সুলতানী আমলে চন্দ্রদ্বীপের ধর্ম ও সমাজ

Barisalpedia থেকে

চন্দ্রদ্বীপ সমাজ ব্যবস্থা ধর্মকেন্দ্রিক ছিল। চন্দ্রদ্বীপের রাজা দনুজমর্দন ও তার বংশধররা বাকলা সমাজের অধিপতি ছিলেন। ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ও বৈদ্যরা সমাজের নেতৃস্থানীয় ছিল। উৎপাদিত অর্থে তারা জীবনযাপন করত। সমাজের সকল সুযোগ-সুবিধা তারাই ভোগ করত। নিম্নশ্রেণীর নমঃশূদ্র, জেলে ও নাথ সমাজে নিষ্পেষিত ও নির্যাতিত ছিল। বাকলা সমাজের প্রাধান্য থাকায় বৌদ্ধধর্ম আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যায়। নাথ, যোগী, নমঃশুদ্র ও জেলেরা বৌদ্ধ ধর্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করে। ১৫ শতকে মুসলমানদের প্রভাবে সমাজে আরও পরিবর্তন আসে। গৌড়ের সুলতানরা এ দেশকে আপন বলে গ্রহণ করলেও সমাজে কিছু কিছু সাম্প্রদায়িকতা দৃষ্ট হয়। বিজয় গুপ্তের মনসা মঙ্গল কাব্যে হিন্দুর প্রতি মুসলমান কাজীর অ্যাচারের বর্ণনা আছে:

“হারামজাত হিন্দুর এত বড় প্রাণ আমর গ্রামেতে বেটা করে হিন্দুয়ান গোটে গোটে ধরিব গিয়া সতেক ছেমরা। এড়ারুটি খাওয়াই কলিব জাতিমারা ॥

ঘোষ, বসু, মিত্র, গুহ বাকলার এই কুলীন পরিবারগুলো তৎকালীন সমাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করত। তাদের সাথে হিন্দু বৈদ্য খুব প্রভাবশালী ছিল। গৈলা ও ফুল্লশ্রী বৈদ্যদের প্রধান বাসভূমি ছিল। কবি বিজয় গুপ্ত, ত্রিলোচন দাশ প্রমুখ বৈদ্য সন্তান ছিলেন । গৈলা-ফুল্লশ্রীর বৈদ্য পরিবারগুলো সুলতানী আমলের রাঘবেন্দ্র ও ত্রিলোচন দাশের বংশধর। ১৫ শতকের প্রথম ভাগে তারা এ গ্রামে বসতি স্থাপন করে। নলচিড়া, চাঁদশী, বাটাজোড়, শিকারপুর, মাহিলারা, রামসিদ্ধি,বাউফন, কালাইয়া, ধূলিয়া, দেহেরগতি, ইদিলপুর, দেউলী প্রভৃতি গ্রামে কায়স্থদের বাস ছিল।

সুলতানী আমলে গাজীর গীত বা কাহিনী মুসলমান সমাজে জনপ্রিয় ছিল। স্থানীয় বিশ্বাস গাজী-কালু সুন্দরবন হয়ে চন্দ্রদ্বীপে আগমন করেন। আমতলী থানার পাটুয়া গ্রাম ও উজিরপুরের গাজীরপাড় গ্রামে গাজীর স্মৃতি আছে।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।