সুধীররঞ্জন সেন পঞ্চতীর্থ

Barisalpedia থেকে

সুধীররঞ্জন সেন আয়ুর্বেদশাস্ত্রের অধ্যাপক ও বিখ্যাত গীতাভাষ্যকার ছিলেন। তিনি উজিরপুরের অন্তর্গত গুঠিয়া গ্রামে ১৩ এপ্রিল ১৯০৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যু ৬ মে ১৯৬২।

বিশিষ্ট সমাজসেবী ও বরিশালের মহেশচন্দ্র উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাসম্পাদক বিলাসচন্দ্র মহাশয় তাঁর পিতা ছিলেন। মাতার নাম নিস্তারিণী।

কলকাতার সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে এল.এম.এস. পাশ করেন। ডা. সুন্দরীমোহন দাসের সংস্পর্শে এসে রাজনীতিতে প্রেরণা পান। ১৯২১ খৃস্টাব্দে মহাত্মাজির অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের হাতে নির্যাতিত হন ও কারাবরণ করেন। ১৯৩০ খৃস্টাব্দে লবণ সত্যাগ্রহে অংশ নেওয়ায় পুনরায় কারারুদ্ধ হন। ১৯৪২ খৃস্টাব্দে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় তাঁকে স্বগৃহে অন্তরীণ রাখা হয়। এ ছাড়া দীর্ঘদিন তাঁকে আত্মগোপন করে থাকতে হয়েছে।

কবিরাজ শ্যামাদাস বাচস্পতির প্রিয় ছাত্ররূপে আয়ুর্বেদশাস্ত্র অধ্যয়ন করে ‘আয়ুর্বেদশাস্ত্রী’ ও ‘আয়ুর্বেদাচার্য’ উপাধি লাভ করেন। কবিরাজি করার সঙ্গে সঙ্গে ‘সাংখ্য’, ‘বেদান্ত’, ‘পুরাণ’, ‘উপনিষদ’ ও ‘ষড়দর্শন’ ও তীর্থ পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হন ও ‘পঞ্চতীর্থ’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর বেদের ব্যাখ্যা, গীতাভাষ্য প্রভৃতি তৎকালীন বিদ্বৎসমাজে বিশেষ সমাদৃত ছিল। বিচারপতি রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের গৃহে নিয়মিত গীতাভাষ্য ও গীতাপাঠ করেন। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে নিয়মিত গীতাপাঠ ও গীতাভাষ্য প্রচার করত। তাঁর রচিত অসংখ্য আধ্যাত্মিক প্রবন্ধ তৎকালীন ‘ভারতবর্ষ’, ‘দেশ’, ‘অমৃত’, ‘আনন্দ বাজার’, ‘যুগান্তর’ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আধ্যাত্মিকজীবনে তিনি ব্রহ্মর্ষি শ্রীশ্রীসত্যদেবের অতি প্রিয় শিষ্য ছিলেন। বঙ্গীয় আয়ুর্বেদ পরিষদেরও তিনি সভাপতি ছিলেন। তিনি যামিনীভূষণ অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ কলেজ (বর্তমানে জে.বি. রায় স্টেট আয়ুর্বেদ কলেজ) ও শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠ (বর্তমানে পোস্ট গ্রাজুয়েট আয়ুর্বেদ কলেজ) এর ভেষজ বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হয়ে আমৃত্যু ওই দুই কলেজে সুনামের সঙ্গে অধ্যাপনা করেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে বেদান্ত দর্শন ও গীতিভাষ্য প্রচারের জন্য তিনি নিমন্ত্রিত হয়ে যেতেন। দেশবিভাগের পরে ছিন্নমূল উদবাস্তুদের পুনর্বাসন কমিটির ২৪ পরগনা বেলঘরিয়া অঞ্চলের সভাপতি হয়ে তিনি সপরিবারে আমৃত্যু ভাড়াবাড়িতে বাস করে গেছেন। তাঁর পরিধেয় ছিল মোটা খদ্দরের ধুতি ও পাঞ্জাবি।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান