সুইসাইডাল স্কোয়াড ১৯৭১, বরিশাল শহর

Barisalpedia থেকে

বরিশাল অঞ্চলে সুইসাইডাল বাহিনীর গ্রুপ লিডার ছিলেন রেজায়ে সাত্তার ফারুক। আটঘর কুড়িখানায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ফারুক সাহসিকতা ও নৈপুণ্যের পরিচয় দেন। তিনি ছিলেন সিরাজ সিকদারের দলের কমান্ডার। পাক বাহিনীর আটঘর অপারেশনের পর সিরাজ সিকদারের পার্টি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের সাথে মতবিরোধ থাকায় সিরাজ সিকদার বরিশাল অঞ্চল ছেড়ে যান। তাঁর দলের কর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং কয়েজন অন্তর্দ্বন্দ্বে নিহত হন। ফারুক ছাত্রলীগ সমর্থক ছিলেন। পেয়ারাবাগান হতে চলে আসার পর নবম সেক্টর তাঁকে বরিশালের সুইসাইডাল স্কোয়াডের কমান্ডার নিয়োগ করে। স্কুলের অনেক ছাত্র ভারতে ট্রেনিং নিয়ে বিচ্ছু বাহিনীতে যোগ দেয়। বিচ্ছু বাহিনীর আলম ও গিয়াসউদ্দীন হাত বোমা নিক্ষেপ করে বরিশাল শহরে পাক বাহিনী, শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সুইসাইডাল স্কোয়াডে ছিলেন ফারুক, আবদুস ছাত্তার, সুলতান আলম মজনু, সিরাজুল আলম জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, মোফাজ্জেল, তোফাজ্জেল হোসেন খোকা, কুমুদরঞ্জন, বাবুল। সিদ্ধান্ত হলো তারা একই সময় বরিশাল শহরের প্রধান স্থানে বোমা নিক্ষেপ করবে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তারা পাকসেনা ও রাজাকারদের দখলকৃত শহরে হামলা চালাবে। স্কোয়াড বরিশালে আক্রমণ চালায়। ফারুক বিএম স্কুলের মাঠ থেকে রিভলবারের গুলি ছুড়ে সংকেত দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে বরিশাল শহরে বোমা বিস্ফোরিত হতে থাকে। কুমুদরঞ্জন হসপিটালের নিকট, আর বাবুলচন্দ্র সেন ও রাখালচন্দ্র সেন বিসমিল্লাহ বর্ডিং ও সোনালী সিনেমা হলে বোমা নিক্ষেপ করেন। মালেক মোসলেম রেস্টুরেন্ট, রবীন বটতলা এবং ফারুক সিএসডিতে বোমা নিক্ষেপ করেন। এরপরে প্রায় প্রতি দিন শহরে আক্রমণ করা হয়। তাদের ক্যাম্প ছিল মাধবপাশা। ভারতের বিরুদ্ধে ৩০ নভেম্বর শান্তি কমিটির নেতৃত্বে বরিশালে শোভা যাত্রা বের করা হয়। জনগণকে জোর করে শোভা যাত্রায় যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। শান্তি কমিটির শাহজাহান চৌধুরী, এডভোকেট আবদুর রব, এডভোকেট শমশের আলী প্রমুখ শোভযাত্রার নেতৃত্ব দেয়। সাথে বদর বাহিনী অস্ত্র নিয়ে যোগ দেয়। রেজায়ে সাত্তার ফারুকের নেতৃত্বে সুইসাইডাল স্কোয়াড শোভা যাত্রার উপর ঝটিকা আক্রমণ চালায়। বাজার রোডে মিছিলের উপর হাত বোমা নিক্ষেপ করেন ১৩ বছরের ছাত্র রকেট, জেলখানার নিকট আক্রমণ চালান বিচ্ছু গিয়াসউদ্দীন। হাসপাতাল রোডে আওয়ামী লীগের কাজেম মিয়ার বাসা হতে কুমুদরঞ্জন তার সহযোদ্ধাকে নিয়ে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে শোভাযাত্রার উপর গুলিবর্ষণ করেন। কয়েকজন জামাত কর্মী নিহত ও আহত হয়। শোভাযাত্রা ভেঙ্গে যায়। পাক বাহিনী ও রাজাকারেরা কাজেম মিয়া, ছাত্রনেতা আলতাফ হোসেন অরুণের বাসা ও পাড়া জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ঝাউতলা থেকে মতি সেন, ক্যাপ্টেন ইউএন গুহ ও মোজাম্মেলকে গ্রেফতার করা হয়। ঘোষণা করা হয় পরের দিন মতিসেন ও ইউএন গুহকে টাউন হলে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হবে। কিন্তু ফাঁসি দেয়া হলো না। ৩০ শে নভেম্বর শোভা যাত্রার উপর আক্রমণ পাক বাহিনীকে ভীত করে দেয়। শহরে প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ সকলকে তাক লাগিয়ে দেয়।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।