হাবীবুল্লাহ, বি. ডি.

Barisalpedia থেকে

বাকসম্রাট হিসেবে খ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও লেখক। পিতা: মৌলভী আবদুল মজিদ অজিউল্লাহ। জন্ম: ১৯০৮ সাল। মৃত্যু: ১২ নভেম্বর ১৯৯৮ সাল। গ্রাম: লোহালিয়া, থানা ও জেলা : পটুয়াখালী।

শিক্ষাজীবন

বি.ডি. হাবীবুল্লাহ ১৯২৫ সালে পটুয়াখালী লতিফ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯২৭ সালে বি. এম কলেজ থেকে আই. এ. এবং ১৯২৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি. এ. এবং ১৯৩৯ সালে বি.এল ডিগ্রী লাভ করেন।

কর্মজীবন

১৯৩৪ এবং ১৯৩৫ সালে বাকসম্রাট বি.ডি. হাবীবুল্লাহ আমতলী এবং কুতুবদিয়ার নব প্রতিষ্ঠিত হাইস্কুলে নামমাত্র বেতনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪২ সালের মে মাস তিনি পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গে পাট নিয়ন্ত্রণ বিভাগে প্রপাগান্ডা অফিসারের কাজ করে ১৯৪২ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর বরিশাল বারে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বরিশাল বারের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন ছিলেন।

শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা

১৯৪২ থেকে ১৯৭০ সন পর্যন্ত তিনি বরিশাল পটুয়াখালী জেলার প্রায় সমস্ত স্কুলেই শিক্ষার অগ্রগতির জন্য বক্তৃতা করেন এবং অর্থ আদায়ে সাহায্য করেন। বরিশাল আইন কলেজ, নাইট কলেজ, মহিলা কলেজ, বরিশাল কলেজ, সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, পটুয়াখালী কলেজ স্থাপনের পেছনেও বাকসম্রাটের অবদান রয়েছে। ১৯৭৩ সনে তিনি বরিশাল স্কুল অব অরেটরী স্থাপন করেন।

রাজনৈতিক জীবন

১৯২১ সালে স্বরাজ ও খেলাফত আন্দোলনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেই জনাব হাবীবুল্লাহ রাজনৈতিক জীবন শুরু। ১৯২২ সন থেকে শুরু হয় তাঁর জনসেবা। ১৯৩০ সন থেকে ১৯৫৮ সন পর্যন্ত তিন কৃষক-শ্রমিক পার্টিতেই ছিলেন। ১৯৫৪ সনের নির্বাচনে বাকসম্রাট শেরে-বাংলার সঙ্গে সারা পূর্ব পাকিস্তান ভ্রমণ করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান পরিষদে নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ৯২(ক) ধারা প্রয়োগ এবং শেরে বাংলাকে স্বগৃহে নজরবন্দী রাখার প্রতিবাদে বাকসম্রাট এবং তার অনুজ লকিতুল্লাহ সাহেব বরিশালে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করে প্রথম বারের মত কারাবরণ করেন। বাকসম্রাট গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের নেতা হিসাবে গণতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রামে অনলবর্ষী বক্তৃতা দিয়ে জনাব লকিতুল্লাহ, আবদুল আজিজ তালুকদার, গোলাম আহাদ চৌধুরী, সৈয়দ মাহবুব প্রভৃতির সঙ্গে ১৯৬৮ সনে দ্বিতীয়বার কারাবরণ করেন। সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী ফাতেমা জিন্নার নির্বাচন সংগ্রামে বাকসম্রাট কঠোর পরিশ্রম করেন।

১৯৩০ সালে গলাচিপায় রুছমত আলী খান, মহিউদ্দিন আহাম্মদ প্রমুখকে নিয়ে সাতদিন অনশন করে তিনি নিশি বাবু ডাক্তার, ডাক্তার আবদুল লতিফ মোল্লা এবং কালামুন্সীর সহায়তায় বরগুনা দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি পটুয়াখালী মহকুমা কল্যাণ সমিতি স্থাপন করেন। ১৯৪১ সালের শেষ দিকে ভোলার দৌলৎখাঁ এলাকায় প্লাবণ পীড়িত দুর্গত মানুষের মধ্যে তিনি সরকারী সাহায্য বিতরণ করেন।

সাহিত্যকর্ম

সাহিত্যের মাধ্যমে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি একজন সফল লেখক ছিলেন। যুক্ত বাংলায় পল্লী ভাষায় তিনিই প্রথম ১৯৪২ সালে লেখেন তার ‘পল্লী মঙ্গল’ নাটক। ১৯৪৯ সালে ভন্ডপীরের সর্বনাশা শোষণ বন্ধ করতে তিনি লেখেন ‘হেদায়েতি ব্লাক মাকেটর্’ এবং ভন্ডপীরদের কাফেরী ফতোয়া সম্বলিত দশখানা কেতাবের প্রতিবাদে ১৯৫০ সালে তিনি লেখেন ‘দুরমুজ কেতাব’। ১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষবহ্নি নির্বাপণ করতে তিনি লেখেন নাটক ‘মিলন-চুক্তি। ১৯৫৮ সালে লেখেন শ্লেষপূর্ণ পুস্তক ‘এই কি প্রগতি?’ ১৯৬১ সালে তিনি লেখেন জীবনীগ্রন্থ ‘শেরে বাংলা’। বরিশালে অশ্বিনী কুমারের সত্য-প্রেম পবিত্রতার আদর্শ ছাত্র যুব সমাজের মধ্যে আবার তুলে ধরার জন্য লিখলেন ‘যুগস্রষ্টা অশ্বিনী কুমার’ এবং আরো লিখলেন ‘দর্পণ’। তাঁর অপ্রকাশিত পুস্তকের মধ্যে রয়েছে বিশ্বশান্তির উপর অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা কাব্য নাটক ‘মহামিলন; ইনসানিয়াত’ (নাটক), ‘বিশ্বকবি নজরুল’, ‘গল্প সম্ভার’, ‘মিথ্যার মনুমেন্ট’ প্রভৃতি।

মৃত্যু

১২ নভেম্বর ১৯৯৮ সালে এই লেখক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মৃত্যু বরণ করেন।



তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।