সৈয়দ ইমামউদ্দিন চৌধুরী

Barisalpedia থেকে

নলচিড়ার জমিদার পরিবার হিসেবে খ্যাত মিয়া পরিবারের অন্যতম আদি পুরুষ সৈয়দ ইমামউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন বরিশাল অঞ্চলে ইংরেজ বিরোধী যুদ্ধের এক ঐতিহাসিক বীরপুরুষ। তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে ১৭৭৯ সালে যে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন তা এখনো শরিকলের যুদ্ধ নামে খ্যাত।


বংশ পরিচয়

সৈয়দ ইমামউদ্দিন চৌধুরীর পূর্ব পুরুষ ছিলেন উলফত গাজী। উলফৎ গাজী ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিশ্বাসভাজন সেই ব্যক্তি যাকে সম্রাট জাহাঙ্গীর সন্তুষ্ট হয়ে চন্দ্রদ্বীপ থেকে সৃষ্ট নাজিরপুর পরগনা প্রদান করেছিলেন। সৈয়দ উলফত গাজীর পুত্র সৈয়দজান, তাঁর পুত্র আইনউদ্দীন, তাঁর পুত্র শামসুদ্দীন, তাঁর পুত্র হোসেন উদ্দীন এবং তাঁর পুত্র ইমাম উদ্দীন।


ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

পলাশী যুদ্ধের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলার একদল সৈন্য বরিশালের নাজিরপুর পরগণায় আশ্রয় নেয়। নাজিরপুর পরগণার জমিদার সৈয়দ ইমামউদ্দিন চৌধুরীর প্রেরণায় পলাশীর সৈন্যরা গৌরনদীর শরিকলে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। সৈয়দ ইমাম উদ্দিন ইংরেজ কোম্পানিকে খাজনা দেয়া বন্ধ করে দেন। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেষ্টিংসের নির্দেশে ঢাকার এ্যাটর্নি পিট ১৭৭৭ খৃৃস্টাব্দে ইমাম উদ্দিনকে বন্দী করে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার প্রাদেশিক কাউন্সিলের সদস্য মি. রোজ সৈয়দ ইমামউদ্দিনের মুক্তির জন্য হেষ্টিংসের নিকট আবেদন জানায়। মুক্তি পেয়ে ইমামউদ্দিন যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। তিনি বাড়ির চারদিকে পরিখা খনন করেন এবং সশস্ত্র কৃষকদের সংঘবদ্ধ করেন। ইংরেজ সরকার ইমামউদ্দিনের বিদ্রোহের সংবাদ পেয়ে একদল সিপাহী প্রেরণ করেন এবং তারা শরিকল দুর্গ আক্রমণ করে। এক তীব্র সংঘর্ষের পর শরিকল দুর্গের পতন হয়। অতঃপর ইংরেজ সিপাহীরা সৈয়দ ইমামউদ্দিনের নলচিড়ার খানাবাড়ি আক্রমণ করে। কামানের গোলার আঘাতে বাড়ির ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। কামানের গোলার আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেয়াল খানাবাড়িতে এখনও আছে। নলচিড়া মিয়া বাড়িতে কয়েকটি কামান ছিল। পরাজয়ের পর কয়েকটি কামান দীঘিতে ফেলে দেয়া হয়।


উপসংহার

শরিকল বন্দরের পশ্চিম পাশে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ আজও অতীতের স্মৃতি বহন করছে। ইমাম উদ্দিন তাঁর সীমিত জনবল নিয়ে ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে যে বীরত্বের পরিচয় দেন তা বরিশাল তথা বাংলার জনগণের জন্য এক গৌরবের ইতিহাস।



তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনিী, ঢাকা। ২০১০