সুশীলকুমার মুখোপাধ্যায়

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫৪, ১৯ এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত সংস্করণে

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

প্রখ্যাত মৃত্তিকাবিজ্ঞানী এবং কলকাতা ও কল্যাণী দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব উপাচার্য সুশীলকুমার মুখোপাধ্যায়ের (১.১.১৯১৪ - ১৮.১১.২০০৬) আদি বাস নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি গ্রামে। পিতা ছিলেন হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক। (সংসদ চরিতাভিধানে তাঁর গ্রামের নাম ফুলকাঠি লিখিত আছে, কিন্তু বরিশালে ফুলকাঠি নামে কোনো গ্রাম নেই)

সুশীলকুমার গ্রামের স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে কলকাতায় রিপন স্কুলে পড়াশোনা করেন। রিপন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, রিপন কলেজ (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে আই.এসসি. ও কেমিস্ট্রি অনার্স-সহ বি.এসসি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এম.এসসি. পাশ করেন। বিশিষ্ট রসায়নবিদ বিজ্ঞানী জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে গবেষণা করেন। গবেষণার স্বীকৃতি পান ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.এসসি. ডিগ্রিতে। ‘বড়ো হয়ে যেন দেশের মুখ রাখতে পারিস, দেখিস’ ছাত্রের উপর বর্ষিত গুরু আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের এই নির্দেশ পালন করে গিয়েছেন অক্ষরে অক্ষরে। কলকাতা ও কল্যাণী দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৬-৭৮ খ্রিস্টাব্দে। দীর্ঘ গবেষণা কাজের প্রধান বিষয় ছিল সয়েল সায়েন্স বা মৃত্তিকাবিজ্ঞান। এদেশে মৃত্তিকাবিজ্ঞান ও মৃত্তিকা-রসায়ন গবেষণায় অন্যতম অগ্রণী বিজ্ঞানী। মৃত্তিকা-সংক্রান্ত নানা পরীক্ষানিরীক্ষায় অনেকসময় তাঁকে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে, ওড়িশার নির্জন সমুদ্রতটে বা উত্তরবঙ্গ আসামের জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে ঘুরতে হয়েছে। মৃত্তিকা-কণা, মৃত্তিকার আয়ন-এক্সচেঞ্জ, থারমোডিনামিক্স ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তাঁর গবেষণা আন্তর্জাতিক প্রথম সারিতে স্থান পেয়েছে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগে অধ্যাপক, পরে ‘আচার্য পি.সি. রায় প্রফেসর অফ এগ্রিকালচারাল কেমিস্ট্রি অ্যান্ড সয়েল সায়েন্স’- এই সম্মানজনকপদে ছিলেন। কলকাতার বোস ইনস্টিটিউট এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কালটিভেশন অফ সায়েন্স সংস্থার ডিরেক্টরপদে ছিলেন। একসময় ‘ইউনেস্কো- প্রফেসর পদ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া যেতে হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটির সেক্রেটারি, এশিয়াটিক সোসাইটির সহ-সভাপতি, ইন্টারন্যাশনাল সোসাসইটি অফ সয়েল সায়েন্স-এর সদস্য ইত্যাদি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস-এর মাসিক পত্র ‘এভরিম্যান্স সায়েন্স’ পত্রিকাটির সম্পাদনা করে গিয়েছেন একটানা প্রায় চল্লিশ বছর। এছাড়া দেশ-বিদেশের নানা পত্রপত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রায় দুশো গবেষণাপত্র ও একাধিক বই লিখে গেছেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা বিষয়ে তিনি ছিলেন বিজ্ঞান সত্যেন বোসের সার্থক উত্তরসূরি। খ্যাতির শীর্ষে থেকেও অতি সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবন যাপন করে গিয়েছেন। সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসংক্রান্ত যেকোনো প্রগতিশীল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান