মৈত্রেয়ী দেবী

Barisalpedia থেকে

পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত প্রখ্যাত সাহিত্যিক। পিতা: সুরেন্দ্রনাথ দাশ গুপ্ত। জন্ম: ১ সেপ্টেম্বর ১৯১৪ সাল। মৃত্যু: ৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৯০ সাল। গ্রাম: গৈলা, থানা: আগৈলঝারা (অতীতে গৌরনদী থানার অন্তর্ভুক্ত), জেলা: বরিশাল।

লেখালেখি ও রবীন্দ্রনাথ

বরিশালের রত্নগর্ভা গ্রাম গৈলার অন্যতম কৃতী সন্তান প্রখ্যাত দার্শনিক অধ্যাপক সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের ঘরে ১৯১৪-র ১ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন্য লেখিকা মৈত্রেয়ী দেবীর জন্ম। তবে তাঁর জন্মস্থান পিতার তখনকার কর্মস্থল চট্টগ্রাম। ১৯৩৬ সালে তিনি প্রাইভেট রেজিস্ট্রেশনে বি. এ. পাশ করেন। ১৬ বছর বয়সে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উদারতা’-র ভূমিকা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৪ সালে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. মনোমোহন সেনের সাথে তার বিয়ে হয়। মংপুতে সিনকোনা চাষের ব্যাপারে তাঁর স্বামীর বিশেষ অবদান ছিল। মংপুতে রবীন্দ্রনাথ মৈত্রেয়ী দেবীর আমন্ত্রণে ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে চারবার গিয়েছিলেন। মংপুর সে দিনগুলোকে নিয়ে ১৯৪৩ সালে মৈত্রেয়ী দেবী বই লেখেন ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’। অসাধারণ জনপ্রিয়তার কারণে বইটি ইংরেজিতে অনুদিত হয় ‘টেগোর বাই ফায়ারসাইড’ নামে। রবীন্দ্র বিষয়ক তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: স্বর্গের কাছাকাছি, বিশ্বসভায় রবীন্দ্রনাথ, গৃহে ও বিশ্বে, কবি সার্বভৌম, রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ দি ম্যান বিহাউন্ড হিজ পেয়েট্রি প্রভৃতি। ১৯৬১-তে রবীন্দ্র শতবর্ষে বক্তৃতা দেয়ার জন্য আমন্ত্রিত হয়ে তিনি সোভিয়েত রাশিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া ও গণতান্ত্রিক জার্মানিতে গিয়েছিলেন।

অন্যান্য সাহিত্যকর্ম

এছাড়া নানা অনুষ্ঠানে কয়েকবার তিনি আমেরিকা, চীন, কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলো ভ্রমণ করেছিলেন। তার ‘অচেনা চীন’, ‘মহাসোভিয়েত’, ‘চীনে ও জাপানে’ প্রভৃতি গন্থ এ বিষয়ে স্মরণীয়। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: বিধি ও বিধাতা, এত রক্ত কেন, ঋগবেদের দেবতা ও মানুষ, হিরন্ময় পাখি, আদিত্য মারীচ প্রভৃতি। তাঁর আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘ন হন্যতে’-র জন্য ১৯৭৬ সালে তিনি সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার লাভ করেন। এ বইটি বাঙালি পাঠক মহলে ঝড় তোলে। বহু আলোচিত এ উপন্যাসটি ‘ইট ডাজ নট ডাই’ নামে ইংরেজিতে অনুদিত ও প্রকাশিত হয়। তার অনেকগুলো গ্রন্থ একাধিক ভারতীয় ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ১৯৭৭ সালে তিনি ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত হন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৪ সালে তিনি ‘কাউন্সিল ফর প্রমোশন অব কমিউনাল হারমনি’ সংস্থা স্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শরনার্থী শিবিরের অনাথ শিশুদের জন্য তিনি ‘খেলাঘর’ স্থাপন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ সংস্থার কাজ কর্ম দেখাশুনা করেছেন।

মৃত্যু

এছাড়াও তিনি পশ্চিমবঙ্গের আরো কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী তাঁর মৃত্যু হয়।


তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।