বামনার জমিদার চৌধুরী পরিবার

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:১৩, ১৩ জুন ২০১৮ পর্যন্ত সংস্করণে (চৌধুরী পরিবারের বংশলতিকা)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

বুজুর্গ উমেদপুরের সর্ববৃহৎ তালুক হলো তালুক রামনা-বামনা। এই তালুকের খ্যাতিমান তালুকদারি অর্জন করেছিলেন সফিজউদ্দিন জমাদার। পরবর্তীতে তাঁর বংশধররা চৌধুরী পদবি ধারণ করে।

রামনা-বামনা তালুকের পরিচয়

বিষখালী নদীর তীরে ৪৩টি গ্রাম নিয়ে রামনা-বামনা তালুক। পূর্বে রামনা-বামনা চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্গত ছিল। পূর্বে রামনা-বামনায় জনবসতি ছিল না। ১৭ শতকে কয়েক জায়গায় আবাদের চেষ্টা করা হয়েছিল। জলদস্যুদের অত্যাচারে লোকবসতি গড়ে ওঠেনি। ১৮ শতকে কোম্পানি আমলে এ অঞ্চলে লবণ চাষ করা হতো। ১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপের রাজা লক্ষèীনারায়ণ রায় রামনা-বামনা সদাশিব মজুমদারকে পাট্টা দেন। খাজা মাইকেল ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিকট হতে রামনা-বামনা বন্দোবস্ত নেন। ১৭৯২ খৃৃস্টাব্দে টমসন বাটওয়ারার সময় রামনা-বামনা সুন্দরবন ছিল।


সফিজউদ্দিনের তালুক লাভ

বাকেরগঞ্জের দুর্গাপাশা নিবাসী মোহাম্মদ ইদ্রাকের পুত্র সফিজউদ্দিন চেচরী ও আমুয়ায় ইংরেজ বণিকদের লবণ কারখানার পেয়াদা ছিলেন। সফিজউদ্দিন কর্মদক্ষতার গুণে জমাদার পদে উন্নতি লাভ করেন। পুরনো কাগজপত্রে সফিজউদ্দিনের জমাদার উপাধি দেখা যায়। ১৭৯৫ খৃৃস্টাব্দে সফিজউদ্দিন রামনা-বামনা দখল করেন এবং ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বণিকদের সহায়তায় বার্ষিক ১১৬৫ টাকা রাজস্বে রামনা-বামনা ৭ বছরের জন্য বন্দোবস্ত নেন। সফিজদ্দিন বামনায় স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করেন। তার দুই পুত্র হোসেন উদ্দিন ও নসরউদ্দিন চৌধুরী। সফিজদ্দিনের মৃত্যুর পর হোসেনউদ্দিন চৌধুরী জমিদারী পরিচালনা করেন। তিনি রংমহল (বর্তমানে যেখানে থানা) চান পুকুর (বর্তমানে যেখানে হাসপাতাল) নির্মাণ করেন।


চৌধুরী পরিবারের বংশলতিকা

মোহাম্মদ ইদ্রাকের পুত্র সফিজউদ্দিন চৌধুরী, তাঁর দুই পুত্র হোসেন উদ্দিন চৌধুরী ও নসরউদ্দিন চৌধুরী।হোসেন উদ্দিন চৌধুরীর চার সন্তান: আফসার উদ্দিন চৌধুরী, ফকরুন্নেসা, আজিজুন্নেসা ও আসমাতুন নেসা। আফসার উদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ফকরুদ্দিন চৌধুরী। ফকরুদ্দিন চৌধুরী অপুত্রক।

বৈবাহিক সূত্রে ফরিদপুরের সৈয়দ পরিবার কর্তৃক তালুকদারি দখল

হোসেনউদ্দিনের এক পুত্র আফসার উদ্দিন, তিন কন্যা- ফকরুন নেছা, আজিজুন নেছা ও আসমাতুন নেছা। আজিজুন নেছাকে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার মালিদিয়া গ্রামের মীর কাদের বকসের পুত্র মীর সরওয়ার জান বিয়ে করেন। সরওয়ার জান বামনায় বসতি স্থাপন করেন। স্ত্রী আজিজুন নেছার মৃত্যুর পর সরওয়ার জান সুকৌশলে বিধবা ফকরুন নেছাকে বিয়ে করে জমিদারীর একাংশের মালিক হন। জমিদারী পরিচালনার ব্যাপারে সরওয়ার জান তাঁর স্ত্রীর ভাই আফসার উদ্দিন চৌধুরীর প্রতিদ্বন্ধী হয়ে দাঁড়ান। পরে আফসার উদ্দিনের একমাত্র পুত্র ফকরুদ্দিন চৌধুরী নাবালক থাকায় সরওয়ার জান অভিভাবক নিযুক্ত হন। কিন্তু ফকরুদ্দিন সাবালক হলেও তাকে জমিদারীর দায়িত্ব দেয়া হয়নি। পরিশেষে দীর্ঘদিন মামলার পর প্রিভি কাউন্সিল ফকরুদ্দিনকে সাবালাক বলে ঘোষণা করে। তখন ফকরুদ্দিনের বয়স ছিল ৩৬ বছর। ফকরুদ্দিন বরিশালে আলেকান্দায় বাস করতেন। তিনি কুমিল্লার নবাব কাজী মহিউদ্দীন ফারুকীর ভগ্নিকে বিয়ে করেন। ফকরুদ্দিন আলেকান্দায় একটি সুরম্য ভবন নির্মাণ করেন। তার কোন পুত্রসন্তান না থাকায় একটি এতিমখানা পরিচালনা করতেন। ফলে রামনা বামনার তালুকদারি চলে যায় ফরিদপুর থেকে আগত সৈয়দ সরওয়ারজানের বংশের হাতে। তাই রামনা-বামনা তালুকের পরবর্তী তালুকদারির পরিবার আর চৌধুরী পরিবার নয়, বরং সৈয়দ পরিবার।


সৈয়দ পরিবারের বংশলতিকা

মীর কাদের বকসের পুত্র মীর সরওয়ারজান। মীর সরওয়ারজানের স্ত্রী হোসেনউদ্দিন চৌধুরীর দুই কন্যা ফকরুন নেছা ও আজিজুন নেছা। মীর সরওয়ারজানের সন্তান সৈয়দ আবি মোহাম্মদ, হামিদুন্নেসা, সৈয়দ হাফিজউদ্দিন ও সৈয়দ আমিনুল হক। সৈয়দ আবি মোহাম্মদের চারপুত্র সৈয়দ নজমুল আহসান, সৈয়দ জিয়াউল আহসান, সৈয়দ মঈনুল আহসান, সৈয়দ কামরুল আহসান। সৈয়দ নজমুল আহসানের পুত্র সৈয়দ রহমাতুর রব ইরতিজা। সৈয়দ মঈনুল আহসানের পুত্র সৈয়দ শামীম আহসান। মীর সরওয়ারজানের পুত্র সৈয়দ হাফিজউদ্দিনের পুত্র সৈয়দ আবু মোহাম্মদ হায়দার, তাঁর তিন সন্তান: সালমা, বিলকিস, হুমায়রা বানু টোনা। মীর সরওয়ারজানের পুত্র সৈয়দ আমিনুল হকের কন্যা সৈয়দা সুলতানা জাহানারা। সরওয়ার জানের তৃতীয় স্ত্রীর কন্যা হামিদুন নেসা। হামিদুন নেসার পুত্র শাহ হামিদুল্লাহ। হামিদুল্লাহর কন্যা আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম সাজেদা চৌধুরী।


সৈয়দ বংশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ

সরওয়ার জান ১৯১৪ খৃৃস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন। তার পুত্র সৈয়দ হাফিজউদ্দিন মোহাম্মদ আহমেদ মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান। তার পুত্র আবু হায়দারের অভিভাবকত্ব নিয়ে মামলা শুরু হয়। এ কে ফজলুল হকের ভাগ্নে ইউছুফ আলী তার কন্যা তসকিনা বানুকে হায়দার মিয়ার সাথে বিয়ে দেন। অপরদিকে আবি মোহাম্মদ ও তার কন্যা জোহরাকে আবু মিয়ার সাথে বিয়ে দেন। উভয় পক্ষে মামলা চলে। অশেষে ১৯৩৬ খৃৃস্টাব্দে ২৪ পরগণার জজ মিঃ ইলিয়াস সৈয়দ আবু হায়দারকে সাবালক বলে ঘোষণা করেন। আবি মোহাম্মদ ১৯৫১ খৃৃস্টাব্দে প্রাণ ত্যাগ করেন। তার দ্বিতীয় পুত্র জিয়াউল আহসান যুক্তফ্রন্টের সময় আইনসভার স্পীকার ছিলেন। তার তৃতীয় পুত্র মইনুল আহসান ঢাকা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন। তার পুত্র শামিম আহসান বাংলাদেশ সরকারের সচিব। আবি মোহাম্মদের চতুর্থ পুত্র সৈয়দ কামরুল আহসান একজন রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক। তিনি হবিগঞ্জ হতে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।


রামনা-বামনার অন্যান্য সম্মানিত পরিবার

চৌধুরী পরিবারকে কেন্দ্র করে আরও কয়েকটি পরিবার বামনায় বসতি স্থাপন করেন। তাদের মধ্যে খন্দকার পরিবার অন্যতম। খন্দকার মুন্সী ছমির উদ্দিন হোসেন উদ্দিন চৌধুরীর নায়েব ছিলেন। তার পুত্রদ্বয় ইসমাইল ও ইসরাইল। খন্দকার ইসমাইলের কন্যা বিয়ে করেন ফরিদপুরের খন্দকার আবুল হাসান। তিনি বামনায় বসতি স্থাপন করেন। তার পুত্র এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সাংবাদিক শাহাদত হোসেন। আবুল হাসানের কন্যাকে বিয়ে করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।