শৈবালকুমার গুপ্ত
বিশিষ্ট সিভিলিয়ান ও স্বদেশপ্রেমী শৈবালকুমার গুপ্তের (৫.২.১৯০২- ২২.৬.১৯৮৯) আদি নিবাস ভোলা। পিতা রসিকলাল স্বদেশি যুগে সরকারি উকিলের কাজ পরিত্যাগ করেছিলেন।
শিক্ষা
শৈবাল গুপ্ত ভোলা স্কুল থেকে স্কলারশিপ পেয়ে ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতিতে অনার্স, ঈশান স্কলারশিপ পেয়ে বি.এ. পাশ করেন। পরের বছর দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আই.সি.এস. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর সরকারি অর্থে দু-বছরের জন্য অক্সফোর্ড যান।
কর্মজীবন ও আদর্শ
দেশে ফিরে অবিভক্ত বঙ্গের সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। কলেজে পড়াকালে হরিপদ চট্টোপাধ্যায়, ডা. সুরেশ ব্যানার্জি, ডা. নৃপেন বসু প্রমুখ বিশিষ্ট নেতাদের সান্নিধ্যে গান্ধীবাদে দীক্ষিত হন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে লবণ সত্যাগ্রহের সময় কাঁথির এস.ডি.ও থাকাকালে সত্যাগ্রহীদের গ্রেপ্তার করে জেলে না পাঠানোর কারণে ইংরেজ সরকার তাঁকে প্রশাসনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিচার বিভাগে দেয়। জেলা-জজ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট জেলার মানুষের প্রতিটি সৎ উদ্যোগে তিনি সহযোগিতা করতেন। ইংরেজ আমলে জেলাশাসক ও জেলা-জজ হিসেবে তিনি বিশেষ জনপ্রিয় ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষাসচিব এবং স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিভাগের সচিব ছিলেন (১৯৪৭-৫০)।
সমাজসেবামূলক কাজ
তিনি কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান (১৯৫০-৬০), দন্ডকারণ্য ডেভলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান (১৯৬৩-৬৪)। এ ছাড়া বিশ্বভারতীর সংসদের সদস্য, ‘ফেডারেশন হল সোসাইটি’র সভাপতি এবং রাইটার্স বিল্ডিংস লাইব্রেরি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। জরুরি অবস্থার সময়ে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে জয়প্রকাশ নারায়ণ স্বৈরতন্ত্রবিরোধী সংস্থা ‘সিটিজেন্স ফর ডেমোক্রেসি’ গঠন করলে তিনি সেই সংস্থার পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক হন। জরুরি অবস্থায় সংবিধানের ৪২তম সংশোধনের বিরুদ্ধে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত-সভা ভবনে যে সভা হয়, তিনি তাতে সভাপতিত্ব করেন। রাজনীতিকে শিক্ষা থেকে দূরে রাখার জন্য জনমত সৃষ্টির ব্যাপারে গঠিত ‘শিক্ষা সংস্কার কমিটি’র তিনি সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জানাতে ডা. রমেশচন্দ্র মজুমদারকে সভাপতি করে যে কমিটি হয়, তিনি ছিলেন তার সম্পাদক। রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম তৈরি, মধ্যবিত্তদের জন্য আবাসগৃহ ও চাকুরিরত মহিলাদের হোস্টেল নির্মানের ব্যাপারে তাঁর অবদান স্মরণীয়। তাঁর রচনা ‘কিছু কথা কিছু স্মৃতি’ তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয। বিশিষ্ট সমাজসেবিকা অশোকা গুপ্ত তাঁর স্ত্রী।
তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান