সুধাংশু দাশগুপ্ত

Barisalpedia থেকে

স্বাধীনতা সংগ্রামী, সি.পি.আই. (এম.) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য ও ‘দেশহৈতেষী’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক সুধাংশু দাশগুপ্তের (৩০.১.১৯১২-১০.৫.২০০৩) মূল নিবাস বরিশাল। পিতা লব্ধপ্রতিষ্ঠ কবিরাজ মতিলাল।

সুধাংশু ছাত্রজীবনে সা¤্রাজ্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। স্কুলে পড়ার সময় সেখানে শিক্ষক সতীশ পাকড়াশি ও বিমলেন্দু সেনগুপ্তের সংস্পর্শে আসেন। তরুণদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করার জন্য বরিশালে ‘তরুণ সংঘ’ পাঠাগার-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক ও ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বি.এম. কলেজ থেকে আই.এসসি পাশ করে ডাক্তারি পড়ার জন্য কলকাতায় এসে কারমাইকেল (বর্তমান আর.জি. কর) কলেজে ভরতি হন। ম্যাট্রিক পাশ করার পর বিপ্লবী পান্নালাল দাশগুপ্তের মাধ্যমে বিপ্লবী নিরঞ্জন সেনগুপ্তের সঙ্গে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় মেছুয়াবাজার বোমা মামলায় আরও ২৩ জনের সঙ্গে অভিযুক্ত হয়ে কারারুদ্ধ হন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে অন্যান্যদের মতো তাঁকেও ডান্ডাবেরি পরিয়ে জাহাজে আন্দামান জেলে পাঠানো হয়। সেখানে কমিউনিস্ট কনসোলিডেশন ক্যাম্পের তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে আন্দামান থেকে এনে তাঁকে বিভিন্ন জেল ঘুরিয়ে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি দেওয়া হয়। ছাড়া পেয়ে তিনি বরিশালে গিয়ে বি.এম. কলেজে ভরতি হন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে বি.এ. এবং ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে এম.এ. পাশ করেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পান এবং ক্রমে শ্রমিকদের মধ্যে কাজ শুরু করেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে আব্দুল হালিমের সম্পাদনায় কমিউনিস্ট পার্টির সাপ্তাহিক মুখপত্র ‘আগে চলো’ প্রকাশিত হলে তিনি তার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ‘জনযুদ্ধ’ ও ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকার মাধ্যমে তিনি কমিউনিস্ট সাংবাদিকতায় নিজেকে শিক্ষিত করে তোলেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে সেই সময়ে কিছুদিন অন্তর অন্তরই বিভিন্ন নামে একটি করে গোপন পত্রিকা প্রকাশ করা হত। সবগুলির সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। ১৯৫২-৫৩ খ্রিস্টাব্দে পার্টির নির্দেশে নয়াদিল্লিতে গিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সাপ্তাহিক ইংরেজি মুখপত্র ‘ক্রসরোড’ পত্রিকা কিছুদিন পরিচালনা করেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফিরে এসে আবার ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘দেশহৈতেষী’ পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়। তখন থেকেই তিনি তার সঙ্গে যুক্ত হন। পরে ওই পত্রিকা পরিচালনা করেন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। সে সময় সংবাদ সম্পাদনার কাজও করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘মার্কসবাদী: কী ও কেন?’, ‘কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো প্রসঙ্গে’, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবীদের ভূমিকা’, ‘কমরেড, সময় কোথা?’ প্রভৃতি। কমিউনিস্ট নেত্রী মাধুরী দেবী তাঁর স্ত্রী।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান