শৈলেন পাল

Barisalpedia থেকে

ভারতের বিশিষ্ট ট্রেড ইউনিয়ন নেতা শৈলেন পালের (১০.৫.১৯২২-৩.৫.২০০০) মূল নিবাস ঝালকাঠির কীর্তিপাশা ইউনিয়নের গোবিন্দধবল গ্রাম। পিতা উপেন্দ্রনাথ; মাতা কুসুমকুমারী।

স্কুলের ছাত্রাবস্থাতে শৈলেন বিপ্লবী যুগান্তর দলের নলিনী সেনের সংস্পর্শে মুক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত হন। বরিশালের বি.এম. কলেজ থেকে আই.এসসি. পাশ করে দেশের কাজে পড়া ছেড়ে সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে যুগান্তর দলে যোগ দেন। পরিচয় ঘটে বিপ্লবী জীবনলাল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এবং তাঁরই প্রেরণায় শ্রমজীবী মানুষের মুক্তিসংগ্রামে কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। কলকাতায় এসময় তিনি কিছুদিন ছাত্র ফেডারেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ধরিত্রী গাঙ্গুলির সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেন। ক্রমশ তিনি শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। শ্রমিকদের আইনি লড়াইয়ে সহায়তার স্বার্থে তিনি বি.এ. ও ল. পাশ করেন। জীবনলাল চট্টোপাধ্যায় ও এম.এন. রায়ের র‌্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে তিনি ছিলেন। এম.এন. রায়ের সঙ্গে মতবিরোধের ফলে জীবনলাল ডেমোক্র্যাটিক ভ্যানগার্ড গঠন করলে তিনি তাতে যোগ দেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটিক ভ্যানগার্ড কোনো পার্টি ছিল না- তা ভবিষ্যতে একটি বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার ‘কোর’ হিসেবে কাজ করতে থাকে। এই সংগঠনের উদ্যোগে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে যে ওয়ার্কার্স পার্টি অফ ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয় তার অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। ২০/২২ বছর বয়সে তিনি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের শুরুতে রেলওয়ের মজদুর ইউনিয়নে যোগ দেন। পরে সুধীর মুখার্জী ও নূরউদ্দীনের সঙ্গী হিসেবে বাটা মজদুর ইউনিয়ন গঠন করেন। একটি প্রতিষ্ঠানে একটি মাত্র ইউনিয়ন থাকবে- ওয়ার্কার্স পার্টির এই নীতির সার্থক উদাহরণ সেই সময়েই তিনি বাটা শ্রমিকদের সামনে সোচ্চার করে তোলেন। সারা ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের উপ-সভাপতিপদে থাকাকালে শ্রমিক আন্দোলনে প্রতিনিধি হিসেবে তিনি পূর্ব ইউরোপ, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে গিয়েছেন। বিশ্বশান্তি আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি জীবনলালের ‘মাও সে তুং- এর প্রতি খোলা চিঠি’ নিয়ে চীনে যান এবং মাও সে তুং- এর হাতে তা তুলে দেন। এই চিঠিতে জীবনলাল জানিয়েছিলেন ‘চীনের পথ আমাদের পথ নয়, আমাদের পথ আমাদের বাস্তবতা অনুযায়ী হবে।’ জনজীবনের বিভিন্ন আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ভারত-চীন সীমান্তসংঘর্ষের সময় একটি প্রচারপত্র প্রকাশের অপরাধে ভারত রক্ষা আইনে তিনি কারারুদ্ধ হন। মৃত্যুদিন পর্যন্ত তিনি অল ইন্ডিয়া বাটা শপ এমপ্লরিজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ কলকাতা শপ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে গেছেন।



তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান।