সিরাজুর রহমান, খন্দকার

Barisalpedia থেকে

খন্দকার সিরাজুর রহমান বাংলাদেশ ফায়ার ব্রিগেডের আদি ও বিকাশ পর্যায়ের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তাঁর পিতার নাম খন্দকার আবদুল ওয়াহিদ। জন্ম: ১৯০১ সাল। মৃত্যু: ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সাল। জন্মস্থান উজিরপুর, বরিশাল।

প্রাথমিক জীবন

আলহাজ্ব খন্দকার সিরাজুর রহমান কে. এস. রহমান নামেই সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ ছিল ফরিদপুর বিনোদিয়া পীর বাড়ির। পরে বরিশালের উজিরপুরে তাঁরা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর দাদা খন্দকার এজাহার উদ্দিনের মাজার উজিরপুরের ওটরা ইউনিয়নের মাসাং গ্রামে অবস্থিত। বরিশাল বি.এম. কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কলকাতায় বড় ভাই খন্দকার সাইদুর রহমানের বাসায় বেড়াতে যান। সেখানে তিনি খবর পান কলকাতা ফায়ার ব্রিগেড-এ লোক নিয়োগ করা হবে। এই খবর পেয়ে তিনি সেখানে দরখাস্ত জমা দেন। ইন্টারভিউতে ভালভাবে উত্তীর্ণ হয়ে অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান।

দেশ বিভাগোত্তর কর্মজীবন

১৯৪৭ সালে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর কলকাতা ফায়ার ব্রিগেড মুসলিম অফিসারদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। নতুন রাষ্ট্র হওয়াতে তখন অফিস বা থাকা খাওয়ার কোন ব্যবস্থা পূর্ব পাকিস্তানে ছিল না। অফিসাররা বাধ্য হয়ে আন্দোলন শুরু করেন এবং সরকার তখন তাদেরকে সরকারের অন্য দপ্তরে চাকুরির প্রস্তাব দিলে অনেকে অন্য দপ্তরে চলে যান। কিন্তু কে. এস. রহমান অনড় ছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানে ফায়ার ব্রিগেড গঠন করতে হবে। অনেক চেষ্টার পর সরকার সেই প্রস্তাব মেনে নেয় এবং বাড়ি রিকুইজেশন করে ঢাকায় ব্রিগেড হেড কোয়াটার করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকায় সদরঘাটে এবং সব জেলায় ফায়ার ব্রিগেড স্টেশন করার অুনমোদন দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস গঠনের জন্য পি. জি. হোল্ডেন নামে এক বৃটিশ নাগরিককে পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। কে. এস. রহমান উক্ত বৃটিশ অফিসারের সাথে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফায়ার সার্ভিস গঠন করেন। কে. এস. রহমানকে চট্টগ্রাম রিজিওনাল ফায়ার সার্ভিসে অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ট্রেনিং-এর জন্য লন্ডন পাঠানো হয়। কে. এস. রহমান ১৯৫১ সালে ভোলার বাটমারা গ্রামের সৈয়দ বজলুর রহমানের কনিষ্ঠা কন্যা সৈয়দা জোবেদা রহমানকে বিয়ে করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের ফায়ার ব্রিগেড গঠনে ভূমিকা

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হওয়ার পর কে. এম. রহমানকে ফায়ার সার্ভিসকে গঠন করার পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই থেকে তিনি দীর্ঘ বার বছর ডাইরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। তাঁর সৎ এবং ভাল কাজের জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আরও তিন বছর চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে দেন। তিনি ডাইরেক্টর থাকাকালীন সদরঘাট ফায়ার সার্ভিস হেড কোয়ার্টারস স্থানান্তর করে সিদ্দিক বাজারে অডিটোরিয়ামসহ নতুন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করেন। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনগুলি রিকুইজিশন বাড়ি থেকে স্থানান্তর করে অফিসার কোয়ার্টারসসহ ফায়ার স্টেশন স্থাপন করেন। ফায়ার সার্ভিসে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থাও তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন। এই এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস থেকে গরীব-দুঃস্থদের কাছ থেকে কোন খরচ নেওয়া হতো না। ঢাকায় নদীর ওপারে আগুন নেভানোর জন্য ২৪ ঘন্টা নদীতে পাম্পসহ লঞ্চ থাকার ব্যবস্থা কে. এস. রহমানই করেছিলেন। আজকের ফায়ার ব্রিগেডে কে. এস. রহমানের অবদান অবিস্মরণীয়।

মৃত্যু

১৯৮৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।



তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।