ঝালকাঠির মুক্তিযুদ্ধ

Barisalpedia থেকে

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পরই ঝালকাঠি মহকুমা ও প্রত্যেকটি থানায় এমএনএ ও এমপিদের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। বরিশাল কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশে মহকুমা ও থানায় সংগ্রাম পরিষদ পরিচালিত হতো। ১১ মার্চ বরিশালের পেশকাবাড়ির নূরুল ইসলাম মঞ্জুর বাসভবনে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। ২৩ মার্চ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়। এ দিন ঝালকাঠি স্টেডিমায়ে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বরিশালে গঠিত কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদে ঝালকাঠির আবদুল বারেক এমএনএ, আক্কাস হোসেন, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ সদস্য ছিলেন। ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ২৭ মার্চ রাজাপুর শহীদ মিনারে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। নেতৃত্বে ছিলেন আবদুর রহমান। নূরুল ইসলাম মঞ্জু ট্রেনিং দেয়ার জন্য ১০টি রাইফেল নিয়ে স্পীডবোডে ঝালকাঠি আসেন। রাজাপুরের সাতুরিয়া ও ভাতকাঠি গ্রামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপিত হয়। ঝালকাঠির পুরাতন বাজারে ও নলছিটির মার্চেন্ট স্কুল মাঠে সূর্যপাশার হাবিলদার আবদুল মজিদের নেতৃত্বে ১৫০ জন করে তিন ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এভাবে মহকুমার কয়েকটি স্থানে প্রশিক্ষণ চলে। ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানী পতাকা উড়িয়ে আদম আলী ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে পাকিস্তানী গানবোটকে স্বাগত জানায়। এ অপরাধে মজিদ আদম আলীকে লঞ্চঘাটে গুলি করে হত্যা করে।

ঝালকাঠি সংগ্রাম পরিষদ-১৯৭১

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর বর্তমান ঝালকাঠি জেলার প্রত্যেক থানা, ইউনিয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ঝালকাঠি থানার সংগ্রাম পরিষদ: ১. মোহাম্মদ আলী খান, আহ্বায়ক; ২. আবদুল বারী, সদস্য; ৩. শাহজাহান আশ্রাব, সদস্য; ৪. এবিএম মর্তুজা আলী, সদস্য; ৫. অধ্যাপক সন্তোষ কুমার, সদস্য; ৬. ডা. লুৎফর রহমান, সদস্য; এবং ৭. আক্কাস আলী সর্দার, সদস্য। রাজাপুর থানার সংগ্রাম পরিষদ ছিল এরূপ: ১. হোসেন আলী মাস্টার, আহ্বায়ক; ২. মোফাখখর হোসেন বিশ্বাস, সদস্য; ৩. আবু বকর মৃধা, সদস্য। কাঠালিয়া থানার সংগ্রাম পরিষদ: ১. আব্দুল রসুল সিকদার, আহ্বায়ক; ২. ফারুক সিকদার, সদস্য; ৩. নিজামউদ্দিন হাওলাদার, সদস্য; ৪. ফখরউদ্দিন মোল্লা, সদস্য; ৫. শামসুল হক মৃধা, সদস্য; ৬. মোশাররফ হোসেন গোলদার, সদস্য; ৭. মহসিন নকিব, সদস্য; ৮. আজাহার আলী খান, সদস্য; ৯. মজিবর রহমান জমাদ্দার, সদস্য; ১০. ইসহাক হাওলাদার, সদস্য। নলছিটি থানার সংগ্রাম পরিষদ: ১. কবির আহমেদ চান্দু মিয়া এমপিএ, আহ্বায়ক; ২. মৌজে আলী সরদার, সদস্য; ৩. ডা. বাসেত লস্কর, সদস্য; ৪. মোক্তার হোসেন, সদস্য; ৫. রুস্তম হাওলাদার, সদস্য; ৬. মফেজ মোল্লা, সদস্য; ৭. মতি খান, সদস্য; ও ৮. তাহের উদ্দিন, সদস্য।সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা ছিলেন এডভোকেট আব্দুল বারেক এমএনএ, এডভোকেট ইসমাইল হোসেন এমপিএ, নূরুল ইসলাম এমপিএ, কবীর আহমেদ চান্দু মিয়া। থানায়, গঞ্জে, স্কুলে সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ১৯৭১ সারের ২৩ মার্চ ঝালকাঠিতে অনুষ্ঠানিকভাবে মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সিরাজ শিকদার বাহিনী

পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক আন্দোলনের নেতা সিরাজ সিকদার ঝালকাঠির পালবাড়িতে মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প গঠন করেন। ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন পাথরঘাটার সেলিম শাহ নেওয়াজ। তিনি ঝালকাঠি কলেজের ছাত্র। ঝালকাঠি শহরের পতনের পর সিরাজ সিকদার তার ক্যাম্প কীর্তিপাশায় নিয়ে যান। সিরাজ সিকদার ছদ্মনাম ধারণ করেন। তার নাম হলো ‘সালাম’। পাকবাহিনী কীর্তিপাশা আক্রমণ করলে সিরাজ দিকদার তার ক্য্যাম্প বিভক্ত করে মাদ্রা, শতদশকাটি, আতা ও ভীমরুলি গ্রামে পৃথক ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেন। নিজে আতা ক্যাম্পে ছিলেন। তাঁর দলে ছিলেন সেলিম শাহ নেওয়াজ, হুমায়ুন কবীর, রেজায়ে সাত্তার ফারুক, ফিরোজ কবীর, মুজবুল হক মেহেদী, বিপ্লব, আসাদ, ফারুক, মজিদ, মিলু, আনোয়ার প্রমুখ। এ দল বোমা তৈরি করতে পারত। মাধবপাশার লাপাদি নিবাসী সুলতান উদ্দিন মাস্টার, সাদেক দুয়ারী, নান্টু সিকদার, পুলিশ কানাই সিংহ, আরব আলী, করাপুরের ইপিআর সুবেদার মজিবুল হক, আফসার উদ্দিন ঝালকাঠি অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন। তারা বাবুগঞ্জ ও ঝালকাঠিতে কয়েকটি যুদ্ধে সফলতা অর্জন করেন। সুবেদার জলিল কাঠালিয়ায় এবং কমান্ডার আবদুল হক নলছিটিতে দল গঠন করেন।


মানিক বাহিনী

ঝালকাঠির বেশাইন খান গ্রামের রোজউল করিম আজাদ ২৪ জন তরুণকে নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করেন। এ দল মানিক বাহিনী নামে পরিচিত ছিল। মানিক ঢাকা কলেজের ছাত্র ও সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার ছোট ভাই কীর্তিপাশা স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র সাইদুল করিম রতন ছিল তার অন্যতম সহকারী। মানিক বাহিনীর সদস্য ছিল ২৪ জন। তারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালায়। পাকবহিনীর নির্যাতনের ভয়ে হাজার হাজার হিন্দু আটঘর কুড়িয়ানায় আশ্রয় নেয়। মানিক বাহিনী আদের সহায়তা করে এবং তাদের পরিত্যক্ত ঘরবাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পাকবাহিনী পেয়ারা বাগান আক্রমণ করলে মানিক বাহিনী পাকবাহিনীকে আক্রমণ করে কয়েকজনকে হত্যা করে। রাজাকার ও দালালেরা মানিক বাহিনীর গোপন ক্যাম্পের সংবাদ দেয়। পাকসেনারা ক্ষিপ্ত হয়ে মানিক বাহিনীর গোপন ক্যাম্প ১৯৭১ সালের ১৪ জুন ভোর রাতে আভিযান চালায়। তারা মানিক, রতনসহ ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং ঘটনাস্থলে ১৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। মানিক রতনসহ ৮ জনকে ঝালকাঠি থানায় নিয়ে আসে। ঝালকাঠির পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন আজমত তাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে। মানিক গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩ বার জয় বাংলা ধ্বনি দিয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে। মানিকের স্মরণে বেশাইন খানের নামকরণ করা হয় মানিকনগর। স্বাধীনতার পর ঢাকার নতুন পল্টন লাইনে অবস্থিত বালিকা বিদ্যালয়ের নাম করা হয় শহীদ মানিক আর্দশ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।

পাকবাহিনীর বর্বরতা

পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন আজমত খান ছিল গণহত্যার নায়ক। এ হত্যাকান্ডের সহযোগী ছিল ঝালকাঠির সিআই শাহ আলম, ওসি সেকান্দার, রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটির একদল ঘৃণিত নরপশু। পাকবাহিনীর ভয়ে হিন্দুরা আটঘর কুড়িয়ানায় আশ্রয় নেয়। গ্রামে গ্রামে যারা পালিয়ে ছিল তাদের রাজাকারদের সাহায্যে ধরে এনে ঝালকাঠিতে হত্যা করত। তারা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে গণহত্যা চালায়। নলছিটি বন্দরের হিন্দু বণিকদের শান্তি কমিটির সাহায্যে ধরে এনে নলছিটি থানার খালের মুখে বধ্যভূমিতে দাঁড় করে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন গোপালচন্দ্র কুড়ি, শ্যামাকান্ত রায়, মোহন ভট্ট, দশরথ কুন্ডু, সুকুমার বণিক, হরিপদ রায়, অতুল চন্দ্র ব্যানার্জী প্রমুখ ব্যবসায়ীগণ। ঝালকাঠির মুক্তিযোদ্ধা সঞ্জীব বসুর বোন ছিলেন ঝালকাঠি কলেজের ছাত্রী। পাকবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করে তার লাশ সুগন্ধা নদীর তীরে ফেলে রাখে। কুকুর দিয়ে তার লাশ খাওয়ানো হয়। ঝালকাঠির হিমানন্দকাঠির শেফালী রানীকে পাশবিক নির্যাতনে ব্যর্থ হয়ে তার শিশুপুত্রকে আছড়ে হত্যা করা হয় এবং শেফালীকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।

ঝালকাঠির রমানন্দপুর শরীফবাড়ির নিকট যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। শান্তি কমিটি এ সংবাদ জানিয়ে দিলে ১৯৭১ সালের ২১ মে শুক্রবার পাকবাহিনী রমানন্দপুর গ্রাম আক্রমণ করে, অগ্নিসংযোগ করে। তারা গ্রামের আবদুল মাঝি, আহম্মদ মাঝি, হালিম মাঝি, এন্তাজউদ্দিন, তকদী সিকদার প্রমুখতে হত্যা করে। পাকসেনারা ২৩ মে পুনরায় রামানন্দপুর আক্রমণ করলে অনেকে মসজিদে আশ্রয় নেয়। মসজিদে কয়েকজন নামাজ পড়ছিলেন। মসজিদের ১৭ জন মুসল্লিকে ধরে এনে পুকুর পাড়ে তাদের হত্যা করে। মসজিদের পাশে তাদের কবর দেযা হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন আবদুর মান্নান, সালাম, হাশেম মাঝি, লতিফ মাঝি, রাজ্জাক খান, জব্বার প্রমুখ। ১৯৭১ সালের ২১ ও ২৩ মে পাকবাহিনী কীর্তিপাশা ইউনিয়নের রামনন্দপুর গ্রামের যাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়: ১. মোসলেম ব্যাপারী, নৌকা ব্যবসায়ী, আলীপুর; ২. এনাজউদ্দিন মিয়া, বয়স ৬০, রমানন্দপুর; ৩. সিপাহী আবদুল হাকিম, বয়স ৪০; ৪. শহীদ এনাজউদ্দিনের পুত্র প্রাথমিক বিদ্রালয়ের ছাত্র ৮ বছরের নূরুল হক; ৫. আবদুল; ৬. আহম্মদ; ৭. তক্কী সিকদার; ৮. শাহেদ হাওলাদার; ৯. আবদুল মান্নান বিকম, পিতা শহীদ মোসলেম আলী, চামটা স্কুলের শিক্ষক; ১০. আবদুল জব্বার, আলীপুর; ১১. আবুল হাশেম মাঝি, রামানন্দপুর; ১২. আবদুস সালাম; ১৩. আবদুল লতিফ মাঝি; ১৪. আবদুর রাজ্জাক খান; ১৫. হালিম মাঝি; ১৬. আহম্মদ মাঝি। ১ জুন পাকবাহিনী এ অঞ্চল থেকে অকেন যুবতীকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের আর পাওয়া যায়নি। পাকসেনারা এ অঞ্চলে ১১টি শিশুকে হত্যা করেছে। শিশুদের শূন্যে ছুড়ে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করে আনন্দ করেছে। তারা ৪ জুন পাঁজি পুঁথিপাড়া, ১২ জুন ভীমরুলি, ১৬ ও ২৬ জুন বেশাইনখান, ৬ মে কুতুবকাঠি, ২২ মে কীর্তিপাশা, গোয়ালকান্দা, ১০ জুন শ্রীমন্তকাঠি প্রভৃতি গ্রামের শত শত মেয়েকে ধরে এনে ঝালকাঠি থানার সন্নিকটে আরসিও’র বাড়িতে আটক রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ ও নির্যাতন করে। নির্যাতন করে তাদের হত্যা করে। ১৭ জুন পাকসেনারা ঝালকাঠির শিখারানী মন্ডলকে নির্যাতন করে হত্যা করে। তার মা পালিয়ে যায় এবং ৩ ঘন্টার পরে ফিরে এসে দেখেন শিখারানী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ঝালকাঠির পালপাড়ায় পাকবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। পালবাড়িতে অনেক লোক হত্যা করা হয় এবং মেয়েদের নির্যাতন করা হয়। ১৯৭১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ১০টায় পাকবাহিনী কীর্তিপাশা ইউনিয়নের রামানাথপুর গ্রাম আক্রমণ করে গণহত্যা চালায়। নিহতরা হলেন: ১. মোসলেম আলী ব্যাপারী- আলীপুর;২. এনাজউদ্দিন সিপাহী-বয়স ৬০ রামানাথপুর; ৩. আবদুল হাকিম সিপাহী- বয়স ৪০, রমানাথপুর; ৪. নুরুল হক পিতা এনাজউদ্দিন-বয়স ৮ বছর, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র; ৫. আবদুল পিতা এনাজউদ্দিন; ৬. তকী সিকদার; ৭. শাহেদ হাওলাদার; ৮. আবদুল মান্নান, পিতা-মোসলেম আবদুল জব্বার- আলীপুর; ৯. আবুল হাশেম-আলীপুর; ১০. আবদুস সালাম শরীফ ও আরো অনেকে। রাজাপুর বাগড়িপুলের দক্ষিণে থানারঘাট ছিল বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে পাকসেনারা শান্তি কমিটির সহযোগিতায় রাজাপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে ধরে এনে থানার ঘাটে হত্যা করে খালে ফেলে দিত। থানারঘাটের সন্নিকটে বাগড়ি গ্রামের শতাধিক হিন্দুকে হত্যা করা হয়। বাগড়ি বধ্যভূমি থানার জঘন্য বৃহৎ হত্যাকান্ডের স্থান। রাজাপুরের সাতুরিয়ার চেয়ারম্যান হামেদ জমাদ্দার, তার পুত্র মিল্লাত ও বেলায়েত জমাদ্দার, রাজাপুরের মোকাম্মেল মেম্বর, ইন্দ্রপাশার ফজুল খা, সংগরের নূর গাজী- তারা নিজেরা অনেক লোক হত্যা করেছে। অনেক লোক ধরে এনে কাউখালিতে পাকসেনাদের নিকট তুলে দেয়া হয়েছে। পাকসেনারা কাউখালী স্টীমার ও লঞ্চ ঘাটে তাদের হত্যা করে নদীতে ফেলে দিত। জুন বা তারপর থেকে পাকসেনাদের উপর রচিত হতে শুরু করে কঠিন সব আক্রমণ ও যুদ্ধ।


ভীমরুলির যুদ্ধ

১৯৭১ সালের ৩ জুন সিরাজ সিকদার ভীমরুলি স্কুলে এক সভায় পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন পার্টি বিলুপ্ত করে পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি গঠন করেন। এ সভায় হুমায়ুন কবীর, সেলিম শাহ নেওয়াজ, বিপ্লব, মজিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সিরাজ সিকদার ঝালকাঠি শহরের পালবাড়ীতে শক্ত ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন সেলিম শাহনেয়াজ। ঝালকাঠি পতনের পর সিরাজ সিকদার তার বাহিনীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। ক্যাম্পগুলোর মধ্য ছিল শতদশকাঠি, ভীমরুলি, আতা, মাদ্রা, কীর্তিপাশা। এ সময় সিরাজ সিকদারের ছদ্মনাম ছিল সালাম। তার দলের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন হুমায়ুন কবীর, ফিরোজ কবীর, রেজায়ে ছত্তার ফারুক, মজিবুল হক মেহেদী, বিপ্লব, আসাদ, মজিদ, আনোয়ার, নীলু। পাক বাহিনী কীর্তিপাশা আক্রমণ করলে সিরাজ সিকদারের দল আটঘর-কুড়িয়ানা চলে যায়। পাক পাহিনী মে মাসে মাঝে মাঝে পেয়ারা বাগানে যেত। সিরাজ সিকদার একদনি খবর পেলেন পাকসেনারা স্পীড বোট ও গানবোট নিয়ে পেয়ারা বাগানের দিকে আসছে। সিরাজ সিকদারের বাহিনী পাকসেনাদের আক্রমণ করে। ঘটনাস্থলে ৭ জন পাকসেনা নিহন হয়। মুক্তিযোদ্ধারা একজন পাকসেনা ধরে ফেলে। তাকে বাঁশে বিদ্ধ করে বাউকাঠি হাটে ঘুরিয়ে দেখানো হয়। ঝালকাঠি ও স্বরূপকঠি থানার মধ্যবর্তী আটঘর কুড়িয়ানায় পেয়ারা বাগান অবস্থিত। ১৯৭১ সালে হাজার হাজার হিন্দু নির্যাতিত হয়ে পেয়ারা বাগানে আশ্রয় নেয়। পেয়ারা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। এখানে সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টির ঘাঁটি ছিল। ২৬ এপ্রিল বরিশাল শহর থেকে ক্যাপ্টেন বেগের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা কুড়িয়ানায় অবস্থান নেয়। শর্শিনার পীরের আহবানে ঝালকাঠি থেকে দুটি লঞ্চ ভর্তি পাকসেনা কুড়িয়ানা নদী দিয়ে শর্শিনায় যাচ্ছিল। এ সংবাদ পেয়ে নৌ কমান্ডো মাহফুজ আলম বেগ, শচীন কর্মকার, তোফাজ্জল হক চৌধুরী, জিএম কবীর, চুন্নু, সেন্টু, টিপু প্রমুখ লঞ্চ আক্রমণে অংশ নেন। সিরাজ সিকদার ও বেগ লঞ্চ আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্রের নিকট টিকতে পারেনি। এ অভিযানে সর্বহারা পার্টির মুজিবুল হক মেহেদীসহ কয়েকজন ধরা পড়ে এবং তাদের ঝালকাঠি থানায় আনা হয়। থানায় প্রবেশের সময় তারা জয় বাংলা ধ্বনি দিতে দিতে যান। পাকবাহিনী তাদের হত্যা করে। আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগানে পটুয়াখালরি ম্যাজিস্ট্রেট সিআর দত্তের শালিকা আশ্রয় নিয়েছিল। তাকে ধরার জন্য স্পীডবোটে আর্মি আটঘর কুড়িয়ানায় আসে। সর্বহারারা স্পীডবোট আক্রমণ করে দখল নেয় এবং সৈন্যদের হত্যা করে। পাকবাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে একদল সৈন্য ও রাজাকার দালাল নিয়ে পেয়ারা বাগান আক্রমণ করে। পাক বাহিনী ও শত শত রাজাকার পেয়ারা বাগান কেটে ধ্বংস করে এবং হিন্দুদের হত্যা করে। মুক্তিবাহিনীকে খুঁজে বের করার জন্য পেয়ারা বাগান ধ্বংস করে। এ সময় হিন্দু নরনারীরা জঙ্গলে পালিয়ে থাকে। পেয়ারা বাগানে পাকবাহিনী ও দালালেরা ১০ হাজার হিন্দু নারী-পুরুষকে হত্যা করে।

