বরিশালে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচন

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১০:৩৯, ৮ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত সংস্করণে ("১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পর..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তা ছিল বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়।


নির্বাচন প্রস্তুতি

১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের আসন সংখ্যা ছিল ২৫০। মোট ভোট সংখ্যা ছিল ৬৬,২২,৬৫৪। তন্মধ্যে ভোটার ছিল ৯,৩৮,৮৫১ জন। ভোটারদের মধ্যে কৃষক প্রজার ভোট বেশি ছিল। ফলে কৃষক প্রজা পার্টি শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। প্রজা পার্টির জনসমর্থন দেখে মুসলিম লীগ ও মুহম্মদ আলী জিন্নাহ কৃষক প্রজা পার্টির সাথে ঐক্যব্যদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেন। মুসলিম লীগের এ যৌথ নির্বাচনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বরিশাল প্রজা পার্টির সৈয়দ কুতুব উদ্দিন, আজিজুল হক নান্না মিয়া, মফিজ উদ্দিন উকিল, শাহবুদ্দীন, নায়েব আলী, আবদুল লতিফ প্রমুখ এক যুক্ত বিবৃতি দেন। মুসলিম লীগ বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ রাজি হয়নি বলে প্রজা পার্টির সাথে মুসলিম লীগের ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠত হয়নি।

১৯৩৬ খ্র্রিষ্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হলে এক বিরাট জনসভায় এ কে ফজলুল হক অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া, কৃষকদের অভাব-অভিযোগ, গণতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসন প্রভৃতির ওপর জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন। এ সভায় হাশেম আলী খান, আবদুল ওহাব খান, সৈয়দ হাবিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান উকিল শরৎ চন্দ্র গুহ। ১৯৩৭ খৃৃস্টাব্দে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সভাপতিত্বে বরিশালের কসাই মসজিদে মুসলিম লীগ গঠিত হয়। আজিজ উদ্দিন উকিল সভাপতি এবং ঝালকাঠির শেরযুগের এনায়েত হোসেন খাঁ উকিলকে সম্পাদক করে বাকেরগঞ্জ জেলা মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। নবাবজাদা ফজলে রাব্বি, মীর ফিদে আলী, সৈয়দ আনছার আলী উকিল, মোহাম্মদ আলী মোক্তার, খান সাহেব আকরাম, খান বাহাদুর নুরুজ্জামান প্রমুখ মুসলিম লীগের বিশিষ্ট নেতা ছিলেন।


নির্বাচনী এলাকাসমূহ ও প্রার্থীগণ

বাকেরগঞ্জ জেলার ১২ টি প্রাদেশিক আইনসভার আসন ছিল ৯ টি মুসলিম, ২ টি তফসিল এবং ১ টি হিন্দু।

১. পটুয়াখালী, বাউফল, মির্যাগঞ্জ ও গলাচিপা নিয়ে পটুয়াখালী দক্ষিণ নির্বাচনী এলাকায় কৃষক প্রজা পার্টির সভাপতি আবুল কাশেম ফজলুল হক ও মুসলিম লীগের প্রার্থী খাজা নাযিমউদ্দিন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন।

২. বেতাগী, বরগুনা, আমতলী, খেপুপাড়া থানা নিয়ে পটুয়াখালী উত্তর নির্বাচনী এলাকা। এ কেন্দ্রে প্রজা পার্টির বরগুনার আবদুল কাদের (লাল মিয়া) এবং মুসলিম লীগের বেতাগী নিবাসী আবি আবদুল্লাহ (চান মিয়া) প্রার্থী ছিলেন।

৩. মঠবাড়িয়া, ভাÐারিয়া, কাঁঠালিয়া, বামনা ও পাথরঘাটা নিয়ে পিরোজপুর দক্ষিন কেন্দ্র। মঠবাড়িয়ার কৃষক প্রজা পার্টির খান সাহেব হাতেম আলী জমাদার ও মুসলিম লীগের-মৌলভী আজহার উদ্দিন আহমেদ প্রার্থী ছিলেন।

৪. পিরোজপুর, কাউখালী, স্বরুপকাঠি, বানারীপাড়া ও নাজিরপুর নিয়ে গঠিত পিরোজপুর উত্তর কেন্দ্র। প্রজা পার্টির এ কে ফজলুল হক ও কাউখালীর মুসলিম লীগের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট লেহাজ উদ্দিন প্রার্থী ছিলেন।

৫. হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জ নিয়ে বাকেরগঞ্জ উত্তর নির্বাচনী কেন্দ্র হতে কৃষক প্রজা পাটির খান বাহাদুর হাশেম আলী খান এবং মুসলিম লীেেগর আরিফ হোসেন চৌধুরী (ধনুমিয়া) প্রার্থী ছিলেন।

৬. কোতোয়ালি, বাবুগঞ্জ, গৌরনদী ও উজিরপুর নিয়ে বাকেরগঞ্জ উত্তর নির্বাচনী কেন্দ্র হতে কৃষক প্রজা পার্টির আবদুল ওহাব খান বিএ, বিএল ও মুসলিম লেিগর মাওলানা আবুল কাশেম প্রতিযোগিতা করেন।

৭. বাকেরগঞ্জ, নলছিটি, ঝালকাঠি ও রাজাপুর নিয়ে বাকেরগঞ্জ দক্ষিণ কেন্দ্র হতে কৃষক প্রজা পার্টির সদর উদ্দিন উকিল ও মুসলিম লীগের চৌধুরী মোহাম্মদ ইসমাইল খান প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন।

৮. ভোলা ও দৌলতখাঁ নিয়ে ভোলা উত্তর নির্বাচনী এলাকা হতে কৃষক প্রজা পার্টির কবি মোজাম্মেল হক ও মুসলিম লীগের খান বাহাদুর নুরুজ্জামান প্রার্থী ছিলেন।

৯. বোরহানউদ্দিন ও তজুমদ্দিন, লাল মোহন নিয়ে ভোলা দক্ষিন কেন্দ্র গঠিত ছিল। এ কেন্দ্র হতে কৃষক প্রজা পার্টির তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী এবং মুসলিম লীগের সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুর রহমান প্রার্থী ছিলেন।


নির্বাচনের ফলাফল

বাকেরগঞ্জ ছিল জমিদার- তালুকদারদের শোষণের ভ‚স্বর্গ এবং এ কারণে জেলার কৃষক সমাজ এ কে ফজলুল হক ও হাশেম আলী খানের নেতৃত্বে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কৃষক প্রজা পার্টির প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেন। পটুয়াখালী কেন্দ্রে খাজা নাযিমউদ্দিনসহ নয়টি আসনেই মুসলিম লীগ শোচনীয়ভাবে পরজায় ভরণ করে। কৃষক প্রজা পার্টির এ কে ফজলুল হক দু’টি আসনে, হাশেম আলী খান আবদুল ওহাব খান, কবি মোজাম্মেল হক, তোফায়েল ইাহমেদ চৌধুরী, সদর উদ্দিন উকিল, আবদুল কাদের ও হাতেম আলী জমাদ্দার বঙ্গীয় আইনসভার এমএলএ নির্বাচিত হলেন। এ কে ফজলুল হক পিরোজপুর আসন ছেড়ে দিলে সৈয়দ মোহাম্মদ আফজাল এমএলএ নির্বাচিত হয়। বাকেরগঞ্জ জেলার সর্বমোট ১২ টি আসনে কৃষক প্রজা পার্টির ১১ টি আসন দখল করে। এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে এ বিজয় ছিল জমিদার তালুকদারদের ওপর কৃষক সমাজের বিজয়। বরিশালে এ বিজয় কৃষক সমাজের জন্য বয়ে আনে অভূতপূর্ব সাফল্য। বারংরার অন্য কোন জেলায় কৃষক প্রজা পার্টি এতবড় সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এ বিজয়ের পর এ কে ফজলুল হক বাংলার রাজনীতি ও শাসন নীতিকে ৭ বছর ধরে পরিচালনা করে বাঙালীদের ঐক্যবদ্ব করে একটি জাতিতে পরিণত করতে সক্ষম হন।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।