শান্তিসুধা ঘোষ

Barisalpedia থেকে

বিশিষ্ট শিক্ষাব্রতী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী শান্তিসুধা ঘোষের (১৮.৬.১৯০৭ - ৭.৫.১৯৯২) মূল নিবাস বানারীপাড়ার গাভা গ্রাম। তবে জন্ম বরিশালের আলেকান্দায়। পিতা বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের অধ্যাপক ক্ষেত্রনাথ ঘোষ; মাতা অন্নদাসুন্দরী কবি ছিলেন।


শিক্ষা

মাতার কাছে শান্তিসুধার শিক্ষা শুরু। ৬ বছর বয়সে ব্যাপটিস্ট মিশন পরিচালিত ‘ছোট মেমের স্কুল’- এ ভরতি হন। পরে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্ম মহিলা স্নেহলতা দাসের সদর বালিকা বিদ্যালয় থেকে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতায় ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়ে পড়েন। অসুস্থতার জন্য কলকাতা ছেড়ে শিক্ষালয়ে পড়েন। অসুস্থতার জন্য কলকাতা ছেড়ে বরিশালে গিয়ে হাইস্কুলে উন্নত সদর বালিকা বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে ভরতি হন। সেখান থেকে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিক পাশ করে ব্রজমোহন কলেজে ভরতি হন। তাঁর সহপাঠিনী ছিলেন মনোরমা গুহ ও হেমলতা রায়। তাঁদের নিয়েই বি.এম. কলেজে সহশিক্ষার প্রবর্তন হয়। আই.এ. পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ওই কলেজ থেকে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে গণিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এ. পাশ করেন। স্কুলে পড়ার সময়ই স্বদেশি আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজিকে পত্র লেখেন। সে চিঠির উত্তরও পেয়েছিলেন। ভ্রাতা সত্যব্রতর মাধ্যমে বরিশালের তরুণ সঙঘের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেস অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।

কর্মজীবন

এম.এ. পাশ করে বরিশাল শহরের ছাত্রী ও তরুণীদের নিয়ে ‘শক্তিবাহিনী’ নামে সংগঠন গড়ে তোলেন। এসময় কিছুদিন সদর বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে বরিশাল জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি নগেন্দ্রবিজয় ভট্টাচার্যের সারস্বত বালিকা বিদ্যালয়ে অবৈতনিক প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কাজ আরম্ভ করে ‘শক্তিবাহিনী’কে সেখানে নিয়ে আসেন। ব্যায়ামচর্চার সঙ্গে মেয়েদের লাঠিখেলা ও ছোরাখেলা শেখানো হত। ‘হরিজন বিদ্যামন্দির’ নামে স্কুল পরিচালনা করা হত। বাড়ির লোকের অগোচরে গুপ্ত বিপ্লবীকর্মের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। লীলা নাগের দীপালি সংঘের মুখপত্র ‘জয়শ্রী’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। বিপ্লবাত্মক ভাবধারায় লিখিত তাঁর প্রথম গল্প ‘ভাইফোঁটা’ এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ গোলকধাঁধা’, ‘জয়শ্রী’তে ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিল। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘১৯৩০ সাল’। যুগান্তরে প্রকাশিত প্রবন্ধাবলী নিয়ে তাঁর অপর গ্রন্থ ‘নারী’। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের নতুন চালু কলেজ বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এখানে কল্যাণী দাসের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে এবং তাঁর গঠিত ‘ছাত্রী সংঘ’র কজের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বাড়ি খানাতল্লাশি করে কিছু না পেলেও গ্রিন্ডলেজ ব্যাঙ্ক জালিয়াতি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে এই মামলার বিচারে মুক্তি পেলেও বঙ্গীয় সংশোধিত ফৌজদারি আইনানুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তার করে বরিশালের বাসভবনে অন্তরীন করা হয। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ছাড়া পেয়ে বি.এম. কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। বাংলাদেশের কলেজে সহশিক্ষার প্রবর্তন এবং পুরুষ কলেজে মহিলা অধ্যাপক নিয়োগ - এই দুই ক্ষেত্রেই বি.এম. কলেজ পথপ্রদর্শক। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী সতীন্দ্রনাথ সেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় তাঁর রাজনৈতিক জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই বছরই তিনি বরিশাল পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। পরে ভারত সরকারের যুদ্ধনীতির প্রতিবাদে তিনি এই পদ ত্যাগ করেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে গ্রেপ্তার হয়ে কারারুদ্ধ ও গৃহে অন্তরীন থাকেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণকার্য পরিচালনা করেন। এসময়ে গঠিত ‘মহিলা শিল্পভবন’- এর তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাত্রী ছিলেন। ১৯৪৪-৪৫ খ্রিস্টাব্দে বি.এম. কলেজের কাজে পুনরায় যোগ দেন।


সাহিত্যকর্ম

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বরিশালেই থেকে যান। এসময় ‘মন্দিরা’য় লেখা পাঠাতেন। ‘শ্রীপাকিস্তানী’ ছদ্মনামে আনন্দবাজর পত্রিকায় লিখতেন। অবস্থাগতিকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে দেশ ছেড়ে আসানসোলের মণিমালা গার্লস কলেজের অধ্যক্ষাপদে যোগ দেন। পরে ১৯৫১ থেকে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত হুগলি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষা ছিলেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর বহু রচনা প্রকাশিত হয়েছে। তার রচিত অপর গ্রন্থ ‘বীর সংগ্রামী সতীন্দ্রনাথ সেন’, ‘জীবনের রঙ্গমঞ্চে’ প্রভৃতি। প্রসিদ্ধ শিক্ষাবিদ ও জনসংঘ নেতা দেবপ্রসাদ ঘোষ তাঁর অগ্রজ।



তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান (২য় খন্ড)।