বিবির পুকুর

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০০, ৩ আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত সংস্করণে

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রের নাম বলা যেতে পারে বিবির পুকুর। এ পুকুরের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব উইলিয়াম কেরীর নাম।

বিবির পুকুর.jpg

উইলিয়াম কেরী পর্তুগীজদের নিকট থেকে একটি মুসলমান মেয়েকে উদ্ধার করে তাকে লালন-পালন করে এক মসুলমান যুবকের নিকট বিয়ে দেন। এ মেয়ের নাম ছিল জিন্নাত বিবি। কেরী তাকে জেনেট বলে ডাকতেন। কেরী জেনেটের নামে শহরের গির্জা মহল্লা নিয়ে একটি তালুক ক্রয় করেন। এ তালুকের নাম ছিল জিন্নাত বিবি মহল্লা। ১৯০০-১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ভূমি জরিপে জিন্নাত বিবি ও কেরীর নামে উল্লেখ আছে। কেরী সাহেব অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী হাশেম আলী খানের বাড়ির পশ্চিম পাশে একটি কাঠের গির্জা নির্মাণ করেন। এটাই শহরের প্রথম গির্জা। জিন্নাত বিবি হাশেম আলী খানের বাড়ির ভূমির মালিক ছিলেন এবং সেখানে তার বাসগৃহ ছিল। জিন্নাত বিবি জনগণের জলকষ্ট নিবারনের জন্য সদর রোডের পূর্ব পাশে একটি পুকুর খনন করেন। এ পুকুর বিবির পুকুর নামে পরিচিত। এ পুকুর দৈর্ঘ্যে ৪০০ ফুট ও প্রস্থে ১৮৫০ ফুট। জিন্নাত বিবি ১৯ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তার কোন সন্তান ছিল না। জিন্নাত বিবি পুকুরের পশ্চিম পারে বাস করতেন।

একসময় কীর্তনখোলা নদীর সাথে এ পুকুরের দুটি সংযোগ ছিল এবং এতে নিয়মিত জোয়ার ভাটা হত। সংযোগ দুটির একটি বরিশাল সার্কিট হাউজ হয়ে মৃতপ্রায় ভাটার খালের মাধ্যমে কীর্তনখোলায় এবং অপরটি নগরীর গির্জা মহল্লার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিলুপ্ত খালের মাধ্যমে কীর্তনখোলা নদীর সাথে যুক্ত ছিল।

বরিশাল পৌরসভা স্থাপনের পর থেকেই বিবির পুকুরটি বিভিন্নভাবে সংস্কার ও পুনর্খনন করা হয়। ৯০ এর দশকে পৌর চেয়ারম্যান আহসান হাবিব কামাল পুকুরটির ঐতিহ্য রক্ষায় বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৮ সালে শওকত হোসেন হিরণ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিবির পুকুরের ঐতিহ্য রক্ষা এবং সৌন্দর্য্য বর্ধনে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এর মধ্যে পুকুরের চারপাশে ঝুলন্ত পার্ক, বিশ্রাম নেয়ার জন্য বেঞ্চ, অত্যাধুনিক গ্রিল ও পুকুরটির শোভা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের লাইটিং স্থাপন উল্লেখযোগ্য। এর পাশাপাশি বিবির পুকুরের পাশেই উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র পাবলিক স্কয়ার (বর্তমানে হিরণ স্কয়ার নামে পরিচিত) এবং পুকুরের মধ্যে ফোয়ারা স্থাপন করেন।

২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর জনগণের জন্য পুকুরের চারপাশ ও হিরণ স্কয়ার এলাকায় ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা যুক্ত করা হয়।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০। ২। উইকিপিডিয়া।