সৈয়দ আশরাফ হোসেন

Barisalpedia থেকে

রাজনীতিবিদ। সৈয়দ আশরাফ হোসেন পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ধুলিয়া গ্রামে ১৯২৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ আসমত আলী, মাতা আজমুন নেছা। তিনি ১৯৪৪ সালে বরিশাল একে স্কুল থেকে মেট্রিক এবং ১৯৪৬ সালে বিএম কলেজ থেকে আইকম পাস করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকম অনার্সে ভর্তি হন। তিনি ১৯৫২ সালে অনার্স এবং ১৯৫৩ সালে এমকম পাস করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকায় দাঙ্গাবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। এমনকি তিনি মুসলিম লীগের সেক্রেটারি শাহ আজিজুর রহমানের গু-া বাহিনীর আক্রমণে তার দুটো দাঁত ভেঙে যায়। ১৯৫১ সালে যুবলীগ প্রতিষ্ঠায় তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছাত্র ফেডারেশনের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি কমিউনিস্ট দলের সংস্পর্শে সত্যেন সেনের অনুসারী হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা আন্দোলনে তিনি বীর বাঙালির ভূমিকা পালন করেন। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে দশ জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণ মিছিল বের করে। সৈয়দ আশরাফ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিলে যোগ দেন। গুলিবিদ্ধ সালামের লাশ নিয়ে সৈয়দ আশরাফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে গেছেন। সেখানে তার ভাই ড. ফজলুর রহমান কর্মরত ছিলেন। তিনি বরকতের রক্তমাখা শার্ট খুলে সৈয়দ আশরাফের হাতে দিয়ে তাকে পালাতে বলেন। সেই রক্তমাখা শার্ট নিয়ে তার সতীর্থ আবদুল লতিফকে নিয়ে তিনি বরিশাল চলে আসেন। তারপর বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে তিনি গলাচিপায় প্রচার চালান। তিনি কিছুদিন রংপুর কারমাইকেল কলেজের কমার্সের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের অডিট সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠিত হলে তিনি সরকারি চাকরি ত্যাগ করে ন্যাপে যোগ দেন। এ সময় নলিনী দাসের নির্দেশে তিনি বরিশালে চলে আসেন এবং বামপন্থী রাজনীতিকে শক্তিশালী করেন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। তাঁকে বরিশালের ভাটিখানা থেকে গ্রেফতার করা হয়। অনেকদিন কারা ভোগের পর মুক্তি পান। ১৯৬৫ সালে বাউফল থেকে তিনি মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভোটে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার এমপিএ নির্বাচিত হন। আইন সভায় তিনি বিরোধী দলের ডেপুটি লিডার ছিলেন। আইন সভায় তিনি নির্যাতিত মানুষের কথা বলেছেন। কৃষি ঋণ মওকুফের জন্য আন্দোলন করেছেন। ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়ে মৃত শত শত লোকের লাশ নিজ হাতে মাটি দিয়েছেন। ঝড়ের পর পর তিনি ও কবি খালেক ঢাকায় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে যান। ১৯৭১ সালে নিজ এলাকায় মুক্তিবাহিনী গঠন করে পাকবাহিনী ও দালালদের প্রতিরোধ করেন। ২০০৮ সালে ৩ মে রাত ১০:৪৫ মিনিটে ঢাকা ইস্টার্ন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।