কাত্যায়নী মন্দির, মাধবপাশা

Barisalpedia থেকে

কিংবদন্তীমতে চন্দ্রদ্বীপ রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা দনুজমর্দন তাঁর বন্ধু চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্যের সহায়তায় ক্যাতায়ণী দেবীর মূর্তি সমুদ্রবক্ষ উদ্ধার করেন এবং দেবীর আশীর্বাদস্বরূপ চন্দ্রদ্বীপের রাজত্ব লাভ করেন। এ কারণে এই রাজপরিবারে কাত্যায়নী দেবীর প্রতি বিশেষ দুর্বলতা ও কৃতজ্ঞতা রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মাধবপাশা কাত্যায়নী মন্দির। মন্দির থেকে চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মূর্তিদ্বয় একসময় হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রশাসনিক তৎপরতায় ক্যাতায়নী মূর্তি উদ্ধার করে ঢাকা যাদুঘরে স্থানান্তরিত করা হয়। এই মন্দিরের সাথে সম্পর্কিত কিংবদন্তীটি বর্ণনাযোগ্য। বিক্রমপুরের চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য বাল্যকাল থেকে দেবী ক্যাতায়ণীর উপাসক ছিলেন। বিয়ের উপযুক্ত হওয়ার পর জনৈকা কন্যা তার জন্য পছন্দ করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে কন্যার পিত্রালয়ে উপস্থিত হওয়ার পর চন্দ্রশেখর তার হবু পত্নীর নাম ভুবনেশ্বরী জেনে তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বিয়ে বাসর থেকে পলায়ন করে। আরাধ্য দেবীর সঙ্গে হবু স্ত্রীর নামের মিল তার জন্য লজ্জ্বাজনক বলে মনে হয় এবং সে সমুদ্রে আত্মাহুতি দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ক্ষুদ্রাকার একটি নৌকায় আরোহণ করে। পথিমধ্যে হঠাৎ জনৈকা তরুণী তাকে আত্মহত্যার পরিকল্পনা ত্যাগ করতে বলায় চন্দ্রশেখর বিষ্ময়াভূত হয়ে পড়ে। ঘোর কেটে যাওয়ার পর সে কন্যার পরিচয় এবং নিষেধের কারন জিজ্ঞেস করে। তরুণী চন্দ্রশেখরের কাছে নিজেকে একজন জেলে কন্যা হিসেবে পরিচয় দেয় এবং বলে যে স্ত্রীলোক মাত্রই ক্যাতায়ণীর অংশ, অতএব তার নামে হবু স্ত্রীর নাম থাকা দোষণীয় কোনো ব্যাপার নয়। এই কথায় চন্দ্রশেখর ঐ তরুণীর পরিচয় জানার জন্য ভীষন রকমের উদগ্রীব হয়ে পড়ে এবং আর সেটা জানা না হলে সে আত্মহত্যা করবে বলে জানায়। তরুণী রূপধারী ক্যাতায়নী দেবী তখন আত্মপরিচয় দিয়ে চন্দ্রশেখরকে আত্মহননের পথ থেকে নিবৃত্ত করে এবং তাকে ঐ কন্যার নাম পরিবর্তন করে বিয়ে করার উপদেশ দেয়। এছাড়া দেবী তাকে অতি শীঘ্র সুগন্ধা নদীর মোহনায় একটি বিশাল দ্বীপের মতো ভূ-খণ্ড উত্থিত হওয়ার কথা এবং সেই ভূখ- তার নামানুসারে পরিচিত হবে বলে জানায়। দেবী আরো বলে যে, চন্দ্রশেখর যেন সেই সুগন্ধা নদীতে ডুব দিয়ে ক্যাতায়নী এবং মদন গোপালের মূর্তি উত্তোলন করে এবং সেখানে তার রাজত্ব স্থাপন করে। দেবীর আদেশ মতো চন্দ্রশেখর তার হবু পত্নীর নাম পরিবর্তন করে তাকে বিয়ে করে এবং নির্দিষ্ট দিন এবং স্থানে ডুব দিয়ে মূর্তি উদ্ধার করে সে তার প্রিয় সঙ্গী দনুজমর্দনসহ ক্রমশঃ দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে দেবী কথিত দ্বীপে রাজত্ব স্থাপন করে।

Image 11.jpg


কাত্যায়নীর এ মূর্তিটি অষ্ট হস্তবিশিষ্ট। কৃষ্ণ পাথরের মূর্তি মহিষমর্দিনীর অষ্ট হস্তের বিবরণ : ১. চক্র, ২. অসূরের বুকে নিক্ষিপ্ত ত্রিশূল, ৩. তূণ থেকে তোলা তীর, ৪. তরবারী, ৫. তর্জনী মুদ্রা, ৬. ঢাল, ৭. ধনুক এবং ৮. অসূরের চুল। কাত্যায়নী মূর্তিটি দশ অথবা এগারো শতকে নির্মিত বলে মনে হয়।


তথ্যসূত্র: সাইফুল আহসান বুলবুল। বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন। গতিধারা, ঢাকা। ২০১২।