হেমচন্দ্র ঘোষ

Barisalpedia থেকে
হেমচন্দ্র ঘোষ অগ্নিযুগের বিশিষ্ট বিপ্ল¬বী এবং ‘মুক্তিসংঘে’র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল বানারীপাড়ার গাভা গ্রামে। তবে আইন ব্যবসায়ী পিতা মথুরানাথের কর্মক্ষেত্র ঢাকায় তাঁর জন্ম ২৪ অক্টোবর ১৮৮৪ সালে। তাঁর মৃত্যু ৩১ অক্টোবর ১৯৮০।

ঢাকার জুবিলি স্কুলের ছাত্রাবস্থায় সশস্ত্র আন্দোলনের দিকে তিনি আকৃষ্ট হন। তাঁর শরীরচর্চার গুরু ছিলেন শ্যামাকান্ত ও পরেশনাথ। লাঠিখেলার দীক্ষা বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের কাছে। রাজনৈতিক জীবনের শুরু ১৯০১খ্রিস্টাব্দে। উল্লাসকর দত্তের সহায়তায় ওই বছরই বারীন ঘোষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। অনুশীলন ও যুগান্তরগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ রেখে তিনি নূতন দল গঠনের প্রেরণা অনুভব করেন। ১৯০৫ খৃস্টাব্দে শ্রীশচন্দ্র পাল, হরিদাস দত্ত, গুণেন ঘোষ প্রমুখ সহযোগিদের নিয়ে ‘মুক্তিসংঘ’ গঠন করেন। দলের তিনি ছিলেন বড়দা এবং হরিদাস দত্ত মেজদা। ১৯০৮ খৃস্টাব্দ থেকে ১৯১৫ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত আত্মোন্নতি সমিতির সহযোগিতায় মুক্তিসংঘ একাধিক বিপ্ল¬ব প্রচেষ্টা সম্পন্ন করেছেন। তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য প্রফুল¬ চাকীর গ্রেপ্তারকারক নন্দলাল ব্যানার্জির হত্যা(৯.১১.১৯০৮) এবং ‘রডা-অস্ত্র-অপহরণ’(২৬.৮.১৯১৪)। ১৯০৯ খৃস্টাব্দে আগরতলায় গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর জেলে কাটান। ভারত রক্ষা আইনে ছয় বছর কারারুদ্ধ থাকার পর ১৯২০ খৃস্টাব্দে ছাড়া পেয়ে কলকাতায় আসেন ও গোপনে দল সংগঠনে সক্রিয় হন। বিপ্লব আয়োজনের উদ্দেশ্যে ১৯২৬ খৃস্টাব্দে ‘বেণু’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১৯২৮ খৃস্টাব্দে কলকাতা কংগ্রেসে তিনি ও তাঁর দল বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এই অধিবেশনে ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ নামে পুরোপুরি সামরিক ধাঁেচ যে স্বেচ্ছাসেবক দলটি গঠিত হয়েছিল তার কার্যাবলি মুক্তিসংঘের সদস্যদের পরিচালনায় পরবর্তীকালে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই দলের সদস্যরা মেদিনিপুরের তিন জন এবং কুমিল্ল¬ার একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করেন। হেমচন্দ্র ও সত্যরঞ্জন বকসি পরিচালিত ‘মুক্তিসংঘ’ পরিচিত হয় ‘বি.ভি’ (বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স) নামে। বিনয়-বাদল-দীনেশের অলিন্দ-যুদ্ধকে সফল করতে সহায়তা করেন। ১৯৩০ খৃস্টাব্দে দার্জিলিং-এ তদানীন্তন বাংলার গর্ভনর জন অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টা করেন। ১৯৩৮ খৃস্টাব্দে সুভাষচন্দ্রের সমর্থনে সরব হন। ১৯৩০ খৃস্টাব্দে থেকে ১৯৪৬ খৃস্টাব্দে মধ্যে জেলের বাইরে ছিলেন মাত্র দেড় বছর। এই অকৃতদার বিপ্লবী ভারত সরকারের ‘তাম্রপত্র’ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান