অশ্বিনীকুমার গঙ্গোপাধ্যায়

Barisalpedia থেকে

জন্ম ১৮৮৮। মৃত্যু ১৬ নভেম্বর ১৯৮৫। জন্মস্থান নথুল্লাবাদ, ঝালকাঠি। স্বাধীনতা সংগ্রামী। কুটুম্বিতার সূত্রে অশ্বিনীকুমার দত্তের সংস্পর্শে এসে স্বাদেশিকতায় উদবুদ্ধ হন। ঝালকাঠি স্কুলের দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় ১৯০৬ খ্রি. তেলের কলের এক ইংরেজ মালিকের অপমানকর ব্যবহারে অপমানিত বোধ করে সতীর্থ কয়েকজনের সঙ্গে মিলে তাঁকে মারধোর করে তাঁর বন্দুক কেড়ে নেওয়ার অপরাধে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা শিক্ষা বিভাগের নির্দেশে স্কুল থেকে বিতাড়িত হন। এরপর আর কখনো স্কুলমুখো হননি। বরিশালের বিশিষ্ট বিপ্লবী স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতীর ¯েœহধন্য তিনি স্বদেশবান্ধব সমিতিতে যোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯০৮ খ্রি. দুর্ভিক্ষ কবলিত যুক্তপ্রদেশ ও ওড়িশায় ত্রাণকার্যে অনেকদিন নিযুক্ত ছিলেন। সরকারের অত্যাচারে স্বদেশবান্ধব সমিতি বন্ধ হয়ে গেলে গুপ্ত সমিতির কাজে তিনি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। কিছুদিন তিনি বরিশালের দত্তপাড়া গ্রামের আশ্রম বিদ্যালয় এবং ঝালকাঠি জাতীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯১৩ খ্রি. বর্ধমান ও মেদিনীপুরের বন্যাবিধ্বস্ত অঞ্চলে ত্রাণকার্য পরিচালনা করতে ঝালকাঠি থেকে একদল স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সেখানে যান। ১৯১৪ খ্রি. কলকাতায় এসে নিউ ইন্ডিয়ান স্কুলে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হন। অবসর সময়ে রামমোহন লাইব্রেরীতে একটি কাজ জুটিয়ে নেন। অক্টোবর ১৯১৫ খ্রি. ১০৯ ধারায় গ্রেপ্তার হন। কিছুদিন পর তাঁকে শিবপুর ডাকাতি মামলায় জড়িয়ে আসামি হিসাবে কৃষ্ণনগরে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মামলার বিচারে বেকসুর খালাস পেলেও দু-দিন পরই রাজশাহি জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৯১৬ খ্রি. থেকে অন্তরীণ থাকেন। ১৯২০ খ্রি. মুক্তি পেয়ে রাজশাহির চারঘাটে পাটের ব্যাবসা শুরু করেন। ১৯২১ খ্রি. বরিশালে যে প্রাদেশিক সম্মেলন হয় তিনি তাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন ভাইস ক্যাপ্টেন ছিলেন। তাঁরই চেষ্টাতে ঝালকাঠিতে একটা মহকুমা কংগ্রেস অফিস খোলা হয়। তিনি ও ছৈমুদ্দিন খাঁ তার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯২৩ খ্রি. তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস সমিতির সভ্য ও সম্পাদক পদ লাভ করেন। ১৯২৪ খ্রি. গ্রেপ্তার হয়ে ১৯২৮ খ্রি. কারামুক্ত হন। ১৯৩০ খ্রি. রাজদ্রোহের অভিযোগে এক বছর কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৩১ খ্রি. আবার গ্রেপ্তার হয়ে রাজবন্দি হিসাবে জানুয়ারি ১৯৩৮ খ্রি. পর্যন্ত বিভিন্ন জেলে আটক থাকেন। ১৯৩৯ খ্রি. সুভাষচন্দ্রে ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগ দেন। ১৯৪০ খ্রি. সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে যে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন হয় তাতে তিনি যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৪৭ খ্রি. দেশ স্বাধীন হবার পর বেঙ্গল প্রভিনশিয়াল কংগ্রেস কমিটির অফিসের কাজ চালাতে তিনি কলকাতা আসেন। এখানেই বেহালার নিজস্ব বাড়িতে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান।