বরিশালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলন ১৯০৬

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৩:৫৩, ১১ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত সংস্করণে ("বরিশালে স্বদেশী আন্দোলনের সাফল্য বাংলাদেশকে আকৃষ্ট করে..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

বরিশালে স্বদেশী আন্দোলনের সাফল্য বাংলাদেশকে আকৃষ্ট করেছিল। কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ তা দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন যে ১৯০৬ খৃৃস্টাব্দে তাদের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলন বরিশালে অনুষ্ঠিত হবে।


প্রাদেশিক সম্মেলনের কমিটিসমূহ

১৯০৬ খৃৃস্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলন সফল করার জন্য অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি হলেন অশ্বিনীকুমার দত্ত, সম্পাদক উকিল রজনীকান্ত দাশ, সহযোগী সম্পাদক উকিল নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত এবং উকিল শরৎ চন্দ্র গুহ। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান হলেন বিএম কলেজের দর্শনের অধ্যাপক সুরেন্দ্র নারায়ণ মিত্র। অন্যান্য দায়িত্বে ছিলেন ডা. তারিণী কুমার গুপ্ত, ব্যারিষ্টার সৈয়দ মোতাহার হোসেন, ওয়াহেদ রাজা চৌধুরী, মুকুন্দ দাশ, দেবকুমার রায় চৌধুরী, মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতা, পূর্ণচন্দ্র দে, সতীশ চœদ্র মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের উত্তর দিকের মাঠে বিরাট সভামঞ্চ নির্মাণ করা হয়।


অতিথিগণের আগমন ও পুলিশি তৎপরতা

১৯০৬ খৃৃস্টাব্দে ১৩ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনা ও নারায়ণগঞ্জের স্টীমারে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, কৃষ্ণ, কুমার মিত্র ভুপেন্দ্রনাথ বসু, অমৃত বাজার পত্রিকার মতিলাল ঘোষ, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, সভাপতি ব্যারিষ্টার আব্দুর রসুল ও তার শ্বেতাঙ্গিনী স্ত্রী, আব্দুল হালিম গজনবী, আনন্দ চন্দ্র রায়, শচীন্দ্র প্রসাদ বসু প্রমুখ এবং অন্যান্য জেলার শত শত প্রতিনিধি বরিশাল আগমন করেন। বিপিন চন্দ্র পাল, অরবিন্দ ঘোষ, কালীপ্রসন্ন কাব্য বিশারদ পূর্বে বরিশালে পৌঁছেন। নেতৃবর্গকে ষ্টীমারঘাট হতে শোভাযাত্রা করে রাজা বাহাদুরের হাবেলিতে (বর্তমান অশ্বিনী কুমার টাউন হল) আনা হয় এবং সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হয়। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ এপ্রিল নেতৃবৃন্দসহ জনতা রাজা বাহাদুরের হাবেলিতে সমাবেত হন। পুলিশ তাদের বন্দে মাতরম ধ্বনি দিতে নিষেধ করে। কিন্তু বাংলাদেশের মধ্যে বরিশালেই প্রথম ফুলারের নির্দেশ অমান্য হলো। প্রথমে ঘোড়ার গাড়িতে ব্যারিষ্টার রসুল ও তার স্ত্রী যাত্রা শুরু করেন। পুলিশ সুপারিণটেনডেন্ট মিঃ কেম্প এবং সহকারী পুলিশ সুপার হেনস গুর্খা পুলিশ নিয়ে শোভাযাত্রাকে বাধা দেয়। পুলিশের লাঠির আঘাতে বহু লোক আহত হয়ে বাস্তার ড্রেনে পড়ে যায়। লাঠির আঘাতে মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতার পুত্র চিত্তরঞ্জনের মাথা ফেটে যায় এবং দিপালী সিনেমার সামনের পুকুরে পড়ে যায়। মিঃ কেম্প সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীকে গ্রেফতার করে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ইমারসনের বাসভবনে নিয়ে যায়। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সুরেন্দ্রনাথকে চার শ’ টাকা জরিমানা করলেন। ওদিকে সভার কাজ চলছে। মুসলমানদের মধ্যে সভায় উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ ইসমাইল চৌধুরী, আবুল হোসেন, মৌলভী হেদায়েত বকস, ব্যারিষ্টার সৈয়দ মোতাহার হোসেন, মৌলভী হামেজ প্রমুখ।


সভা ও সিদ্ধান্ত

অশ্বিনী কুমার দত্ত, সুরেন্দ্রনাথ রায় সভায় উপস্থিত হলে তুমুল হর্ষধ্বনি হলো। সুরেন্দ্রনাথ, বিপিন চন্দ্র পাল প্রমুখ বক্তৃতা দিলেন। ১৫ এপ্রিল বেলা ১১টায় পুনরায় অধিবেশন আরম্ভ হলো। লক্ষ জনতার কণ্ঠে বন্দে মাতরম গীত হলো। অশ্বিনী কুমার প্রস্তাব করলেন যে স্থানে রেগুলেশন লাঠির দ্বারা পুলিশ দেশপ্রেমিক যুবকদের রক্তপাত ঘটিয়েছে এবং সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীকে গ্রেফতার করেছে সে স্থানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত করা হবে। সুরেন্দ্রনাথ বক্তৃতা দিলেন এবং বিলাতী মাল বর্জনের প্রতিজ্ঞা পাঠ করালেন। পুলিশ বাধা দিলে সভা ভেঙ্গে যায়।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।