স্বদেশবান্ধব সমিতি

Barisalpedia থেকে

১৯০৩ খৃৃস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব করা হলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাবার জন্য বরিশাল শহরে প্রবীণদের নিয়ে নেতৃসংঘ এবং যুবকদের নিয়ে কর্মীসংঘ গঠন করা হয়। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ আগষ্ট নেতৃসংঘ ও কর্মীসংঘ একত্রিত হয়ে ‘স্বদেশ বান্ধব সমিতি’ গঠন করা হয়। অশ্বিনী কুমার ছিলেন স্বদেশ বান্ধব সমিতির সভাপতি এবং ডঃ নিশিকান্ত বসু সমিতির প্রচারক ছিলেন। পরে অশ্বিনী কুমার দত্ত আন্দোলনটির একটি অসাম্প্রদায়িক চরিত্র সৃষ্টির জন্য দু’জন হিন্দু ও দু’জন মুসলমান প্রচারক নিযুক্ত করেন। সমিতির উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গভঙ্গের তীব্র প্রতিবাদ, স্বদেশী আন্দোলন, সরকারী কর্মচারীদের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন , মাদকদ্রব্য সেবন নিবারণ, স্ত্রীশিক্ষা প্রচলন, সেবকদল গঠন, ব্যায়াম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, স্বদেশী বস্ত্র তৈরি, গ্রাম্য সালিশী প্রভৃতি গ্রামে গ্রামে স্বদেশ বান্ধব সমিতির শাখা গঠন করা হয় এবং স্বদেশ বান্ধব সমিতির মাধ্যমে অচিরেই বঙ্গভঙ্গ রদ ও স্বদেশী আন্দোলন জনপ্রিয়তা লাভ করে।


স্বদেশবান্ধব সমিতির কার্যাবলী এত ব্যাপক ও বিপ্লবী ছিল যে পূর্ব বঙ্গ ও আসামের চীফ সেক্রেটারি মি. লায়ন ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টম্বর মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট এ সম্পর্কে রিপোর্ট দিতে বাধ্য হন। লায়ন লিখলেন “ইহা দেখা যায় যে প্রদেশের অন্যান্য জেলায় বিদ্যমান প্রতিবাদী সংগঠনের চেয়ে বাকেরগঞ্জের অভ্যন্তরের আন্দোলনকারী সংগঠন অনেক শ্রেয় যা ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। বান্ধব সমিতি যার প্রশংসনীয় উদ্দেশ্য আছে তা ভিতরে বিপ্লবী দলের সাথে যুক্ত এবং রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার এজেন্ট এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৫০টি শাখা আছে এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।” লায়ন লিখেছেন, সকল শাখা ব্রিটিশ সরকারের অধীন হতে স্বাধীনতা চায়। এ অনুভ‚তি সমিতি ও শাখাসমূহের সাধারণ সভায় ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করে। পরিশেষে সরকার স্বদেশবান্ধব সমিতি বন্ধ করে দেয়।


বরিশালের স্বদেশ বান্ধব সমিতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে কাঁপিয়ে তোলে। ভারত সচিব মিঃ মর্লে পার্লামেন্টকে জানিয়েছিলেন যে, বরিশাল ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত সমস্যা তার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।” ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর বাংলার ৯ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন, বরিশালের অশ্বিনী কুমার দত্ত, অধ্যাপক সতীশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতা এবং বাংলার অন্যান্য জেলার পুলিন বিহারী দাশ, কৃষ্ণ কুমার মিত্র, রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিক, শচীন্দ্র প্রসাদ বসু, ভ‚পেশ চন্দ্র নাগ এবং শ্যাম সুন্দর চক্রবর্তী। বরিশাল অনুশীলন দলের প্রতিষ্ঠাতা সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে মেদিনীপুরের মহিষাদলে অন্তরীণ করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট হাওয়ার্ড অশ্বিনী কুমারকে গ্রেফতারের কথা জানালেন। তাঁকে ল²ৌ জেলে আটক করে রাখা হলো। সতীশ চন্দ্রকে রেঙ্গুনে পাঠানো হলো। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রæয়ারি অশ্বিনীকুমার মুক্তি লাভ করেন।

ইংরেজ সরকার শেষ পর্যন্ত ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর দিল্লীর দরবারে বঙ্গভঙ্গ রদ করার কথা ঘোষণা করে। রাজধানী কলকাতা হাতে দিল্লীতে স্থানান্তর করা হয়।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।