলে তিনি ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ১৫ মার্চ থানা পালর্দী বন্দরে প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। গ্যারেট সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য বিশেষ সচেষ্ট ছিলেন। তার সময় বরিশালের সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চের এক পত্রে তিনি লিখেছেন, “আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ যে ভয়াবহ সতীদাহ প্রথা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি আনন্দের সাথে বলছি যে, এ অঞ্চলে এ প্রথা বন্ধ করতে কোন অসুবিধা হয়নি। সকল ম্যাজিষ্ট্রেটের জন্য এ এক মানসিক শান্তি।” তিনি ধার্মিক ছিলেন কিন্তু মানবতাবাদী ছিলেন না। ১৮২৭ খৃৃস্টাব্দে সরকারের সচিবের নিকট লিখিত এক পত্রে তিনি এ জেলার জনগণকে মামলাবাজ বলেছেন। কিন্তু তার এ মন্তব্য ভিত্তিহীন। ইংরেজদের আগমনের পূর্বে বাকলার জনগণ মামলাবাজ ছিল না। কোম্পানি সৃষ্ট ভূমিব্যবস্থা এবং তাদের শোষণ এ জেলার মুষ্টিমেয় লোককে মামলায় জড়িত করেছে। এ জন্য ইংরেজ শাসনই দায়ী। জনগণ নয়। গ্যারেট একজন ব্যাপ্টিষ্ট ধর্ম প্রচারক ছিলেন। তিনি নমঃশূদ্রদের মধ্যে ধর্ম প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। এ নিয়ে কলিকাতা কাউন্সিল প্রশ্ন তোলে। তাই গ্যারেট ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে ব্যাপ্টিষ্ট গির্জায় যোগ দেন। মি. বেভারিজ তাকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, মিঃ গ্যারেট একজন কর্মনিষ্ঠ এবং জনদরদী কর্মচারী ছিলেন এবং শহরের উন্নতি ও প্রথম ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সাহায্যের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।”
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।