গোলাম মুস্তাফা

Barisalpedia থেকে

গোলাম মুস্তাফা বাংলাদেশের অভিনয় জগতে এক কিংবদন্তীর নাম। তাঁর পিতার নাম মৌলবী মোঃ ইসমাইল। জন্ম: ২ মার্চ ১৯৩৫ সাল। মৃত্যু: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৩। গ্রাম: দপদপিয়া, উপজেলা: নলছিটি, জেলা: ঝালকাঠি।

লেখাপড়া ও চাকুরি

গোলাম মুস্তাফা খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৫০ সালে মেট্রিক, দৌলতপুর বি এল কলেজ থেকে ১৯৫২ সালে আই.এ. এবং জগন্নাথ কলেজ ঢাকা থেকে ১৯৫৫ বি.এ. পাশ করে প্রথমে কর্মজীবন শুরু করেন স্কুল শিক্ষক হিসেবে। পরে ‘মে এ্যান্ড বেকার’ কোম্পানিতে কিছুদিন চাকুরির পর হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরির শ্রমমল্যাণ অফিসার হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। ছাত্র জীবন থেকে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে জড়িত।

অভিনয় ও সাংস্কৃতিক জীবন

গোলাম মুস্তাফা তাঁর অভিনয় শুরু করেন বি.ডি. হাবীবুল্লাহ রচিত “পল্লী মঙ্গল” মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে ১৯৪৫ সালে। একই বছর ‘টিপু সুলতান’ নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। তাঁর প্রথম বেতার নাটক প্রচারিত হয় ১৯৫৬ সালে। ১৯৫৬-৫৭ সালে বড় ভাই পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এ কে এম মুসার মাধ্যমে সরকারি প্রচারচিত্র ‘ওয়ান এরর অব ল্যান্ড’-এ অভিনয় করেন। ছবিটি ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়। মুক্তিপ্রাপ্ত ১৯৬০ সালে এহতেশাম কর্তৃক পরিচালিত “রাজধানীর বুকে” ছবিতে ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দর্শক-পরিচালকের মাঝে সাড়া জাগিয়ে তোলেন। এরপর নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন অনেক ছবিতে যেমন: বন্ধন (১৯৬৪), নাচঘর (১৯৬৩), ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো (১৯৬৬), বেগানা (১৯৬৬), চাওয়া পাওয়া (১৯৬৭), সোনার খেলনা (১৯৭৫) ইত্যাদি। ভিলেন হিসেবে অভিনয় করেন অনেক ছবিতে যেমন: চান্দা (১৯৬২), হারানো দিন (১৯৬১), কারওয়া (১৯৬৪), নদী ও নারী (১৯৬৫), কার বউ (১৯৬৬), বলাকা মন (১৯৭২), রক্তাক্ত বাংলা (১৯৭৩), ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩), শ্লোগান (১৯৭৩), কে আসল কে নকল (১৯৭৫), সূর্যগ্রহণ (১৯৭৫), সূর্যকন্যা (১৯৭৬), পিঞ্জর (১৯৭৭), সারেং বৌ (১৯৭৭), ফকির মজনু শাহ (১৯৭৮), সূর্য সংগ্রাম (১৯৭৮), সখি তুমি কার (১৯৮০), এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী (১৯৮০), আনার কলি (১৯৮০), স্বামী (১৯৮১), কলমীলতা (১৯৮১), চন্দ্রনাথ (১৯৮৪), শুভদা (১৯৮৬), রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত (১৯৮৮) ইত্যাদি। গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তিকার হিসেবেও দু’বাংলায় নন্দিত। তাঁর আবৃত্তির ক্যাসেটের মধ্যে রয়েছে ‘গাহি সাম্যের গান’, ‘উদ্যান ও বিবিধ কুসুম’ প্রভৃতি।

গোলাম মুস্তাফা অভিনীত দুই শতাধিক চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। তিনি কল্পবিজ্ঞান, গল্প এবং চলচ্চিত্র বিষয়ক বহু প্রবন্ধ লিখেছেন। বেতার ও টিভিতে তাঁর রচিত বেশ কিছু সংখ্যক নাটক প্রচারিত হয়েছে। কর্নেলিয়া মেইগ্রস এর ‘এ ফেয়ার উইন্ড টু ভার্জিনিয়া’ তিনি অনুবাদ করেছেন।

পারিবারিক জীবন

তাঁর স্ত্রীর নাম হোসনে আরা বিজু। উল্লেখ্য যে হোসনে আরা বিজুর প্রথম স্বামী ছিলেন বরিশালের আরেক নন্দিত পুরুষ ঔপন্যাসিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম। শামসুদ্দীন আবুল কালামের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে তিনি গোলাম মুস্তাফাকে বিয়ে করেন। অভিনেত্রী ক্যামেলিয়া মুস্তফা মূলত শামসুদ্দীন আবুল কালামের মেয়ে, গোলাম মুস্তাফার নন। গোলাম মুস্তাফার মেয়ে সুবর্না মুস্তফা বাংলাদেশের অভিনয় জগতে এক রত্ন।


প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা

তিনি ২০০১ সালে একুশে পদক লাভকরেন। এছাড়া তিনি তিন বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিনবার জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুইবার সাইট এন্ড সাউন্ড চলচ্চিত্র পুরস্কার, জাতীয় টিভি পুরস্কার, সিনেমা চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাসস পুরস্কার, আবদুল জব্বার খান স্বর্ণপদক, মাবুবুল্লা জেবুন্নেসা কল্যাণ ট্রাস্ট স্বর্ণপদক, টেনাশিনাস পদক, বরিশাল বিভাগ সমিতি শেরে বাংলা পদক সহ আরও বিভিন্ন পদক, পুরস্কার ও সংবর্ধনা লাভ করেন।

মৃত্যু

২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ সালে এই নন্দিত অভিনেতা ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন।


তথ্যসূত্র: ১। রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬। ২। বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান।