সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত

Barisalpedia থেকে

সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত দার্শনিক। তাঁর পৈত্রিক নিবাস বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামে, তবে জন্ম নদিয়া জেলার কুষ্টিয়ায় ১৮৮৭ সালে। পিতার নাম কালীপ্রসন্ন দাশগুপ্ত। মৃত্যু ১৮ ডিসেম্বর ১৯৫২।

শৈশব ও শিক্ষা

পিতা কালীপ্রসন্নের অবস্থা সচ্ছল ছিলনা। ২/৩ বছর বয়সে অক্ষরপরিচয়ের পূর্বেই রামায়ণ মুখে মুখে আবৃত্তি করার অস্বাভাবিক ক্ষমতা তাঁর মধ্যে দেখা যায়। ৫ থেকে ৭বছর বয়সে তিনি বিভিন্ন সভায় প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন দিক ও তৎকালীন সমসাময়িক বহু প্রধান ঘটনার বিষয় বলতে পারতেন। তাই অনেকে তাঁকে ‘খোকা ভগবান’ বলতেন। পিতা ডায়মন্ডহারবারে বদলি হলে ৯/১০ বছর বয়সে তিনি ‘বৃত্রসংহারে’র অনুকরণে রামায়ণের ৪টি সর্গ রচনা করেন। কৃষ্ণনগর স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাশ করেন ও গৈলায় গিয়ে টোলে ভর্তি হন। সেখানে পঞ্জি ও টীকা-সহ দুরূহ কলাপ ব্যাকরণ নিজে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদেরও পড়ান। কৃষ্ণনগরে ফিরে এফ.এ. পাশ করেন। এই সময় ‘তিলোত্তমা কাব্য’ সংস্কৃতে রচনা করেন। ১বছর বি.এ. ফেল করে পরের বছর সংস্কৃতে অনার্স ও নিস্তরিণী পদকসহ বি.এ. পাশ করেন। ১৯০৮ খৃস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজ থেকে এম.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি শিক্ষা বিভাগে প্রবেশ করেন।

কর্মজীবন

১৯১০ খৃস্টাব্দে দর্শনে এম.এ.পাশ করে রাজশাহী কলেজে ও চট্টগ্রাম কলেজে কাজ করেন। ১৯২০-২২ খৃস্টাব্দে কেম্ব্রিজে লেকচারার থাকাকালে দর্শনে ডি.ফিল হন। চট্টগ্রাম কলেজের ভাইসপ্রিন্সিপাল ছিলেন। এডুকেশন সার্ভিসে যোগ দিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজের ইংরেজি দর্শনে প্রধান অধ্যাপক ও সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল এবং ১০ বছর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক হন। ১৯৪৫ খৃস্টাব্দে অবসর নিয়ে বিদেশ যান। ১৯৫০ খৃস্টাব্দে থেকে লক্ষেèৗয়ে বসবাস করেন। রোম ইউনিভার্সিটির ডি.লিট.(১৯৩৯) ছিলেন।

গ্রন্থাবলি

তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা: ‘এ হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ান ফিলসফি’(৫ খন্ড)। এ ছাড়া বহু বিচিত্র বিষয়ে ইংরেজি ও বাংলায় রচিত গ্রন্থ সংখ্যা ২২। তার মধ্যে ৫টি মৌলিক কাব্যগ্রন্থ ও ১টি উপন্যাস। চিত্রকলা, অলংকারশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়েও প্রবন্ধাদি রচনা করেছেন। ১৯৩৬ খৃস্টাব্দে লন্ডনে আন্তর্জাতিক ধর্ম-সম্মেলনে তিনি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৩৮ খৃস্টাব্দে দার্শনিক ক্রোচের আমন্ত্রণে ইটালিতে গিয়েছিলেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনা: ‘এ স্টাডি অফ পতঞ্জলি’, ‘যোগ ফিলসফি ইন রিলেশন টু আদার সিস্টেমস অফ ইন্ডিয়ান থট’, ‘এ হিস্ট্রি অফ স্যান্সক্রিট লিটারেচার’, ‘রবীন্দ্রনাথ দি পোয়েট অ্যান্ড ফিলসফার’, ‘কাব্যবিচার’, ‘সৌন্দর্যতত্ত্ব’, ‘রবি দীপিকা’ প্রভৃতি। মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর কাছে প্রাপ্ত সাহায্যের কথা স্মরণ করে তিনি তাঁর নিজস্ব সুবৃহৎ লাইব্রেরিটি মণীন্দ্রচন্দ্রের নামে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে গেছেন।

পারিবারিক জীবন

ভারতের প্রথম মহিলা ডক্টরেট তাঁর ছাত্রী সুরমা মিত্র তাঁর বাড়িতে যেতেন এবং তাঁকে গবেষণার কাজে সাহায্য করতেন। কিন্তু পারিবারিক অশান্তির জেরে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন। এই সময় তাঁর সেবাশুশ্রƒষা ছাত্রী সুরমা করতেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৫ খৃস্টাব্দে তাঁরা বিবাহ করেন। স্ত্রী সুরমা গবেষণার জন্য লন্ডনে যাচ্ছিলেন। তিনিও ওই বছর অবসরগ্রহণ করে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে যান। ১৯৫০ খৃস্টাব্দে দেশে ফিরে স্ত্রী সুরমা লক্ষেèৗ বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের অধ্যাপিকা হিসাবে যোগ দেন। লক্ষেèৗতেই তাঁরা বসবাস করতে থাকেন এখানেই তাঁর মৃত্যু।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান