সতীন সেন

Barisalpedia থেকে

বিখ্যাত বিপ্লবী ও আইন সভার সদস্য। সতীন্দ্রনাথ সেন ফরিদপুর জেলার কোটালী পাড়ার বাগান উত্তর পাড়া গ্রামে ১৮৯৪ সনের ১৫ই এপ্রিল জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি সতীন সেন নামে সুপরিচিত। তার পিতা নবীন চন্দ্র সেন পটুয়াখালী মহকুমা শহরের খ্যাতনামা মোক্তার ছিলেন। তার বাল্যবন্ধু সুধীর দাস গুপ্তকে দিয়ে পটুয়াখালীতে তিনি ছাত্রসংঘ গঠন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯১১ সনে তিনি পটুয়খালী জুবিলী স্কুল হতে মেট্রিক পাশ করেন এবং ঐ বছর তিনি বরিশাল শংকর মঠে দীক্ষা নেন এবং গুপ্ত সমিতির সদস্য হন। তার নেতৃত্বে পটুয়াখালীতে বিপ্লবী দল গঠিত হয়। তিনি প্রথমে হাজারীবাগ সেন্ট কলমবাস কলেজ ও পরে কলকাতা রিপন কলেজে ভর্তি হন। ১৯১৫ সনে তিনি বরিশাল দলের সাথে শিবপুর ডাকাতিতে অংশ নেন। তিনি গ্রেফতার হলেন। ১৯১৯ সনে তিনি মুক্তি লাভ করেন। ১৯২১ সনে তার নেতৃত্বে পটুয়াখালী মহকুমায় অসহযোগ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ১৯২৩ সনে মুক্তি লাভ করেন এবং ১৯২৪ সনে বরিশাল জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক নিযুক্ত হন। তার নেতৃত্বে পটুয়াখালীতে দীর্ঘদিন সত্যাগ্রহ আন্দোলন চলে। পটুয়াখালীতে সত্যাগ্রহ আন্দোলন ছিল মসজিদের সামনে দিয়ে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে প্রতিমাসহ শোভাযাত্রা করে যাওয়ার অধিকার আদায়ের আন্দোলন।

১৯২৫-২৬ খৃস্টাব্দের বেঙ্গল এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিপোর্টে বঙ্গীয় সরকারের ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুয়ারির প্রেস বিজ্ঞপ্তির বরাতে জানা যায় যে, ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মে হিন্দুরা চিরাচরিত প্রথা অবজ্ঞা করে শোভাযাত্রা করে পটুয়াখালীর জেলা বোর্ডের মসজিদের রাস্তায় সমবেত হয়। অথচ এ সময় কোন পূজা ছিল না। ঐ বছর কোরবানিতে প্রকাশ্যে গরু জবাই হওয়ায় সতীন সেন মসজিদের সামনে বাজনা বাজিয়ে পূজা করবেন মর্মে সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ আগষ্ট শোভাযাত্রা বের হলো। পুলিশ কয়েকজনকে বন্দী করে। তারপর প্রত্যেক দিন শোভাযাত্রা হতো এবং তাদের গ্রেফতার করা হতো। মামলায় একমাত্র জরিমানা করা হতো। ১৯ নভেম্বর (১৯২৬) জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হিন্দু মহাসভার দু’জন, মাওলানা ২ জন ও একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে মীমাংসার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু ঐদিন শোভাযাত্রা বের করার জন্য সতীন সেন বন্দী হন।’

১৯২৭ খৃস্টাব্দের মার্চ মাসে লাখুটিয়ায় দোল পূজা উপলক্ষে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধার উপক্রম হয়। সেখানকার হিন্দুদের আহ্বানে সতীন সেন লাখুটিয়ায় যেতে চাইলেন। এই সংবাদ পেয়ে মি. ব্লান্ডি ও এসপি তাঁকে চায়ের আসরে গ্রেপ্তার করে।১৯২৭ সালে কুলকাঠি মসজিদের সামনে দিয়ে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে পোনাবালিয়ার শিব মন্দিরে গমনরত যে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বাদ্যাবাজনায় বাঁধা দেয়ার কারণে পুলিশ ১৯ জন মুসলমানকে গুলি করে হত্যা করেছিল সতীন সেন তাঁর তরুণ সংঘের একদল সদস্য নিয়ে সেই তীর্থযাত্রীদলের অগ্রভাগে ছিলেন। ১৯২৭ সনে পুনরায় তিনি কারারুদ্ধ হন। তিনি লবণ আন্দোলন ও ভারত ছাড় আন্দোলনে বন্দী হন। তিনি ১৯৪৬ সনে নির্বাচনে যোগেন্দ্র নাথ মন্ডলকে পরাজিত করে এম এল এ নির্বাচিত হন। দেশ বিভাগের পর তিনি বরিশালে থেকে যান। তিনি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ১৯৫০ সনে পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ১৯৫৪ সনে ৯২ক ধারার সময় পুনরায় তাকে বন্দী করা হয়। ১৯৫৫ সনের ১৮ই মার্চ বন্দী অবস্থায় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।



তথ্যসূত্র: ১। রফিকুল ইসলাম। বরিশাল দর্পণ। ঢাকা, ১৯৯০। ২। সিরাজউদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস। ভাস্কর প্রকাশনী: ঢাকা। ২০১০।