সাবিহ খা

Barisalpedia থেকে

বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাসে সাবিহ খা একটি অবিস্মরণীয় নাম। তার নামটি সম্ভবত সাবিহ খা থেকে ছবি খা হয়েছে ফারসি থেকে বাংলা প্রতিবর্ণীকরনের ভুলের কারণে। তবে এই ভুলটি ব্যাপকভাবে হওয়ায় এখন তিনি ছবি খা নামেই পরিচিত।

পরিচয় ও সময়কাল

ছবি খার সময়কাল নিয়ে মতভেদ আছে। তবে সম্ভবত সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় নবাবের কর্মচারী হিসেবে তিনি চন্দ্রদ্বীপে আসেন। সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকে ঢাকার নবাব তাকে বাকলার ফৌজদার পদে নিয়োগ করেন। ছবি খা খুব ধর্মপরায়ণ ছিলেন। তিনি ঝালকাঠির উদচাড়ার দরবেশ হযরত মোশায়েখের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি নলচিড়ার দরবেশ কুতুব শাহেরও ভক্ত ছিলেন। খুব সম্ভব ছবি খা গৈলা-ফুল্লশ্রী গ্রামে বাস করতেন। স্থানীয় প্রবাদ মতে কসবায় তার শ্বশুর বাড়ি ছিল। ছবি খা সৈন্যবাহিনী নিয়ে গৈলা গ্রামে থাকতেন। এখানে গোলাবারুদ তৈরি হতো বলে এর গৈলা হয়ে থাকতে পারে। গৈলা দাসের বাড়িতে ইটের দেয়ালের যে ভিত পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে অনুমিত হয় এটিই ছবি খার বাড়ি ছিল।

জনহিতকর কার্যাবলী

ছবি খা জনসাধারণের স্বার্থে চন্দ্রদ্বীপে প্রচুর পূর্ত কাজ করিয়েছেন। গৌরনদী, উজিরপুর, কোতোয়ালি, মুলাদী ও কোটালিপাড়ায় তার অনেক কীর্তি বর্তমান রয়েছে। তার নির্মিত পূর্ত কাজের মধ্যে রাস্তা, দীঘি, পুল ও মসজিদ প্রধান। ছবি খার রাস্তাগুলো এ অঞ্চলে জাঙ্গাল বলে পরিচিত। তিনি টরকি বন্দর থেকে কসবা, গৈলা, ধামুরা, ওটরা হয়ে রাজধানী মাধবপাশা পর্যন্ত একটি বড় নাস্তা নির্মাণ করেন। বাকেরগঞ্জ থেকে ঝালকাঠি, ঝালকাঠি থেকে রহমতপুর, এবং শিকারপুর ও গৈলা হয়ে কোটালিপাড়া পর্যন্ত তিনি রাস্তা তৈরি করেন। গৈলা গ্রামে ছবি খার তিনটি রাস্তা বা জাঙ্গাল ছিল। একটি রামদাসের হাটখোলা থেকে দক্ষিণে ধামুরা ও ওটরা, একটি পশ্চিমে কোটালিপাড়ার মদ্য দিয়ে মুর্শিদাবাদের দিকে এবং অন্যটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বর্তমান গৈলা-গৌরনদীর রাস্তা। কথিত আছে ছবি খা রাস্তার দুপাশে সোনার মোহরের কলসি পুতে রাখতেন আর বলতেন যার ভাগ্যে আছে সে পাবে। রাস্তাগুলোর মধ্যে গৈলা-মশাং রাস্তা এখনো বর্তমান রয়েছে। এই রাস্তা টেরকা, কসবা, গৈলা, ধামুরা ও চাখার হয়ে মশাং পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আজ থেকে ১০০ বছর পূর্বেও এ রাস্তার প্রস্থ ছিল ৫০ ফুট। বর্তমানে এর প্রস্থ ২০ ফুটের বেশি নয়। রাস্তার দুপাশে জনগণ ও সৈন্যবাহিনীর জন্য তিনি দীঘি খনন করতেন। একটি দীঘির পারে জনবসতি গড়ে উঠেছে এবং তার নাম হয়েছে ছবি খার পাড়। এটি এখন একটি গ্রামের নাম। বরিশাল থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত একটি রাস্তাও তিনি তৈরি করেছিলেন। বর্তমান ঢাকা-বরিশাল সড়ক সেই রাস্তার ওপর নির্মিত। ছবি খা শরিকলের কিল্লা হতে নলচিড়া পর্যন্ত একটি রাস্তা তৈরি করেছিলেন। ছবি খা গৈলা, কসবা ও কোটালিপাড়ায় অনেক মসজিদ নির্মাণ করেছেন। ছবি খার নির্মিত রাস্তায় ইট ও লোহার পুলও ছিল। গৌরনদী থানার নিকটে এমন একটি পুল ছিল। শ’খানেক বছর আগে পুলটি ধ্বংস হয়। ঘন্টেশ^র গ্রামে ছবি খার নির্মিত একটি পুলের ধ্বংসাবশেষ এখনো আছে।

নবাবের সাথে ভুল বোঝাবুঝি

কথিত আছে সম্রাট তাকে জনহিতকর কাজে অনেক অর্থ ব্যয়ের অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্ত তার জনহিতকর কাজে যখন নাম সম্রাটের না হয়ে ছবি খার হতে লাগলো তখন স¤্রাট ক্ষেপে গেলেন। সম্রাট তাকে বন্দী করার হুকুম দিলেন। গৈলার মিশ্র বংশের আদি পুরুষ রাম মিশ্র ছবি খাকে ঘুমন্ত অবস্থায় নবাবের সৈন্যের কাছে ধরিয়ে দেন। পরবর্তীতে নবাব ভুল বুঝতে পেরে ছবি খাকে মুক্ত করেন।

মৃত্যু

ছবি খা শেষ জীবনে ধর্ম সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। বাটাজোড়ের বাঙ্কুরা গ্রামে তার হুজরা খানায় শেষ জীবন কাটান এবং এখানেই মৃত্যু বরণ করেন।


তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খণ্ড)