হোসাইন আহমদ (রহ.), তিমিরকাঠির হুজুর

Barisalpedia থেকে

ঝালকাঠির নলছিটি থানাধীন তিমিরকাঠি গ্রামটি সুগন্ধা নদী থেকে বেশি দূরে নয়। ছারছীনা মাদ্রাসার সেই বিখ্যাত তিমিরকাঠির হুজুর হযরত মাওলানা হোসাইন আহমদ (রহ.) এই গ্রামের লোক। কায়েদ সাহেব হুজুরের মত বুজুর্গ ব্যক্তিরও যিনি ওস্তাদ সেই তিমিরকাঠির হুজুর। দীর্ঘকাল তিনি ছারছীনা দরবারের একনিষ্ঠ একজন খাদেম, মাদ্রাসার বোর্ডিং সুপার, মাদ্রাসার শিক্ষক এবং ছারছীনার দাদা পীর হযরত নেছার উদ্দীন (রঃ)- এর ছিলেন এক বিশেষ সহকারী।

শিক্ষা

হযরত মাওলানা হোসাইন আহমদ (রঃ) এর পিতার নাম হযরত আফসার উদ্দীন খান। হোসাইন আহমদ (রঃ) এর প্রাথমিক শিক্ষা নিজ এলাকায়। এরপর তিনি নোয়াখালীতে মাদ্রাসায় পড়বার জন্য গমন করেন। নোয়াখালীতে হযরত ওমর আলী নামক এক বিশিষ্ট ইসলামী শিক্ষাবিদ এবং বুযুর্গ ব্যক্তির সান্নিধ্য লাভ করেন এবং আরবী সাহিত্য বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান লাভ করেন। এরপর তিনি নোয়াখালির ঐতিহ্যবাহী টুমচর মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। টুমচর মাদ্রাসা থেকে ফারেগ হবার পর তিনি আসেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদ্রাসায়। যখন হোসাইন আহমদ (রঃ) আনুমানিক বয়স চব্বিশ বছর, তখন তিনি ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য ভর্তি হন। দেওবন্দ থেকে তিনি দাওরায়ে হাদিসে বিশেষ শিক্ষা লাভ করে ফাযেলে দেওবন্দ হিসেবে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

কর্মজীবন

দেশে আসার পর তিনি তিমিরকাঠি সিনিয়র মাদ্রাসা, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইসলামী শিক্ষা প্রচার ও প্রসারের জন্য গভীর মনোনিবেশ করেন। তিনি একবার ভারতের ফুরফুরা শরীফে ওয়াজ মাহফিলে শরীক হবার জন্য গিয়েছিলেন। ওয়াজমাহফিলের প্যান্ডেলে তিনি বসে আছেন ওয়াজ শোনবার জন্য। ষ্টেইজে থেকে ঘোষণা দিলেন ফুরফুরা পীর সাহেব হুজুর- বরিশাল থেকে এক মাওলানা এই মাহফিল শোনবার জন্য এসেছেন। নাম তার হোসাইন আহমদ, তাকে ষ্টেইজে নিয়ে আসুন। ষ্টেইজে ছারছীনার মরহুম হযরত নেছার উদ্দীন (রঃ) ছিলেন উপবিষ্ট। সকলে তাজ্জব হয়ে গেলেন হুজুর কিভাবে জানলেন হযরত হোসাইন আহমদ মাহফিলে এসেছেন। হীরকে হীরক চেনে, আল্লাহ তায়ালা গায়েবী সাহায্যে এ খবর পৌঁছে দিয়ে ছিলেন ফুরফুরা পীর সাহেব কেবলার খেদমতে। ফুরফুরার পীর সাহেব হুজুরের সাথে হযরত হোসাইন আহমদ (রঃ) এর পরিচয় ঘটলো। পাশেই ছারছীনার হযরত দাদা পীর হযরত নেছার উদ্দীন (রঃ) উপবিষ্ট।

ফুরফুরার পীর সাহেব হুজুর, ছারছীনার পীর সাহেব হুজুরকে বললেন- এই মাওলানা হোসাইন আহমদকে ছারছীনাতে নিয়ে যাও। পীর সাহেব হুজুর সেদিনই তাঁকে ছারছীনাতে নিয়ে এলেন এবং মাদ্রাসার মোদাররিস পদে নিয়োগ প্রদান করলেন। কিছু দিন পর তাঁকে বোর্ডিং সুপার পদে নিয়োগ দেয়া হল। এ পদে তিনি আমৃত্যু আমানতদার হিসেবে ন্যায় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

গ্রন্থ

হযরত তিমিরকাঠির হুজুর জন সাধারণের তালিম ও হেদায়েতের জন্য এক খানা ধর্মীয় পুস্তক প্রণয়ন করে প্রকাশ করেছিলেন। সে পুস্তকের নাম হচ্ছে “ছাবিলুন নাজাত”।

মৃত্যু

হযরত হোসাইন আহমদ (রঃ) ঝালকাঠিবাসীর জন্য শুধু নয়। তিনি গোটা দেশবাসীর জন্য একজন আদর্শ পুরুষ। সম্ভবত ১৯৬৫ বা ৬৬ সালে বার্ধক্য জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পরকালের যাত্রী হন।



তথ্যসূত্র: আবদুর রশীদ। এই সেই ঝালকাঠি। আল ইসলাম পাবলিকেশনস, ঝালকাঠি। ২০০১।