কীর্তি নারায়ণ (রাজা)

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:২১, ২৬ জুলাই ২০১৭ পর্যন্ত সংস্করণে (সিংহাসনে আরোহণ)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

রাজা রামচন্দ্রের মৃত্যুর পরে তার পুত্র কীর্তিনারায়ণ ১৬৬৮ সালে চন্দ্রদ্বীপ পরগণার ‘রাজা’ হন। তিনি যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের নাতি ছিলেন অর্থাৎ তার মাতা রামচন্দ্রের প্রথম স্ত্রী বিমলা। শেষ জীবনে তিনি মুসলমান হন ও রাজ্যচ্যুত হন।

সেনাবাহিনী সংস্কার ও জন গেরীকে বিতাড়ন

কীর্তিনারায়ণ সিংহাসনে আরোহণ করে সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করে। তার পর্তুগিজ সেনাপতি জন গেরী ১০ হাজার সৈন্য নিয়ে বিদ্রোহ করলে কীর্তিনারায়ণ তার অনুগত সেনাবাহিনী নিয়ে জন গেরীর বিরুদ্ধে মেহেন্দীগঞ্জের বল্লভপুরে তিন দিন ব্যাপী যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে গেরীর বাহিনী পরাজিত হয়, অনেক পর্তুগিজ সৈন্য নিহত হয় এবং গেরী বাকলা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

মগ-পর্তুগিজদের বিতাড়ন

কীর্তি নারায়ণ শাহ সুজা ও শায়েস্তা খানের পক্ষ নিয়ে মগ-পর্তুগিজ বিতাড়নের যুদ্ধে অংশ নেন। মগ-পর্তুগিজদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তিনি রাজ্যে অনেকগুলো দুর্গ নির্মাণ করেন। কালিজিরা নদীর পূর্ব পাড়ে জাগুয়া গ্রামে একটি মাটির দুর্গ নির্মাণ করেন। কালিজিরা নদীর পশ্চিম পাড়ে রায়পুর গ্রামে তার বাবার নির্মিত একটি দুর্গ সংস্কার করেন। বাকেরগঞ্জ রাস্তার পাশে কোটেরদোনে একটি মাটির গড়খাই নির্মান করেন এবং সেখানে সৈন্য মোতায়েন করেন। এছাড়াও শাহবাজপুরে কয়েকটি নতুন দুর্গ নির্মাণ করেন। তিনি বিদ্যাচর্চার জন্য মাধবপাশা, গুঠিয়া, হোসেনপুর, নারায়ণপুর, খলিসাকোঠা, শিকারপুর, নলচিড়া, গৈলা প্রভৃতি স্থানে অনেক চতুষ্পাঠী ও টোল নির্মাণ করেন। তখন নলচিড়ার চতুষ্পাঠী বঙ্গবিখ্যাত ছিল এবং নলচিড়াকে তখন ‘নি¤œ বদ্বীপ’ বলা হতো।


ধর্মচ্যুতি

কীর্তি নারায়ণ তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থার শিকার হয়ে ধর্ম ও রাজ্যচ্যূত হন। ঘটনাটি ঘটে হিন্দুদের ভোজন বিষয়ক সংস্কার থেকে। মগ-পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধের বিষয়ে আলোচনার জন্য কীর্তি নারায়ণ একবার নবাবের তাবুতে যান। নবাব তখন আহার করছিলেন। কীর্তি নারায়ণ নাকে কাপড় দিয়ে নবাবের সাথে কথা বলছিলেন। নবাব তার নাকে কাপড় দেয়ার কারণ জিগ্যেস করলে তিনি জানালেন যে তিনি মুসলমানের খাবারের ঘ্রাণ নিলে তার ধর্মচ্যুতি ঘটবে কারণ ঘ্রাণই অর্ধভোজন। নবাব এ কথায় অসন্তুষ্ট হয়ে পরের দিন কীর্তি নারায়ণকে আবার ডাকলেন এবং তার সামনে রান্না করা মাংসের অনেকগুলো পাত্র উন্মোচন করলেন। কীর্তি নারায়ণের নাকে এভাবে মুসলমানের রান্না করা মাংসের ঘ্রাণ ঢুকিয়ে নবাব বললেন যে কীর্তি নারায়ণ আর হিন্দু নেই, সে মুসলমান হয়ে গিয়েছে। এই থেকেই তার মুসলমান হয়ে যাওয়া।


রাজ্য অর্পণ

এরপর তিনি রাজ্য ছোট ভাই বাসুদেবের হাতে অর্পণ করে রাজধানী ত্যাগ করেন। মুসলমান হয়ে তিনি নতুন মুসলিম স্ত্রী গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আর রাজধানীতে ফেরেননি তবে ছোট ভাই বাসুদেব তার পরামর্শ অনুসারেই রাজ্য চালাতেন।

মৃত্যু

কত সালে কীর্তি নারায়ণ বসু রাজ্য ভাইয়ের হাতে অর্পণ করেন এবং কত সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন সে ইতিহাস এখনো অনুদঘাটিত।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।