সৈয়দ উদ্দীন আহমেদ

Barisalpedia থেকে

প্রথম জীবনে নওয়াব সলিমুল্লাহর প্রাইভেট সেক্রেটারি ও পরবর্তী জীবনে ম্যাজিস্ট্রেট। পিতা: মিনহাজউদ্দীন আহমেদ। জন্ম: ১৮৯০ সাল। মৃত্যু: ৩১ মার্চ ১৯৫৫। গ্রাম: ভারুকাঠি, ইউনিয়ন: গাভারামচন্দ্রপুর, থানা: ঝালকাঠি সদর, জেলা: ঝালকাঠি।

শিক্ষা

খান সাহেব সৈয়দ উদ্দীন আহমেদ ১৮৯০ সালে ভারুকাঠি মিঞা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০৪ সালে এনট্রান্স পাশ করেন। বরিশালের মুসলমান-হিন্দুদের মধ্যে তিনি ১৩তম গ্রাজুয়েট। পরবর্তীতে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস বা বি.সি.এস অফিসার ছিলেন। তিনি ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন। তিনি সব জায়গায় ভারুকাঠীর কুট্টি মিঞা হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

কর্মজীবন

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এফ. এ. বা ফার্স্ট আর্টস এবং বি.এ. পাশ করেছিলেন সৈয়দ উদ্দীন আহমেদ। প্রথম জীবনে তিনি নওয়াব সলিমুল্লাহর প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। পরবর্তীকালে তখনকার দিনের সম্ভ্রান্ত পদ সার্কেল অফিসার হিসাবে নিয়োগ পান চাঁদপুর মহকুমার হাজীগঞ্জে। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি লক্ষ্য করলেন এবং লোকজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলেন যে ঐ এলাকার বহু হিন্দু-মুসলমান পরিবার তাদের চাষাবাদের জমি ধনী ব্যক্তিদের কাছে বন্ধক দিয়ে রেখেছেন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী জমি বন্ধক রেখে তারা টাকা নিতেন। যতদিন ঐ টাকা ফেরত না আসতো ততদিন ঐ জমি মহাজনের অধিকারেই থাকতো। মহাজনরা এভাবেই যুগ যুগ ধরে অন্যের জমি ভোগ করতেন। সৈয়দ আহমেদ সাহেব ঐ মহাজনদের কৌশলে বোঝালেন যে, “গরীবদের জমির ফসল ভোগের দরুন তাদের ঋণ অনেক আগেই উসুল হয়ে গিয়েছে। সুতরাং তারা যদি জমিগুলো ছেড়ে দেন তাহলে গরীব মানুষগুলো অনাহারে দিন না কাটিয়ে বেঁচে যেতে পারেন এবং মহাজনরাও তাঁদের মৃত্যুর আগে পরে স্বর্গীয় শান্তি উপভোগ করতে পারেন।” সবাই না হলেও বেশ কিছু মহাজন এই কথাকে মেনে নিয়েছিলেন এবং এর সুফল হিসাবে বহুদিন পর ঐ এলাকার মানুষ শান্তির মুখ দেখতে পায়। এমনিভাবে সৈয়দ উদ্দীন আহমেদ ঋণদাতা ও ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে এমন একটা প্রক্রিয়া চালু করেছিলেন যার ফল হিসাবে এলাকায় অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থার সমূহ উন্নতি ঘটে। এরই মধ্যে এ. কে. ফজলুল হক সাহেবের মন্ত্রীত্বের আমলে পাশ হয়ে গেল "Debt Settlement Act" যার মূল প্রবক্তা ছিলেন সৈয়দ উদ্দীন আহমেদ। এই মহান অবদানের জন্য সরকার ১৯৩৫ সালে সৈয়দ আহমেদকে ভূষিত করলেন “খান সাহেব” উপাধিতে। সমাজ সেবায় সৈয়দ উদ্দীনের অবদান একাধিক। যেমন, হাজীগঞ্জের বিখ্যাত জামে মসজিদ যার উদ্বোধন করেন শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক। তাছাড়া মহিলাদের মাদ্রাসা, হাসপাতাল, স্কুল, রাস্তা, পুল এখনও এই মহান পুরুষের অমর স্মৃতি বহন করে চলেছে। তিনি বহু ক্ষেত্রে তাঁর বিচক্ষণতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।

তিনি যখন নোয়াখালিতে ম্যাজিস্ট্রেট তখন চরের দখল নিয়ে বাংলার জমিদার ও তালুকদার সম্প্রদায় ছিলেন বিপদগ্রস্ত। এমনি একটি কেসে জনৈক ভূঁইয়া সাহেবকে নানা ধরনের মামলায় জড়িয়ে দিয়েছিল তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা। খান সাহেবের কোর্টেই ভূঁইয়া সাহেবকে জড়ানো হলো হাটে গরু চুরির কেসে। ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই কয়েকটা প্রশ্ন উপস্থাপিত করে প্রমাণিত করলেন যে ভূঁইয়া সাহেব সম্পূর্ণ নির্দোষ। এই ঘটনার পর তিনি বহু লোকের বাহবা কুড়িয়েছিলেন। তিনি সেই বৃটিশ আমলে কোলকাতার বড় সরকারী মার্কেটগুলোর মার্কেটিং সুপার ছিলেন। তখন বেচাকেনার নামে অনেক অনিয়ম চলতো এমনকি ইউরোপিয়ান এবং এ্যাংলো ইন্ডিয়ান সুপারদের সময়ও। খান সাহেব এসব বন্ধ করেছিলেন অসীম সাহসিকতা ও জীবনের ঝুকি নিয়ে। মানুষ হিসাবে খান সাহেব জীবন ভর ছিলেন অত্যন্ত পরোপকারী ও স্নেহশীল ছিলেন। নিজ আত্মীয় স্বজন এমনকি পরিচিত হিন্দু মুসলমানদের পারিবারিক দায় দায়িত্ব যেমন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও বিয়ে-শাদীর ব্যাপারেও তাঁর সাহায্য বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা ছিল।

মৃত্যু

খান সাহেব সৈয়দ উদ্দীন আহমেদ ১৯৫৫ সালের ৩১ মার্চ জর্ডন রোডের নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।



তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।