ষাইটপাইকার যুদ্ধ

Barisalpedia থেকে

নলছিটি থানার ষাইটপাইকায় ও চাচৈর গ্রামে ১৯৭১ সালের ১৩ ও ১৪ নভেম্বর এক যুদ্ধ হয়েছিল। এ যুদ্ধকে ষাইটপাইকার যুদ্ধও বলে আবার চাচৈরর যুদ্ধও বলে। এটি ছিল দক্ষিণ বাংলার অন্যতম দুর্ধর্ষ যুদ্ধ।

মানপাশার চাচৈর স্কুলে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। বরিশাল সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর তার বাহিনী নিয়ে স্বরূপকাঠি ক্যাম্প থেকে ১২ নভেম্বর ঝালকাঠি এসে পৌঁছেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর ফজরের নামাজের সময় পাকবাহিনী ষাটপাকিয়া পৌঁছে। এ খবর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পৌঁছলে তারা প্রস্তুত হতে থাকেন। পাকসেনারা চাচৈর খন্দকারবারিতে আগুন দেয়। ক্যাপ্টেন ওমর আগুন নেভাতে ব্যস্ত। এমনি সময় মহিউদ্দিন মানিক পাকবাহিনী দেখতে পান। মানিকের হঠাৎ বুদ্ধিতে কমান্ডার শাহজাহান ওমর বেঁচে যান। পাকবাহিনী ক্যাপ্টেন আজমতের নেতৃত্বে চাচৈর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে আগ্রসর হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সিদ্ধান্ত ছিল চাচৈর স্কুলে পৌঁছামাত্র তারা গুলি চালাবে। ১৩ নভেম্বর সকাল ৯ টা ৫ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধ চুন্নু তার দল নিয়ে পাকবাহিনী দেখামাত্র আক্রমণ করে। ক্যাপ্টেন ওমর তার বাহিনীকে দু’ভাগ করে আক্রমণ করার নির্দেশ দেন। পাকবাহিনী চুন্নুর দলকে একমাত্র বাহিনী মনে করে তাদের ধাওয়া করে শরীফবাড়ি আগুন দেয়। পাকবাহিনী রাস্তায় উঠে আসার সাথে সাথে মুক্তিবাহিনী চারদিক থেকে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। পাকসেনাদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা আউয়াল নিহত হন। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে পাকবাহিনীর বেলুচ কমান্ডার ও কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়। তাদেরকে ঝালকাঠির থানা পরিষদের গেটের কাছে এবং বেলুচ কমান্ডারকে টাউন পুলিশ ফাঁড়ির সামনে কবর দেয়া হয়। এ যুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ১৪ নভেম্বর বরিশাল থেকে পাকবাহিনীর কয়েকটি দল চাচৈর গ্রাম আক্রমণ করে। বরিশাল-পটুয়াখালীর মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল চাচৈর চলে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন নলছিটি থানা কমান্ডার সেকান্দার আলী, শাহজাহান মাস্টার, সুবেদার আবদুল হক, সুবেদার মজিবুল হক, কাউখালীর আবদুল হাই পনা, বাকেরগঞ্জের নাসির উদ্দিন, জাফর, রফিকুল হাসান বাদশা, মহিউদ্দিন মানিক, হাবিব রহমান, হালিম, কাশেম আলী, সুলতান কাজী প্রমুখ। গুটিয়ার রসিদ মোল্লাসহ কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধা চাচৈর পৌঁছে। ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে অনেক পাকসেনা, রাজাকার নিহত হয়। পাকবাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পালাতে থাকে। কয়েকজন একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়। ষাইটপাইকার তথা চাচৈর যুদ্ধে পরাজিত হয়োর পর পাকবাহিনী বরিশাল শহর থেকে আর বের হয়নি। চাচৈর যুদ্ধ ছিল পাকবাহিনীর শেষ সম্মুখ যুদ্ধ।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।