নলছিটি দরগাবাড়ির যুদ্ধ

দরগাবাড়ির যুদ্ধ দক্ষিণ বাংলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ যুদ্ধের নায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ। আলতাফ মাহমুদের জন্ম নলছিটি থানার কুশঙ্গল গ্রামে। তিনি ঝালকাঠি কলেজের বিএ’র ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালের জুন মাসে তিনি ও তার বড় ভাই মুজিবুর রহমান মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলের। নলছিটি থানা কমান্ডার ছিলেন বিরঙ্গল গ্রামের ইপিআর সুবেদার সেকান্দার আলী। সিভিল চীফ ছিলেন ছাত্রনেতা আলতাফ মাহমুদ। তাঁরা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েকটি সফল অভিযান চালান। ৯ আগস্ট সিকান্দার, আলতাফ, রব, চুন্নু, ফারুক প্রমুখ কাঠালিয়া থানা আক্রমণ করে পুলিশের সকল অস্ত্র নিয়ে আসেন। ১৩ নভেম্বর সেকান্দার-আলতাফ বাহিনী নলছিটি থানায় পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করে। সিকান্দার, রব, চুন্নু, আলতাফ, মাসুদ, খালেক, বিন্দু ঘোষ, ওয়াহেদ, হাবিবসহ ৪৫ জনের দল নলছিটি থানা অপারেশনে অংশ নেয়। যুদ্ধে বিজয় যখন আসন্ন তখন মালেক ও বরিশাল গোরস্তান রোডের মমতাজ উদ্দিনের পুত্র ফজলুল করিম থানার ভেতরে প্রবেশ করার সময় শত্রুর গুলিতে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা শহীদদ্বয়ের লাশ বাহাদুরপুর ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। নলছিটি থানা আক্রমণের সংবাদ পেয়ে ঝালকাঠি থেকে পাকবাহিনী এসে নলছিটির দেওপাশা ও পরমপাশা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় এবং নির্যাতন শুরু করে। এ সময় দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করার জন্য সেকান্দার ও আলতাফের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী পরমপাশা স্কুল, তালতলা ও বাসন্ডা এলাকায় অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। বিকেল ৩টিা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। আলতাফ মাহমুদ ও কবির হোসেন শীতলপাড়া পুলের নিচে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকে। তাদের একটি মাত্র এলএমজি ছিল। হঠাৎ পাকসেনাদের গুলিতে আলতাফ ও কবীর নিহত হন। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে অস্ত্র রেখে পাকবাহিনী পালিয়ে যায়। কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। আলতাফ মাহমুদকে তার গ্রামের বাড়ি কুশাঙ্গলে এবং কবির হোসেনকে রাজাপুরে তার গ্রামের বাড়িতে কবর দেয়া হয়।

নলছিটি থানা দখল যুদ্ধ

১৯৭১ সালের ১৭ মে প্রথম মুক্তিযোদ্ধারা নলছিটি থানা আক্রমণ করেন। ২ ঘন্টার যুদ্ধে নলছিটি বারৈকরণ গ্রামের ইউনুস শহীদ ও কয়েকজন আহত হন। ১৪ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী দ্বিতীয়বার নলছিটি থানা আক্রমণ করে রাজাকার ও পুলিশকে পরাস্ত করে। খাটের নিচে পালিয়ে থাকা এক রাজাকার গুলি করে সুবিদপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মালেককে হত্যা করে। ১৭ নভেম্বর পাকবাহিনী নলছিটি ফয়রা ক্যাম্প আক্রমণ করে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল না থাকায় পাকসেনারা দরগাবাড়ি পর্যন্ত যায়। ১৫ ডিসেম্বর থানা পুলিশ ও রাজাকার দল আত্মসমর্পণ করে এবং নলছিটি শত্রুমুক্ত হয়। খুলনা-বরিশাল-ঢাকার একমাত্র নদীপথ গাবখান। এ পথ বন্ধ করতে পারলে পাকবাহিনীর দক্ষিণ অঞ্চেলে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। সুলতান মাস্টার ও সুবেদার মুজিবুল হক সর্দারের দল গাবখানে কয়েকটি জলযান গুলি করে ভীতি সঞ্চার করে বাগখান নদীপথ বন্ধ করে দেয়। রাজপুরের কমান্ডার আবুল কালাম বাবলুর বাহিনীর সাথে ১৪ নভেম্বর আঙ্গারিয়া গ্রামে পুলিশ-রাজাকারদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে আবুল কালাম শহীদ হয়। সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর জীবনদাসকাঠি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প স্থাপন করেন। ২২ নভেম্বর তিনি তার বাহিনী নিয়ে রাজাপুর থানা আক্রমণ করেন। পুলিশ-রাজাকাদের গুলিতে আবদুর রহমান, রাজা ও হোসেন আলী নিহত হন। শাহজাহান ওমর ও হারুন-অর রশীদ আহত হন।


চাচৈর যুদ্ধ, ১৩ নভেম্বর

নলছিটি থানার চাচৈর যুদ্ধ দক্ষিণ বাংলার সবচেয়ে দুর্ধর্ষ যুদ্ধ ছিল। মানপাশার চাচৈর স্কুলে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। বরিশাল সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর তার বাহিনী নিয়ে স্বরূপকাঠি ক্যাম্প থেকে ১২ নভেম্বর ঝালকাঠি এসে পৌঁছেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর ফজরের নামাজের সময় পাকবাহিনী ষাটপাকিয়া পৌঁছে। এ খবর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পৌঁছলে তারা প্রস্তুত হতে থাকেন। পাকসেনারা চাচৈর খন্দকারবারিতে আগুন দেয়। ক্যাপ্টেন ওমর আগুন নেভাতে ব্যস্ত। এমনি সময় মহিউদ্দিন মানিক পাকবাহিনী দেখতে পান। মানিকের হঠাৎ বুদ্ধিতে কমান্ডার শাহজাহান ওমর বেঁচে যান। পাকবাহিনী ক্যাপ্টেন আজমতের নেতৃত্বে চাচৈর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে আগ্রসর হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সিদ্ধান্ত ছিল চাচৈর স্কুলে পৌঁছামাত্র তারা গুলি চালাবে। ১৩ নভেম্বর সকাল ৯ টা ৫ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধ চুন্নু তার দল নিয়ে পাকবাহিনী দেখামাত্র আক্রমণ করে। ক্যাপ্টেন ওমর তার বাহিনীকে দু’ভাগ করে আক্রমণ করার নির্দেশ দেন। পাকবাহিনী চুন্নুর দলকে একমাত্র বাহিনী মনে করে তাদের ধাওয়া করে শরীফবাড়ি আগুন দেয়। পাকবাহিনী রাস্তায় উঠে আসার সাথে সাথে মুক্তিবাহিনী চারদিক থেকে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। পাকসেনাদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা আউয়াল নিহত হন। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে পাকবাহিনীর বেলুচ কমান্ডার ও কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়। তাদেরকে ঝালকাঠির থানা পরিষদের গেটের কাছে এবং বেলুচ কমান্ডারকে টাউন পুলিশ ফাঁড়ির সামনে কবর দেয়া হয়। এ যুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ১৪ নভেম্বর বরিশাল থেকে পাকবাহিনীর কয়েকটি দল চাচৈর গ্রাম আক্রমণ করে। বরিশাল-পটুয়াখালীর মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল চাচৈর চলে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন নলছিটি থানা কমান্ডার সেকান্দার আলী, শাহজাহান মাস্টার, সুবেদার আবদুল হক, সুবেদার মজিবুল হক, কাউখালীর আবদুল হাই পনা, বাকেরগঞ্জের নাসির উদ্দিন, জাফর, রফিকুল হাসান বাদশা, মহিউদ্দিন মানিক, হাবিব রহমান, হালিম, কাশেম আলী, সুলতান কাজী প্রমুখ। গুটিয়ার রসিদ মোল্লাসহ কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধা চাচৈর পৌঁছে। ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে অনেক পাকসেনা, রাজাকার নিহত হয়। পাকবাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পালাতে থাকে। কয়েকজন একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মৃত্যুদন্ড দেয়। চাচৈর যুদ্ধে পরাজিত হয়োর পর পাকবাহিনী বরিশাল শহর থেকে আর বের হয়নি। চাচৈর যুদ্ধ ছিল পাকবাহিনীর শেষ সম্মুখ যুদ্ধ।

ভান্ডারিয়া-কাঠালিয়া দখল যুদ্ধ

সুবেদার জলিলের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কাঠালিয়া থানার অস্ত্র নেয়। কমান্ডার আবদুল আজিজ তার দল নিয়ে ভান্ডারিয়া থানা আক্রমণ করে এবং আনসার কমান্ডার আজাহার বিশ্বাস গ্রেনেড মেরে থানাকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন। তারা থানার অস্ত্র নিয়ে নেন। সুবেদার জলিলের জন্ম ভান্ডারিয়ার উত্তর শিয়ালকাঠি গ্রামে। তিনি কাঠালিয়া থানা ও ভান্ডারিয়ার কমান্ডার ছিলেন। ভান্ডারিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন তাজুল ইসলাম, সুবেদার মেজর জলিল, আজাহার বিশ্বাস, এনায়েত হোসেন, সৈয়দ আলমগীর হোসেন, কাজী নূরুজ্জামান, রাজ্জাক সিকদার, নূর মোহাম্মদ, মোজাম্মেল হক, কায়সার আলী, সেলিম হোসেন এমএস আজিজুর রহামন প্রমুখ।

৯ ডিসেম্বর ঝালকাঠি মুক্ত

১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠি শহরে কারফিউ জারি করা হয়। এ সময় জেবালুল ইসলাম মাইকে ঘোষণা দেয়- যাকে রাস্তায় দেখা যাবে তাকে গুলি করে হত্যা করা হবে। জেবালুল ৮ মাস পাকবাহিনীর বিভিন্ন ঘোষণা মাইকে প্রচার করে। কারফিউ জারি করে ৮ ডিসেম্বর রাতে পাকবাহিনী ঝালকাঠি শহর থেকে লঞ্চ ও গাড়িতে পালিয়ে যায়। ৯ ডিসেম্বর সকাল থেকে ঝালকাঠি মুক্ত হয়। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে ঝালকাঠি মুখরিত। অন্যদিকে স্বজন হারানোর আহাজারি। শহরে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫

          ২। মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল। গতিধারা, ঢাকা। ২০১৬